উত্তরখানে বাটপার দুই নারী রেখা লীলা

গুগোল সার্চ করে তিন বোন চরিত্রের দেশি বিদেশি বেশ কিছু নাটকের সন্ধান পাওয়া যায়। তেমনি নাটকীয় ভাবে প্রতারক হিসেবে রাজধানীর উত্তরায় দুই  বোনের সন্ধান পাওয়া গেছে। লীলা রেখা গং উত্তরখানের এই প্রতারক  দুই মহিলাকে মানুষ " টু সিস্টার লেডিস ডেভিল" (মহিলা শয়তান)" হিসেবে চেনে। এই মহিলা দুইজনকে বাটপার; চিটার; ধোঁকাবাজ; জোচ্চোর এমন প্রকার সকল উপাধি উত্তরখানের সব মানুষ তাদেরকে দিয়েছে। এই মহিলাদের সাথে যোগ দিয়েছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে আসা পতিত আওয়ামী সরকারের এক সুবিধাভোগী বাটপার সাহেব আলী মল্লিক ওরফে ডেভিল মল্লিক। 

সরজমিন খোঁজ নিয়ে সকালে সময় প্রমাণ পেয়েছে এই মহিলা ২ জন আপন বোন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (ডেভিল) শয়তান রেখা ও লীলা। অন্য এক বোন শিলা থাকে নরসিংদী জেলা শহরে। লীলা শিলা রেখা পারিবারিক ভাবেও বেশ নাটকীয় চরিত্রে অভিনয় করে। আপন ভাইদের সাথে মামলায় জড়িয়ে পৈতৃক জমিজমা একাধিক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করার কথা বলে বায়না টাকা গ্রহণ করে পালিয়ে যায়। তাদের নামে ঢাকার বহু থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি থাকার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ তাদেরকে খুঁজে পেলেও বিচারের মুখোমুখি করেনি। রাজধানীর ভাটারা থানার একটি সাধারণ ডায়েরি পাওয়া গেছে এই প্রতারক মহিলাদের নামে। জিডি নং ২১৮৪ গতবছরের ২৬ সেপ্টেম্বরে একজন এসআই ব্যাবস্থা নেয়ার দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সেই সাধারণ ডায়েরি ব্যাবস্থা নিতে দ্বায়িত্বরত পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে   থানার এসআই শরিফুল ইসলাম সকালের সময়কে বলেন আমি বর্তমানে বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় দ্বায়িত্বরত আছি। ওই ডায়েরিতে যে মহিলাদের নামে অভিযোগ করা হয়েছিলো তারা মহা প্রতারক। খোঁজ নিয়ে দেখলাম তারা একটা জমি বহু লোকের কাছে বিক্রি করছে। আমি মোবাইলে কথা বলে থানায় আসতে বলেছিলাম, বার বার কথা দিয়েও থানায় আসেনি। আমি তাদের সাথে দেখা করতে চেষ্টা করেছিলাম তারা ঢাকার বাইরে আছে, ঢাকায় এসে দেখা করবে এমন কথা বলে বলে ৩ মাস পার করছে। দেখা করেনি। মহিলারা বেশিরভাগ সময় মিথ্যা বলতো। তাদের একজন থাকে ভাটারা থানার কাছাকাছি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। কোনভাবেই তাদেরসাথে দেখা করতে পারিনি। একবার ওসি স্যার বলেছিলেন মহিলাদের থানায় হাজির করতে, সেই অনুযায়ী আমরা দুজন পুলিশ গিয়েছিলাম কিন্তু মহিলাকে বাসায় গিয়ে পাইনি। এই জিডির আগেও অন্য লোক এই ৩ মহিলার নামে ডিজি করতে ভাটারা থানায় এসেছিলো এমন তথ্য জানিয়েছেন এসআই শরিফুল ইসলাম।

ইব্রাহীম নামের একজন ভুক্তভোগীর গতবছরের ২৬ নভেম্বর উত্তরখান থানার ১১ নাম্বার মামলার সুত্রে দেখা যায় বাশতলা বাুলর মাঠ মোধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে রাইয়ান বিল্ডিং টেকনোলজি লিমিটেডের কাছে কিছু জমি বিক্রির জন্য বায়না রেজিষ্ট্রেশন করছে আবার সেই প্লটের আংশিক জমি সাবকবলা দিয়েছে রাইয়ান বিল্ডিং টেকনোলজি লিমিটেডের কাছে। কিছু দিন পরে খোঁজ পাওয়া যায় ওই জমি নিয়ে লীলা ও রেখা  আপন ভাইদের সাথে আদালতে মামলা চলমান আছে। দুবছর পরে দুই বোন রেখা ও লীলা একত্রিত হয়ে রাইয়ান বিল্ডিং টেকনোলজির মালিকের সাথে বৈরী সম্পর্কে জড়িয়ে কোম্পানির সাইনবোর্ড রাতের আধারে সরিয়ে একই জমি বেদখল দেখিয়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের সাহেব আলী মল্লিক নামের এক বাটপারকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়। নামসর্বস্ব অকার্যকর এক ভুয়া কিল্ডার্স কোম্পানি মল্লিক কিল্ডার্সের মালিক সাহেব আলী মল্লিক ওরফে সেজাদ মল্লিক। সেজাদ মল্লিক বা সাহেব আলী মল্লিকের একাধিক নাম রয়েছে। রহস্যময় এই বাটপারি মল্লিক একটি ভুয়া অনলাইন সংবাদ পোর্টালের মালিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ওই জমি দখলের চেষ্টা করছে। এমনকি সংশ্লিষ্ট জমির শেয়ার বিক্রি শুরু করে দিয়েছে এই বাটপার মল্লিক। মাথায় টুপি সাদা পাঞ্জাবি পরে সেই জমিতে একটি মসজিদ নির্মাণের কথা বলে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে, যা সম্পূর্ন অবৈধ। এসব কাজ করেও বাটপার মল্লিক ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে।  তাদের কাছে স্থানীয় লোকেরা বলছে বর্তমান পুলিশ টাকা নেয় তবে চুপটি মেরে থাকে। জনগণের রোষানলে পরার ভয়ে পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেতে পিছিয়ে যায়। তবে উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সকালের সময়ের প্রতিবেককে জানিয়েছেন ২৬ নভেম্বর সকালে ওই জমিতে একটি মারামারির ঘটনা শুনছি। আহত ব্যাক্তিকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরেরদিন আমাদের থানায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযোগকারী বলছে লীলা শিলা রেখা তিন মহিলা জড়িত। আমরা মহিলাদের খুঁজে বের করে কথা বলবো। বিষয়টি তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। পুলিশ কাজ করছে। তবে জমিজমা সংশ্লিষ্ট কেচে পুলিশ অগ্রসর হতে বিধিনিষেধ রয়েছে। আমরা আদালতে রিপোর্ট দেব।

লীলা মায়ের লীলা খেলা পুরপুরি রপ্ত করে তার ছেলে দুটো তৈরি হয়েছে বড় বাটপার রূপে ইমতিয়াজ খন্দকার টিটু ও তৌহিদ খন্দকার রিমন লীলা হকের দুই ছেলে একাধিকবার তাদের সাথে কথা বলতে চেষ্টা করেও কোন মন্তব্য নেয়া যায়নি। মায়ের সব নাটকের অভিনয় থেকে কিছু কিছু শিখে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করছে ছেলে দুটি। প্রতারণার সব ধাপ ছাড়িয়ে গেছে তাদের মা এবং  খালা রেখা । লীলা হক এর ছেলে ইমতিয়াজ খন্দকার টিটু ও আরেক ছেলে রিমনকে নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকে ভাড়া থাকে। কুরিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তা লীলা হকের বাসায় একাধিকবার সাক্ষাৎ চেষ্টা করে ভুক্তভোগীরা। বাসার দারোয়ান বলছে মহিলা ঠিক মতো সময়ে ভাড়া দেয় না, ছেলে দুটো বখাটে। শুনেছি বাইরের বহু লোকদের সাথে প্রতারণা করছে। বাসা ছাড়ার জন্য লীলা হককে বহুবার নোটিশ করা হলেও লীলা বাসার মালামাল নিয়ে যায়নি। দারোয়ান বলছে, আগামী মাসে আমরা লীলা হককে বাসায় প্রবেশ করতে দেবনা, তার মালামাল লোক দিয়ে অপসারণ করে গোডাউনে জব্দ করবো। এর আগেই আমরা থানায় জিডি করে রাখবো। দারোয়ান তাদের তিন বোনকেই চেনে। দারোয়ান বলছে তাদের নামের মাঝেই শয়তানি চিহ্ন আছে কি বড় বড় নাম, মোছাম্মৎ ছানোয়ারা আক্তার রেখা ওরফে মিসেস রেখা হোসেন। মোছাম্মাৎ ছানোয়ার আক্তার লীলা ওরফে খন্দকার লীলা হক।