ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

হোটেল ও রেস্টুরেন্ট শিল্পের সফল জাদুকর সুকান্ত সৈকত


কে আই তাজ photo কে আই তাজ
প্রকাশিত: ২৮-৫-২০২৫ বিকাল ৫:১৪

বিদেশ বিভূঁই থেকে উন্নত পড়াশোনা, উচ্চতর ডিগ্রী নেওয়া, লোভনীয় চাকরির হাতছানি উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মায়ায় ফিরে এসে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খাতে অত্যাধুনিক ধারণার আমূল পটবদল ক'জনই বা করতে পারে? তেমন একজন সাহসী তুর্কীর সাফল্যগাঁথার অবতারণা হোক আজ৷ নাম তার সুকান্ত সৈকত। দেশের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট অঙ্গনে নামটি দিকে দিকে সমাদৃত একটি ব্র‍্যান্ড হয়ে উঠেছে। অনেকেই তাকে হোটেল-রেস্টুরেন্ট জগতের জীবন্ত জাদুকর বলেন। যেখানে হাত স্পর্শ করেন, সেখানেই যেন সোনা ফলে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ দেশের  বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে  আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছেন সুকান্ত সৈকত, পরে অত্যন্ত সুনাম কুড়িয়েছে সেসব রেস্টুরেন্ট। সুইজারল্যান্ডে হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনার পর সেখানেই পার্ট টাইম কাজে সংযুক্ত হন সুকান্ত। এরপর পারফরমেন্সের ভিত্তিতে ১৪ বছর বিভিন্ন দেশের নামকরা হোটেল, ক্যাফে ও রেস্তোরাতে উচ্চপদে চাকরি করেন সুকান্ত। দিনে দিনে ভারী হতে থাকে তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ঝুলি। অত:পর সিদ্ধান্ত নেন যে বাংলাদেশে স্থায়ী হবেন। দেশ মাতৃকার হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে কালচারে অত্যাধুনিক কিছু সংযোজন করবেন সুকান্ত, সে অভিপ্রায়ে ২০০০ সাল থেকে দুর্দান্ত মাত্রার কনসালটেন্সী শুরু করেন। সেসময় তার তত্ত্বাবধানে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে এবং দেশের বেশ কিছু হোটেল-রেস্টুরেন্টে কনসালটেন্সীর মাধ্যমে  খ্যাতি কুড়িয়েছিল। 

সামগ্রিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সুকান্ত সৈকত বিবিধ প্রসঙ্গের অবতারণা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন- "মনোযোগী টিম ওয়ার্ক, খাবারের উন্নত মান ও পরিবেশ ঠিক করতে পারলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের হোটেল  ও রেস্টুরেন্ট বাংলাদেশে করা খুব সম্ভব। গুলশানের নামকরা ক্যাফে ম্যাংগো, লক্ষৌ রেস্টুরেন্ট; ধানমণ্ডির ভূত রেস্টুরেন্ট, মাওয়া ঘাটের বহুল পরিচিত প্রজেক্ট হিলশা সহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টকে শূন্য থেকে গতিশীল করেছেন তিনি। বর্তমানে সুকান্ত সৈকত ঢাকার ক্রেজ গ্রীণ লাউঞ্জ মাল্টি কুইজিন ব্যুফে রেস্টুরেন্টের সিইও হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। বাংলা মোটর ছাড়াও বসুন্ধরা আবাসিক এবং বেইলি রোডে আউটলেট আছে গ্রীণ লাউঞ্জের। 

খাবার ও পর্যটন শিল্প এখনো শিল্প হয়ে উঠতে পারেনি কেন? এর উত্তরে সুকান্ত বলেন- "আমার ৩৫ বছরের পেশাগত জীবনে খেয়াল করেছি যে বাংলাদেশে পেশাদারীত্ব মনোভাব কিঞ্চিৎ কম। বিদেশে হোটেল- রেস্টুরেন্ট সংক্রান্ত পেশা অত্যন্ত মর্যাদার এবং পেশাদার ঘরানার। নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার মানসিকতা সবাই একভাবে লালন করেন না। যে কোন ব্যবসার ৮০% লাভ আসে সেবা প্রদান মানসিকতা থেকে। এসব জায়গায় আমাদের ঘাটতি থেকে যায়। যেকোনো রেস্টুরেন্ট বা হোটেলে আগত অতিথিদেরকে ভিআইপি নজরে দেখতে হবে। কাস্টমার প্রায়োরিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসবে সুনজর দিলে খাতটি সামগ্রিক শিল্প হয়ে উঠবে।" বাংলাদেশে কী কী চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- "দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল নয়, সব মাস সমান ব্যবসা বান্ধব নয়। ওয়েডিং সিজন শীতকালের তিন মাস ছাড়া ব্যবসা শ্লথ। রাজনৈতিক অস্থিরতা পরতে পরতে বিদ্যমান। বাংলাদেশে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ খরচ বেশী। ফুড ও ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি এখনো শিল্প পর্যায়ে যায়নি, কেননা এ সংক্রান্ত পলিসি বা নীতিমালা নেই। দেশের অন্যান্য খাতের মত ভর্তুকি এই খাতে দেয় না সরকার। আমাদের ডমেস্টিক ভ্রমণে ট্যাক্স ও ভ্যাট ফ্রি কিছু জোন করা দরকার।"

নতুন যারা এই খাতে ক্যারিয়ার করতে চায়, তাদের জন্য কী পরামর্শ আপনার? সুকান্ত বলেন- "কাজকে ভালবাসা, উপভোগ করাই সফলতার মূলমন্ত্র ৷ সম্মান ও পেশাদারী চোখে দেখলে যে কেউ তার কাজে সফল হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম অত্যন্ত মেধাবী, উদ্যমী। অন্য পেশার সাথে নিজ পেশার কোন ভালো-মন্দ তুলনায় যাওয়া যাবে না। কাজকে সম্মান দিলে, কাজ সম্মান ফিরিয়ে আনে। জ্ঞানভিত্তিক দক্ষতা দরকার। পড়ালেখা ভিত্তিক জ্ঞান ও ব্যবহারিক জ্ঞান মিলিয়ে নিজেকে আলোকিত করতে হবে। ইউরোপীয়রা এই খাতে খুব টপ লেভেলে, কারণ তারা প্রচুর পড়াশোনা করে এবং কর্ম ক্ষেত্রে উক্ত জ্ঞানকে প্রয়োগ করে।" 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার প্রশ্নে সুকান্ত সৈকত দারুণ কিছুর আভাস দেন- "আমার ইচ্ছে একদম আন্তর্জাতিক মানের  হোটেল ম্যানেজমেন্ট স্কুল বা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা; যেখানে আরএন্ডডি, শেফ প্রশিক্ষণ, সার্ভিস ও দক্ষতার উন্নয়ন করা হবে। ভীনদেশে আমাদের এথনিক গ্রামীণ খাবার তুলে ধরাও আরেকটি অভিপ্রায়। এজন্য আমাদের ফুড কালচারে বিদেশীদের আকৃষ্ট করতে চাই। বিশ্ব বরেণ্য গর্ডন রামসে-কে বাংলাদেশে আনার অভিলাষ আছে, যেন বাংলাদেশী খাবারের সাথে তিনি সুপরিচিত হয়ে সুধারণা পোষণ করতে পারেন।"

উল্লেখ্য, সুকান্ত সৈকত এর প্রিয় খাবার- নিহারী, বাকরখানি, দেশীয় সবজি, লাবড়া। ভীনদেশী রেসিপির বিভিন্ন স্পাইসি ফুড জেমন- মেক্সিক্যান, ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ ডেলিকেসি বা প্যারিসের প্যাটিসারি আইটেম তার অত্যন্ত প্রিয়। ও, মজার বিষয় সুকান্ত সৈকত নিজস্ব রেসিপি  প্রণয়ন করেছেন: প্রজেক্ট হিলশায় মরিচ কলা, ভাঁপা ইলিশ, পুষ্টিসম্পন্ন সবজি, রসুন ঢেঁড়শ ইত্যাদি তার আবিষ্কার। বর্তমান কর্মক্ষেত্র গ্রীণ লাউঞ্জেও ব্যতিক্রম বেশ কিছু আইটেমের স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। 

খাদ্যপ্রেমীদের প্রতি কী পরামর্শ? উত্তরে তিনি বলেন- "আশি ও নব্বই দশক থেকে এখন টেস্টবাড অনেক পরিবর্তিত। আগে শেফ বা বাবুর্চিরা অনেক আন্তরিক ছিলেন, ভালো খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করতেন। এই চর্চাটা এখন কম। ইদানীং ফিউশান ফুড খুব এগিয়েছে। এগুলো খেতে মজা, তবে স্বাস্থ্যসম্মত বা ভালো নয়। খাদ্যপ্রেমীকে বুঝতে হবে কোন খাবার তার জন্য ভালো, কোনটা মন্দ। কোনটা বর্জন করতে হবে, কোনটা গ্রহণ করতে হবে।   জাংক ফুড বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা জরুরী।" 

সুকান্ত সৈকতের বিভিন্ন শখ রয়েছে, যেমন- পড়াশুনা, নিজ লাইব্রেরীকে বিভিন্ন বই দিয়ে সমৃদ্ধকরণ, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা। প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকায় জন্ম সুকান্ত সৈকতের। পিতা-মাতার আদরের একমাত্র সন্তান কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ ও ঢাবির মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। পরে উচ্চতর ডিগ্রী নিতে বিদেশ যান। এরপরের গুণ বা কীর্তির কথা তো জানলেনই সবাই। সুকান্ত সৈকতের অর্জনের মধ্যে কলিগদের ভালবাসা, মধুর সম্পর্ক; তার অসংখ্য চেনাজানা অনুসারীদের ভালো অবস্থানে থাকাই সবচেয়ে বড় পুরস্কার।

এমএসএম / এমএসএম

হোটেল ও রেস্টুরেন্ট শিল্পের সফল জাদুকর সুকান্ত সৈকত

শুরু হয়ে গেল রাঁধুনী নিবেদিত মাংসের সেরা রেসিপি ২০২৫ সিজন ৪ রান্নার প্রতিযোগিতা

অপরাজিতায় কবিতার শাড়ি 

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে শক্তিশালী করতে এসএমই ফাউন্ডেশন ও অক্সফ্যাম একসাথে কাজ করবে

ঈদ ফ্যাশন ফিক্সেশন এর উদ্বোধন

ভর্তার স্বাদ ও সাতকাহন 

মাসরুমের গুরুত্ব ও মাশরুমের উৎপাদন কৌশল শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

আমার মমতাময়ী মা 

শেষ হলো আইডিয়া পিচিং কম্পিটিশন ক্রিয়েভেঞ্চার ৩.০

ছোট উদ্যোক্তা থেকে বড় উদ্যোক্তা হওয়ার প্লার্টফর্ম সম্পূর্ণা বাংলাদেশ

টিকটকে যে নারীরা অনুপ্রেরণা যোগায়

চল্লিশেই সফল ব্যবসায়ী- নিয়াজ মোর্শেদ এলিট

ইপি-উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্ম এর বিভিন্ন জেলায় পুষ্পস্তাবক অর্পণ -