তরুন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করতে সরকারের দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে

সরকারের সহযোগিতা সংকুচিত হলে উদ্যোক্তা তৈরি হবে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না বরং বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাবে। রাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া কোন উদ্যোক্তা সফল হতেও পারে না বলে মন্তব্য করেছেন নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য তকিব হোসেন। তরুণ এই ব্যবসায়ী বলেছেন, তরুন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করতে সরকারের দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে।

তকিব হোসেন নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য এবং জেএস এগ্রো ফার্ম জেএস টেক্সটাইল ও জেএস ফেব্রিক্স স্বত্বাধিকারী। এছাড়াও তিনি মেসার্স ছেনু মিয়া টেক্সটাইল এন্ড সাইজিং মিল লিমিটেড পরিচালক। ছেনু মিয়া টেক্সটাইল বাংলাদেশের জনপ্রিয় লুঙ্গি "স্মার্ট লুঙ্গি" তৈরি করে। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে স্মার্ট লুঙ্গির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। চাহিদার ভিত্তিতে স্মার্ট লুঙ্গি আরো আধুনিক করে পকেট লুঙ্গি তৈরী করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বহির্বিশ্বের পকেট লুঙ্গিসহ অন‍্যান‍্য কাপর রপ্তানি করে ছেনু মিয়া টেক্সটাইল। টেক্সটাইল ব্যবসার পাশাপাশি তকিব হোসেন নজর দিয়েছেন কৃষিভিত্তিক শিল্পে। তিনি বাংলাদেশের কৃষিক্ষাতকে আরো উন্নত ও ডিজিটাল করার জন‍্য কাজ করছেন। বাংলাদেশের কৃষিপণ্য তরুণদের মাধ‍্যমে বিশ্বের প্রতিটি দেশে পৌছে দেয়ার জন‍্য তার রয়েছে যুগোপযোগী বৃহৎ পরিকল্পনা।

ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক কার্যক্রমেও সক্রিয় আছেন তরুণ এই ব্যবসায়ী। করোনাকালীন সময় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শতো শতো মানুষকে অক্সিজেন সেবা দিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন মৌসুমী দূর্যোগে এলাকার বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছেন। ফ্রি চক্ষু শিবির ও বিনামূল্যে ছানী অপারেশনের জন্য তিনি তার এলাকায় গঠন করেছেন বিশেষ সেল। সর্বশেষ ২০ দিন আগে ১১ জনকে বিনামূল্যে ছানী অপারেশন করানো হয়েছে। প্রতি বছর ফ্রি মেডিকেল টিম গঠন করে বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা ও রক্তদান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।

তরুণ এই ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু জাতীয় আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য - সাউথ এশিয়ান বিজনেস পার্টনারশিপ ও এশিয়ান বিজনেস পার্টনারশীপ সামিট এর যৌথ প্রয়াসে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে এশিয়ান এক্সিলেন্স এসিভার্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫, বিসনেজ এক্সিলেন্স অ‍্যাওয়ার্ড ২০২৪, বিজিসিএফ অ‍্যাওয়ার্ড সিজন ৩ এর সেরা উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড, ইপি কর্তৃক কৃষি সেকশনে স্মার্ট এন্ট্রাপ্রেনিউর পুরস্কার ২০২৪, বিসিসিএফ অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ এবং ২২তম বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তিনি পেয়েছেন সম্মানসূচক একাধিক পুরস্কার। তিনি দৈনিক সকালের সময়কে বলছেন, পুরস্কার তাকে অনুপ্রেরণা দেয় সামনে এগিয়ে যেতে। তার মন্তব্য- ব্যবসায়ীকে হতে হবে আত্মবিশ্বাসী এবং শুকনো মরুভূমির আরব ঘোড়ার মতো ত্যাগী। দৈনিক সকালের সময়ের মাধ্যমে সারাদেশের তরুন উদ্দোক্তাদের জন‍্য তিনি কিছু পরামর্শমূলক বার্তা দিয়েছেন-

১। আপনারা নিজের শখ পুঁজি হিসেবে কাজে লাগান, আপনার শখ হতেপারে আপনার আগামীদিনের ভালো ভবিষ্যত। তবে খেয়াল রাখতে হবে, শখ যেনো অবশ্যই ভালো কাজের হয়। আপনারা সমাজের জন‍্য কাজ করুন, অসহায় মানুষের পাশে থাকুন, নিজের শখের পাশাপাশি সামর্থ অনুযায়ী অন‍্যের শখকে কাজে লাগানোর জন‍্য সহযোগীতা করুন।

২। বাংলাদেশ সরকারের কাছে তরুনদের পক্ষ থেকে একটাই চাওয়া, সরকার তরুনদের দিকে একটু নজর দিক। তরুনদের যদি সরকার সহযোগীতা করে তবে আমি মনেকরি, বাংলাদেশের বেকারত্ব অনেকটা দূর হবে। একজন তরুনের ভালো উদ্যোগ আরো ৫ জনের কর্মসংস্থান করতে পারে। তাই সরকার যদি আমাদের তরুনদের সহযোগিতা করে ইনশাআল্লাহ আজকের তরুন উদ্যোক্তারা আগামীর বাংলাদেশ এগিয়ে নিবে। আজকের তরুনরাই সারা বিশ্বের সেরা দেশ বাংলাদেশকে বানাবে।

৩। ছোটবেলা থেকে বাবাকে দিনরাত পরিশ্রম করতে দেখেছি, আমি দেখেছি একটি ব‍্যবসাকে কিভাবে আজ বাংলাদেশ চিনিয়েছে। বাবার কাছ থেকেই শেখা কিভাবে ব‍্যবসা করা, কিভাবে একটি ব‍্যবসার জন‍্য কাজ করা। আজকে আমার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পিছনে সকল অবদান আমার বাবার। বাবার কাছ থেকেই ব‍্যবসার অনুপ্রেরনা। তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে শ্রম দিতে হয়, তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে অন্য মানুষের জন্য কর্মসংস্থান করে দিতে হয়। 

৫। জনকল্যাণমূলক ব‍্যবসা বলতে আমি বুঝি সমাজের বেকারত্ব দূর করা। একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে আমার মূল লক্ষ্য সর্বপ্রথম আমার সমাজের বেকারত্ব দূর করা। সকলকে যার যার নিজের পরিশ্রমের মাধ‍্যমে অন্যকে এগিয়ে নেয়া। 

৫। ব‍্যবসা বলতে আমি ৩ টা শব্দ বুঝি। (ক) ব‍্যবহার- অবশ‍্যই একজন ব্যবসায়ীর ব‍্যবহার হতে হবে ভালো ও নমনীয়, (খ) বন্ধুত্ব- একজন ব‍্যবসায়ীকে অবশ‍্যই অন‍্যের সাথে সম্মানসূচক ও বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে, যেন তার মাধ‍্যমে অন‍্যজন কোন কষ্ট না পায়, (গ) সৎ- একজন ব‍্যবসায়ীর প্রধান কর্তব্য সততা, সততা ছাড়া কখনো ব‍্যবসা টিকবে না। অসৎ ব‍্যবসা করে কোটিপতি হওয়া যায় দ্রুত, তবে সেটা খুব স্বল্প সময়ের জন‍্য। সৎ ব‍্যবসা টিকে বেশি। তাই একজন‍ ব‍্যবসায়ীকে অবশ‍্যই সৎ থাকতে হবে। সততার সাথে ব্যবসা করতে হবে। আমার দেখা সততার সাথে ব‍্যবসা করা ব‍্যবসায়ীরা কখনো ঠকেনি, লাভ কম হলেও সমাজের সম্মানিত ব‍্যবসায়ী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করছে।