ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে শৈশবের স্মৃতি, বাংলার ঐতিহ্য 'ঘুড়ি'


বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি photo বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১-৫-২০২৫ দুপুর ২:৫০

শৈশবের অনুভূতি মানেই অন্যরকম ভালোলাগা। এক সময় আবহমান গ্রাম বাংলার শিশু-কিশোরদের বিনোদনের একটি বিশেষ মাধ্যম ছিল ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা। অথচ বর্তমান আধুনিক যুগে ও বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা এখন আর চোখে পড়েনা। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কালের গর্ভে সারা দেশের মতো বারহাট্টা থেকেও ক্রমেই হারিয়ে গেছে  গ্রাম বাংলার ঘুড়ি উড়ানোর ঐতিহ্য।কবি সুফিয়া কামালের লেখা- 'আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা, তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা। আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি, তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।' ‘আজিকার শিশু’ কবিতার লাইনগুলো আজও মনে করিয়ে দেয় ঘুড়ি উড়ানো সেই দূরন্ত শৈশবের আনন্দময় স্মৃতি। আগেকার দিনে গ্রামগুলোতে গ্রীষ্মকাল শুরু হতে না হতেই আকাশ জুড়ে রঙবেরঙের ঘুড়িতে ছেয়ে যেতো। সে সময় শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষ খোলা মাঠে রং বে-রঙের ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত থাকতো। এখন শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন থাকায় তারা ফেইসবুক, মেসেঞ্জার, ইউটিউবসহস বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও গেমসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। তাদের এখন ঘুড়ি উড়ানোর সময় কোথায়?

সরেজমিনে উপজেলা সদরসহ কয়েকটি এলাকার গ্রাম ঘুরে এবং কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, আগে শিশু-কিশোরদের সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিনোদনের একমাত্র মাধ্যমই ছিল ঘুড়ি উড়ানো। এলাকায় কোন মেলা জমলেই ছেলেদের প্রধান আকর্ষণই ছিল বিভিন্ন প্রকারের ঘুড়ি কেনা। এছাড়াও আবার তাদের মধ্যে চলতো সুন্দর সুন্দর ঘুড়ি তৈরির প্রতিযোগিতা, মাঠে মাঠে চলতো একজন আরেকজনের ঘুড়িতে মাঞ্জা দিয়ে ঘুড়ি কেটে দেওয়ার প্রতিযোগিতা তখন মাঠ জুড়ে বিরাজ করতো উৎসবের আমেজ। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ এবং নগরায়নের প্রভাবে গ্রামীণ এই ঐতিহ্য আজ বিলুপ্ত।

উপজেলা সদরের কাশবন গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মনিন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, যুবক বয়সে আমি বাদামী রঙের মোটা কাগজে নানা ধরণের ঘুড়ি বানিয়ে উড়িয়েছি। তখন আমি জের ঘুড়ি, চিল ঘুড়ি, পতেঙ্গা ঘুড়ি, তেলেঙ্গা ঘুড়ি, পেটকাটা ঘুড়িসহ বাহারি সব ঘুড়ি উড়িয়ে অনাবিল আনন্দ পেতাম। সে সময় গ্রামাঞ্চলে ঘুড়ি বানানো ও উড়ানোর প্রতিযোগিতা হতো কিন্তু সময়ের আবর্তে এখন আর তা দেখা যায় না।

তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয় এমন একটা সময় আসবে যখন ঘুড়ি শব্দটি কি জিনিস তা শুধু শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলের শিশুরাও চিনতে পারবে না।বারহাট্টা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কালেরকন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ ঘুড়ি উড়ানো শৈশবের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছোটবেলায় আমি গ্রামেই থাকতাম গ্রামেই কেটেছে আমার দূরন্ত শৈশব। বাড়িতে বসে বন্ধুরা মিলে বাহারি ধরনের ঘুড়ি তৈরি করেছি। গ্রীষ্মের ধান কাটা শেষ হলে খোলা মাঠে বন্ধুরা মিলে খোলা মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম। গরমের দিনে দক্ষিণা ফুরফুরে হাওয়ায় নাটাই আর ঘুড়ি নিয়ে মাঠ জুড়ে ছোটাছুটি করতাম। ঘুড়ি আকাশে উড়িয়ে দিয়ে ঘুড়ির সঙ্গে বেঁধে দিতাম ধনুক আকৃতির এক ধরনের সুতা, যা বাতাসের ছোঁয়ায় এমন একটা মধুর শব্দ হতো যে, ঘুড়ি আকাশে হারিয়ে গেলেও শব্দটা শোনা যেত। বিকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ঘুড়ি আপন গতিতে আকাশে উড়ত। তখনকার দিনে সাপ ঘুড়ি, বক্স ঘুড়ি, ফিঙ্গে ঘুড়ি, তেলেঙ্গা ঘুড়ি, পেটকাটা ঘুড়িসহ বিভিন্ন আকৃতির ঘুড়ি বিকেলের আকাশে দেখা যেতে। এখনো মনে পড়ে ভাতের ফ্যান দিয়ে ঘুড়ি তৈরির দিনগুলির কথা, যা এখনও খুব মিস করি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান যুগে গ্রাম বা শহরে এখন ঘুড়ি ওড়ানো খেলা অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গেছে। শিশুরা বড় হচ্ছে খাঁচার মধ্যে। ঘরে বসে শহুরে শিশুরা কম্পিউটার বা ভিডিও গেইম খেলে সময় কাটায়। যারা মাঠে যায়- তারা ফুটবল বা ক্রিকেট খেলে। গ্রামীণ শিশুদের মধ্যেও এখন ক্রিকেট খেলার জোয়ার বয়ে গেছে। তাই ঘুড়ি ওড়ানো খেলা একেবারে হারিয়ে গেছে। একসময় এ দেশের ছেলেপুলেরা প্রচুর ঘুড়ি ওড়াতো। গ্রীষ্ম, শরৎ এবং হেমন্তের বিকেলের আকাশ ছেয়ে যেত ঘুড়িতে। আকাশজুড়ে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনি হরেক রঙের ঘুড়িতে আকাশ ছেয়ে যেত! দেখে মনে হতো, আকাশজুড়ে বসেছে রঙের মেলা। কোনো ঘুড়ি কাটা গেলে মনে হতো রঙের মেলা থেকে যেন একটি রং খসে পড়ল। একসময় ঘুড়ি ওড়ানো আর ঘুড়ি কাটার প্রতিযোগিতার রেওয়াজ ছিল। যা এখন প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। তবে পৌষ সংক্রান্তিতে এখনো কোথাও কোথাও ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব হয়ে থাকে।

উপজেলা সদরের মধ্য বাজার এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিমল সরকারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, একসময়ের (ছেলে বেলায়) উড়ন্ত ঘুড়ির সাথে  দিগন্তে পাড়ি দিতে, পাখিদের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়তে মন চাইতো। ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে হারিয়ে যেতাম স্বপ্নের রাজ্যে। আমার ঘুড়ি রাখতাম খুব যত্ন করে। সবুজ ক্ষেতের সরু পথ দিয়ে ঘুড়ি হাতে ছুটতাম বাতাসের পিছু পিছু। তবে এখন বর্তমান যুগের শিশু-কিশোরদের আর আগের মতো ঘুড়ি ওড়ানোর আগ্রহ দেখতে পাই না। আমার মতে, বছরের যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে গ্রামাঞ্চলে অন্যান্য খেলাধুলার পাশাপাশি ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ঘুড়ি খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

এমএসএম / এমএসএম

সাভারে মে মহান দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস পালিত

মেহেরপুরে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ২০২৫ উদযাপন

তাড়াশে মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস পালন

পঞ্চগড়ে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের কয়কদিনেই অদৃশ্য ইশারায় চালু

রায়গঞ্জে প্রশাসনের শ্রমিক বিহীন মহান মে দিবস পালিত

মানিকগঞ্জে মহান মে দিবস পালিত

হারিয়ে যাচ্ছে শৈশবের স্মৃতি, বাংলার ঐতিহ্য 'ঘুড়ি'

অসদাচরণের অভিযোগ নোয়াখালী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদককে শোকজ

‘এসব দিবস আমাদের মতো দিনমজুরের জন্য আসেনি’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটার যানজট

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে নড়াইল জেলা ও লোহাগড়া উপজেলায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উদযাপন

সিংড়ায় ধানের ট্রাকে চাঁদাবাজির সময় বিএনপি নেতাসহ তিনজন আটক

আসল অপরাধী আমার ছেলের বউ, বললেন হিটু শেখ