ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

মিরপুরের ত্রাস তানজিব গ্রেফতার

মিরপুরের ত্রাস তানজিব গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য


আব্দুল লতিফ রানা photo আব্দুল লতিফ রানা
প্রকাশিত: ১২-৪-২০২৫ বিকাল ৫:১৮

রাজধানীর মিরপুর মডেল থানা এলাকার ত্রাস যুবলীগের নেতা স্ন্দুরী তরুণীদের বিয়ের নামে ফুসলিয়ে তার ফ্ল্যাটে নিয়ে জিম্মি করে বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ লোকজন নিয়ে অসামাজিক ব্যবসা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে একজন মেধাবী কলেজ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের পর হত্যা করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় মিরপুর মডেল থানার পুলিশ ঘাতক তানজিব জোবায়ের ওরফে ফাহিম (৪৬) কে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ভয়ানক ও চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার ৭৮৪/৪২ জুরাইন পুকুরপাড় রোডস্থ মিষ্টির দোকান এলাকার বাসিন্দা মৃত শামছুল হুদার মেয়ে ফারজানা নাসরিন (২৭) নামের ঢাকা সেন্টাল ওমেন্স কলেজ ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার পড়াশোনার বিষয় নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া হয়। পরে গত বছরের ২৮ মে পরিবারের সদস্যদের কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে তার পরিবারের সদস্য মনে করছেন, কারো সঙ্গে সম্পর্ক করে হয়ত বিয়ে করেছেন। তার পরও বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন এবং বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। একপর্যায়ে চলতি বছরের গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে একটি ইমু নম্বর হতে তার বড় বোনের ইমু নম্বরে ফোন করে জানান, তার বোন ফারহানা নাসরিন দুই একদিনের মধ্যেই তাদের কাছে ফিরে যাবেন। কিন্তু অজ্ঞাতনামা ওই নারী তার কাছে পরিচয় দিতে অনিহা প্রকাশ করে নম্বর কেটে দেন। 
এরপর একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ওই নারী পুনরায় ফোন করে ফারজানা নাসরিনের বড় বোনের ইমু নম্বরে অজ্ঞাতনামা আরেক নারী ফোন করে জানান যে, তার ছোট বোন মারা গেছে, তার লাশটি নেওয়ার জন্য তাগাদা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনিও তার পরিচয় না দেননি। একপর্যায়ে তার কাছে লাশটি কোথায় আছে এবং কার কাছ থেকে বুঝে নেবেন জানতে চাইলে, তিনি একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে বলা হয়, এই নম্বরে ফোন করলে তিনি জানিয়ে দেবেন কোথায় থেকে লাশটি বুঝে নেবেন। পরে উক্ত নম্বরে ফোন করার পর ঘাতক তানজিব জোবায়ের ওরফে ফাহিম পরিচয় দিয়ে তাদেরকে মিরপুর মডেল থানাধীন ৩/৪ নম্বর ৬০ ফিট রোডস্থ ভবনের ৫ম তলার একটি কক্ষে ফাহিমা নাসরিনের লাশ নেওয়ার জন্য বলা হয়। 
উক্ত সংবাদ পেয়ে নিহত ফারজানা নাসরিনের ভাই মো. নওশেদ আহম্মেদ তার মেঝ বোনসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মিরপুর মর্ডেল থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। উক্ত সংবাদের পর মিরপুর থানা পুলিশ তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে উক্ত ভবনের ৫ম তলার তানজিব জোবায়ের ওরফে ফাহিমের একটি ফ্ল্যাটের সামনে যান। এসময় সেখানে ফ্ল্যাটের মালিক ফাহিম পুলিশকে জানায়, তার ভাড়াটিয়া রুমের ভেতরে মারা গেছেন। এরপর ফ্ল্যাটের চাবি বের করে দেন এবং তার সঙ্গে থাকা নিহত তরুণীর ছবি ও এনআইডি কার্ড উদ্ধার করে পুলিশ। পরে খবর পেয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা (সিআইডি) এর ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে পুলিশ রুমের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে একটি রুমের ফো¬রে একটি তোষকের ওপর তরুনীর লাশ দেখতে পায়। এরপর নিহত তরুনীর লাশের ছবি, হাতের ছাপসহ হত্যাকান্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। এসময় ফ্ল্যাট মালিকের কথা বার্তায় পুলিশের সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে নিহতের লাশ উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই নওশেদ আহম্মেদ বাদি হয়ে মিরপুর মডেল থানায় গত ০৩/০২/২০২৫ ইং তারিখ হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ০৮। 
সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী তানজিব জোবায়ের ওরফে ফাহিম আওয়ামী যুবলীগের নেতা হওয়ায় স্বৈরাচারী সরকারের সময় থানা পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তিদের ব্যবহার করে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের নামে মিথ্যা অভিযোগে মামলাসহ নানা ভাবে হয়রানী করেছেন। তার প্রমান হচ্ছে, গত ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর আদেশনামা স্বরাক নং ১২২২ পিবিআই কর্তৃপক্ষ স্বারক নং পিবিআই/মামলা ২০২১/৯৬৪ /১(৫) সিআরও। উক্ত মামলার তদন্তে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) উক্ত মামলায় মো. রফিকুল ইসলাম, ইসরাত জাহান পুপ্তি, মো. সালেকুজ্জামান রাসেল, লিলি বাবা, সিয়াম, অনিক চন্দ্র দাস, সেলিম সিকদার, আনোয়ার হোসেন, শহিদুল আলম মামুন, এ এস এম জাকারিয়া মামুন এদের নামে হয়রানী মুলক মামলা করেন।
পিবিআই সূত্র জানায়, পুলিশের জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে গত ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর সংবাদ পেয়ে মিরপুর থানা তৎকালীন সহকারি পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি জানতে পারেন যে, সিসি ক্যামেরা লাগানো নিয়ে সন্ত্রাসী জোবায়ের ফাহিমের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু সেখানে কোন মারামারি করার কোন ঘটনা ঘটেনি। ফলে মিরপুর থানা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম, ইসরাত জাহান পুপ্তি, মো. সালেকুজ্জামান রাসেল, লিলি বাবা, সিয়াম, অনিক চন্দ্র দাস, সেলিম সিকদার, আনোয়ার হোসেন, শহিদুল আলম মামুন, এ এস এম জাকারিয়া মামুনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির অভিযোগ করেন। বিষয়টি পিবিআইয়ের তদন্তে উক্ত অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। আর আসামিদের মোবাইল কললিস্টের পর্যালোচনায় উল্লেখিত ঘটনার সময় ও তারিখ সালেকুজ্জামান রাসেল, অনিক চন্দ্র দাস, হাফিকুর রহমান বাবু, ওহিদুল আলম মামুন, এ এসএম জাকারিয়া মানুগণ উক্ত ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। তাই উক্ত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। 
তদন্ত সংস্থার সূত্রে আরো জানা গেছে, মামলার ঘটনাস্থল উক্ত ভবনের নিচতলায়র সম্মুখের উভয় অংশে দুটি দোকান রয়েছে। আর উক্ত অংশের দোকানের মালিক হচ্ছেন বাদি জোবায়ের ফাহিমের বাবা। আর দিক্ষণ অংশের দোকানের মালিক ফজলুল শিকদার। তার দোকানটি তার পুত্র বশির সিকদারকে হেবানামা দলিল মুলে দান করেছেন। আর মামলার বাদি রফিকুল ইসলাম উক্ত বশির সিকাদর এর কাছ থেকে তার অংশ ক্রয় করেছেন। যা ক্রিসেন্ট এন্টারপ্রাইজ নামীয় কোম্পানীর শো রুম হিসেবে ব্যবহার করতে দিয়েছেন। 
পিবিআই এর উপ পুলিশ পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে রাসেল গত ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদনের মতামতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, উল্লেখিত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার অপরাধ পেনাল কোড ১৪৩/১৪৭.১৪৮/-----/৪৭১/৫৯৬ ধারামনে প্রার্থমিক প্রমাণীত হয় নাই। 
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর ও কাফরুল এলাকার যুবলীগের নেতা শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের অন্যতম সহযোগি তানজিব জোবায়ের ওরফে ফাহিমের চাঁদাবাজি, হত্যা খুন, টেন্ডারবাসিসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপে এলাকাবাসি অতিষ্ট হয়ে পড়ে। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সময়ে রাজধানীর মিরপুর ও কাফরুল এলাকায় এমন কোন অপকর্ম নাই যে, তানজিব করেনি। তার অত্যাচার ও নির্যাতনের সাধারণ বাসিন্দা ছাড়াও নিজ দলের নেতা কর্মীরাও অতিষ্ঠ ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন স্পটে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষন করেছে। তার গুলিতে অনেকেই মারাত্বক আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর কিছুদিন মিরপুর ও কাফরুল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। আর সন্ত্রাসী জোবায়ের ফাহিমও এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু গত জানুয়ারিতে আবারো এলাকায় এসে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাসহ নানা হয়রানীর ভয় দেখাতে থাকে। আর তার ফ্ল্যাটে অজ্ঞাতনামা লোকজন আসা যাওয়া করতে থাকে। এছাড়া সুন্দরী নারীদের আনাগোনা করতে থাকে। শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত নাকি তার আশ্রয়ে এসে নানা দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছিল। দীর্ঘদিন ধরে ভারতে পালিয়ে থাকলেও তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত আবারো মিরপুরে আসা যাওয়া শুরু করেছে। অনেকেই ভয়ে শাহাদাতের ক্যাডারদের হাতে চাঁদার টাকাও তুলে দিতেন নীরবে। প্রিয়জন হারানোর ভয়ে থানা-পুলিশও করেন না অনেকেই। সন্ত্রাসী জোবায়ের ফাহিমের সহযোগিরা আবারো তৎপর হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ দাবি করছেন ভুক্তভোগিরা।

এমএসএম / এমএসএম

প্রধান প্রকৌশলীর পিএস মুজিবরের মাসিক অবৈধ আয় লাখ টাকা!

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সামাদ ভূঁইয়া দম্পতি বিরুদ্ধে

যাদের কথা হয়না বলা

অভাবির পেটের ভাড়া ৩০ হাজার টাকা

ফ্যাসিস্ট সরকারে প্রতাপশালী জেলার মাহবুবের লাপাত্তা

অবৈধ সম্পদের পাহাড় নিয়ে ওসমান গণির রাম রাজত্ব কায়েম

মিরপুরের ত্রাস তানজিব গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য

১৭ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা আমিনুল

বিতর্কিত প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তারের বিরুদ্ধে আবারো তদন্ত কমিটি গঠন

প্রিমিয়ার গ্রুপের ইকবাল গেছে পালিয়ে, দুর্নীতির দুর্গ আছে দাঁড়িয়ে

অর্থ শাখায় চাকরি করেই শত কোটি টাকার মালিক মাহবুবুর রহমান

ঈদ সামনে রেখে জাল নোট তৈরির কারিগর ব্যস্ত

বরগুনায় জলমহাল ইজারা নিয়ে মহা-জালিয়াতি