ওসি ছালেক’র হয়রানিমূলক ৫ মামলায় নিঃস্ব সাংবাদিক শামীম

পুলিশের ঘুস-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের নামে কৌশলে ঠুকে দেয়া হয় ৫টি মামলা। সিলেটের বালাগঞ্জ থানা পুলিশের অপরাধ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন সাংবাদিক শামীম আহমদ। এর জেরে ওই থানার তৎকালীন ওসি আব্দুছ ছালেক সাংবাদিককে মামলার হুমকিও দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে গায়েবি মামলা ও পরোয়ানার বিষয়টি জানতে পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন ভুক্তভোগি এই সাংবাদিক। হতবাক হোন স্থানীয় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দও। ৫টি মামলায় প্রায় ১ যুগ আদালতে ধর্ণা দিতে গিয়ে পৈত্রিক সহায়-সম্বল বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি। এদিকে হয়রানিমূলক মামলা থেকে মুক্তি পেতে ২০২১সালের ২৮নভেম্বর পুলিশের ‘আইজিপি’স কমপ্লেইন সেলে লিখিত আবেদন-অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি। এছাড়া, বিগত দিনে ভুক্তভুগিদের পক্ষ থেকে ওসি ছালেক’র বিরুদ্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট একাধিকবার লিখিত অভিযোগ-আবেদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বারবার শ্রেষ্টত্বের খেতাব ও পুরস্কার বাগিয়ে নিয়ে এখনও বহাল তবিয়তে আছেন এই ওসি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২-১৩সালে বালাগঞ্জ থানার ওসির দায়িত্বে ছিলেন আব্দুছ ছালেকের (বিপিনং-৭৫০০০৯৪৮৮৩)। ওই সময়ে বেশ কয়েকটি হত্যা-গুপ্ত হত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়। বিভিন্ন মামলাকে পুঁজি করে ওসি ছালেকসহ কথিপয় পুলিশ কর্মকর্তারা ঘুস বাণিজ্যে মেতে ওঠেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দোর্দন্ড প্রতাপশালী ওসি সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। ওসির সঙ্গে সখ্যতা ছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বে থাকা পদ-পদবিধারী মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি ও থানার চিহ্নিত দালালদের সাথে। ওসির বেপরোয়া ঘুস-বাণিজ্যের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষের নানা প্রতিবাদী কর্মসূচিতে উত্তাল হয়েছিল শান্তির জনপদ বালাগঞ্জ। হয়রানির শিকার লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩সালের ১০-১১জুলাই ‘বালাগঞ্জ থানায় চলছে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি: অফিসার থেকে ঝাড়ুদার ইচ্ছেমতো আদায় করছেন টাকা’ শিরোনামে সাংবাদিক শামীম আহমদ কয়েকটি পত্রিকায় কয়েক পর্বে অনুসন্ধানী ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এসব সংবাদে ওঠে আসে ওসি ছালেক’র প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের লোমহর্ষক বর্ণনা। সংবাদ প্রকাশের পর ২০১৩সালের ১২জুলাই শামীমের নামে একটি জিডি এবং ওই জিডি থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ মামলাও রেকর্ড করেন ওসি। পরে জনৈক ব্যক্তিকে বাদী বানিয়ে শামীমকে প্রধান অভিযুক্ত করে ২সেপ্টেম্বর বালাগঞ্জ থানায় একটি মামলা রেকর্ড করেন ওসি। ওই মামলায় শামীমের ৭০বছর বয়সি বৃদ্ধ পিতাসহ তার পরিবারের ৬সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলা দায়েরের পর শামীম ও তার পরিবারের সদস্যরা দির্ঘদিন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। পরবর্তী সময়ে মামলা দু’টির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
এদিকে, নতুন করে আবারও শামীমকে হয়রানিমূলক মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু, তখনো তিনি জানেন না তার বিরুদ্ধে সিলেটের বাইরেও মামলা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওসি ছালেক’র ঘনিষ্ট ব্যাচম্যাট এসআই ডেরিক স্টিফেন কূইয়া তখন বালাগঞ্জ থানায় কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সালের মধ্যবর্তি সময়ে তিনি বালাগঞ্জ থানা থেকে ডিএমপির চক বাজার থানায় বদলি হন। ছালেকের নির্দেশে এসআই ডেরিকের সহযোগিতায় চক বাজার থানায় ২০১৩সালের ২৯অক্টোবর ১টি মামলা ও ৫নভেম্বর দায়ের করা ২টি বিস্ফোরক উপাদানাবলী আইনের মামলার এজাহারে শামীমের নাম ঢুকিয়ে দেয়া হয়। শামীমের নামে মামলা দায়েরকালে চক বাজার থানার ওসি ছিলেন আজিজুল হক (বিপি নং-৬৫৮৯১২৮৭৩৪)। মামলাগুলো যৌথভাবে তদন্ত করেছেন এসআই মো. শাখাওয়াত হোসেন, এসআই অনাথ মিত্র, এসআই শেখ মো. বেলায়েত, এসআই মো. জাহাঙ্গীর আলম, এসআই শরীফ ইবনে আলম ও এসআই রণেশ ভট্রাচার্যসহ আরো কয়েকজন। মামলার এজহারে ঘটনার উল্লেখিত সময়ে সাংবাদিক শামীম নিজ এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন, যার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি একটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিকের সঠিক নাম শামীম আহমদ, পিতার নাম মছন্নিফ আলী ও গ্রামের নাম রিফাতপুর। মামলার এজাহার ঘেটে দেখা গেছে, তাতে লিখা হয়েছে- শামিম মিয়া, পিতার নাম মচনিছ আলী ও গ্রামের নাম পালপাড়া। নাম, পিতার নাম ও ঠিকানায় অসঙ্গতি থাকার পরও মামলা এবং পুলিশি হয়রানি থেকে রেহাই পাননি তিনি।
শামীম বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর আমাকে ক্রসফায়ারে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের মদতপুষ্ট এই ওসি। চাঁদাবাজ ওসি দম্ভ করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ফ্যাসিস্ট সরকারের ত্যাগি-লড়াকু লোক দাবি করতেন। তার ব্যক্তিগত আক্রোশও রোষানলে পড়ে বারবার মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছি। মিথ্যা মামলার কারণে নিঃস্ব হওয়া ৪৫বছরে ঘর-সংসার না করা এই সাংবাদিক বলেন, মামলাগুলোর কারণে চরম অসহায় অবস্থায় কষ্টে মানবেতর জীবন-যাপন করেছি। পৈত্রিক জমিজমা বিক্রি করে মামলার খরছ জুগিয়েছি। বাবা অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন। এসব মামলায় পরোয়ানা থাকার কারণে পুলিশি হয়রানি এড়াতে আত্মগোপনে ছিলাম। অন্তিম সময়ে আমি বাবার পাশে থাকতে পারিনি। সন্তান হিসেবে এরচে নিদারুন কষ্ট আর কী হতে পারে। সাজানো-গোছানো জীবনটা এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়া শামীম বলেন, এসব মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মামলাগুলো প্রত্যাহার হলে ওসি ছালেকসহ মামলায় সংশ্লিষ্ট কথিপয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবো।
বালাগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি আব্দুছ ছালেক ওই সময়ে সাংবাদিক শামীমের নামে থানার ঝাড়ুদার এবং ঝাড়ুদারের আত্মীয়’র করা জিডি ও মামলা নিয়েছিলেন বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার কাছে তারা জিডি ও মামলা নিয়ে আসলে আমি তা রেকর্ড করি। এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। ডিএমপি’র চকবাজার থানার মামলায় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে আমার কোনো হাত ছিল না। ওসি ছালেক বর্তমানে সিলেট বা চট্টগ্রাম সিআইডি জোনে রয়েছেন। মামলার বিষয়ে ওসির সহযোগী ডেরিক স্টিফেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এমএসএম / এমএসএম

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার জয়কুমোর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ঝুলছে তালা

তাড়াশে মাঠ কৃষকদের জন্য পুনর্জননশীল কৃষির উপর কনক্লেব কাম কারিগরি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

পায়রা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় মোবাইল মেকানিকের লাশ উদ্ধার

গোদাগাড়ীতে ৩০০ গ্রাম হেরোইনসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

লাকসামে ইউএনও কাউছার হামিদের বদলী আদেশ প্রত্যাহার কারণে মানববন্ধন

সদর দক্ষিণের জনগণ আমার পাশে আছে, কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না: হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন

সাঘাটায় সাবেক ইউপি সদস্যের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

রায়গঞ্জে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেতৃত্ব দিলেন পৌর প্রশাসক মাসুদ রানা

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর আসিফ আব্দুল্লাহ ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে বিজয়ী

টাঙ্গাইলে কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় বিপাকে ৪ কর্মকর্তা

গোপালগঞ্জে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান

নন্দন কলা কেন্দ্র, ঢাকা'র সম্মাননা পেলেন নৃত্যগুরু হাসিব পান্না
