ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

চুয়াডাঙ্গার অনুকরণীয় নারী উদ্যোক্তা নাহিদার সাফল্যগাথা উত্থান


নিজস্ব প্রতিবেদক photo নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮-১০-২০২৫ দুপুর ১০:৩১

চুয়াডাঙ্গায় এক অনুপ্রেরণার মডেল নাম নাহিদা। পুরো নাম মোছা. নাহিদা খাতুন। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে অজপাড়া গাঁর নাহিদার অর্জন চমকে দেওয়ার মতো। মাত্র ক’বছরের ব্যবধানে শূন্য থেকে এখন অর্ধকোটি টাকার পূঁজি বানিয়েছেন তিনি। এই তো সেদিন এক কাপড়ে যাকে শ্বশুর-শাশুড়ি বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তারা তো জানতেন না এই নাহিদাই কদিন বাদে তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াবে। অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী নাহিদা এখন পুরো জেলাজুড়ে অনুকরণীয় নারী উদ্যোক্তা। সত্যি সত্যিই সাফল্যগাথা নাহিদার উত্থান। এলাকার মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনদের কটু কথা ও সমালোচনাকে তোয়াক্কা না করে, যিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। ঠিক ঠিকই শক্তভাবে দাঁড়িয়েছেন। সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন পরিবারের অবহেলিত নারীরাও পারে ঘুরে দাঁড়াতে। ঘোচাতে পারে সংসার ও পরিবারের অভাব-অনটন।
১৯৯৪ সালের ১২ আগস্ট আলমডাঙ্গার গাংনী ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম রামনগরে জন্ম নাহিদার। গ্রামীণ সমাজের মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া নাহিদার বাবা সিরাজুল ইসলাম ছিলেন একজন সাধারণ ব্যবসায়ী আর মা ছকিনা খাতুন সাথী  গৃহিণী। বাবা ব্যবসা করলেও সংসারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যদিনের। মা-বাবার স্বপ্ন ছিল নাহিদা ডাক্তার হবে। তাই শিশুকাল থেকেই সেই পরিচর্যায় বড় হতে থাকেন নাহিদা। ২০১০ সালে এলাকার আসমানখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজে। কিন্তু গ্রামের মানুষের নানান সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। পিতা-মাতার রূপসী কন্যা হওয়ায় বিয়ের জন্য ঘটকের জ¦ালাতন ছিল বেশ। তাছাড়া মেয়েকে অত লেখাপড়া শিখিয়ে কী হবে? এমন নানা প্রশ্নের মুখে পড়তেন নাহিদার পিতা। তবে এসব কটু কথাকে আমল দিতেন না তিনি। সব সমালোচনাকে দু’পায়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে এগোতে থাকেন নাহিদা। ডাক্তার হবে নাহিদা; পিতার দু’চোখে এমন খেয়াব লেগেই থাকত। তাই শখের বসে নাহিদাকে ডাক্তার বলে ডাকতেন তার পিতা। এরই মধ্যে নাহিদাদের পরিবারে ঘটে যায় এক অঘটন। নাহিদাদের তিন বোনের পরে জন্ম নেওয়া একমাত্র ভাই হারিয়ে যায়। নাহিদার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ডাক্তার হওয়ার সম্ভাবনার সম্মুখে অন্তরায় হয়ে ওঠে ওই ঘটনা। তারপরেও হাল না ছেড়ে স্নাতক উত্তীর্ণ হন ঠিকই, কিন্তু ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যায়। এক পর্যায়ে নাহিদাকে পছন্দ করে বিয়ে করেন এক প্রবাসী। ২০১৭ সালে প্রথম মা হন নাহিদা। সংসার জীবন ভালোই চলছিল । এসময় সমস্যার কারণে প্রবাস থেকে স্বামী সাদ আহমেদ বাড়িতে ফিরে এলে অর্থের অভাব ঘিরে ধরে তাদের। শ্বশুরবাড়িতে তারা ভারী বোঝা হয়ে ওঠেন। কলেজ জীবনে শেখা সেলাইয়ের কাজই চরম দুর্দিনে একটা নিদেন হয়ে দাঁড়ায়। স্বামীর সহযোগিতায় নাহিদা ২০১৯ সালে নেমে পড়েন সেলাই কর্মে। এ থেকে মাত্র ১৪ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে শ্বশুরবাড়ি আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় ব্যবসা শুরু করেন। নরসিংদী থেকে রিজেক্ট কাপড় এনে বেচাকেনা শুরু। হঠাৎ বিশ্বজুড়ে করোনার থাবায় দোকানপাট যখন বন্ধ, তখন নাহিদার হাতে একটা সুযোগ এসে ধরা দেয়। তার দোকানে প্রচুর বেচাকেনা হতে থাকে। কিন্তু এসব ভালো থাকা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অন্তরের জ¦ালা হয়ে ওঠে। তাদেরকে এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়। অকুল পাথারে পড়েন নাহিদা। বাধ্য হয়ে বাসাভাড়া নিতে হলো তাকে। কিন্তু ব্যবসা থামল না। তার একটা সেলাই মেশিন থেকে পাঁচটা হলো। একটা দোকান থেকে হুলো দুই দোকান। দুই দোকানে তিন আইটেমের ব্যবসা শুরু হলো। একদিকে টেইলার্স আরেকদিকে কসমেটিক্স জুতো-স্যান্ডেল। 
এখন নাহিদা শ্বশুরবাড়ি এলাকার গণ্ডি পেরিয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরে ব্যবসা করছেন। শহরের প্রাণকেন্দ্রে তার হয়েছে তিনটি দোকান। নাহিদা কসমেটিক্স কর্নার, নাহিদা লেডিস পয়েন্ট ও নাহিদা লেডিস টেইলার্স। নাহিদা এখন তার প্রতিষ্ঠানে পাঁচজন কর্মচারীও চালান। তার এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে ১০ লক্ষাধিক টাকার বেচাকেনা হয়। খালি হাতে উঠে আসা নাহিদার পুঁজি এখন ৫০ লাখ টাকার ওপরে। তাই তো চুয়াডাঙ্গার সব নারী উদ্যোক্তার কাছে নাহিদা হয়ে উঠেছেন সাফল্যের মডেল ও অনুকরণীয় নারী ব্যবসায়ী। তার এই সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন বেশ কিছু সম্মাননা। সফল আত্মকর্মী হিসেবে পেয়েছেন অ্যাওয়ার্ড। মানবাধিকারে বিশেষ অবদানের জন্যও পেয়েছেন সম্মাননা। এছাড়া এ বছর অদ্বিতীয়া নারী উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন তিনি। বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে নাহিদা অর্জন করেছেন অসংখ্য সনদপত্র। এবার জয়িতা হিসেবে তার সাফল্য দেখতে চায় আলমডাঙ্গা উপজেলা তথা চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী।
নাহিদা একান্ত সাক্ষাৎকালে জানান, তার আরো বড় ইচ্ছে, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। তিনি বলেন, ‘আমি আলমডাঙ্গায় একটি কারখানা দিতে চাই। যেখানে শত শত নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হবে। ঘুচবে বেকারত্বের অভিশাপ। পৃথিবীকে জানাতে চাই, আমরা নারী হয়েও অনেক কিছু করতে পারি। তাই প্রতিটা নারীর নিজের একটা পরিচয় থাকা দরকার। পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারীদেরও কিছু করার দরকার আছে। কারণ সব দায়িত্ব পুরুষের ওপর ছেড়ে দিতে হয় না। আমরা নারী, আমরাও পারি। যে রাধে সে চুলও বাঁধে

 

Aminur / Aminur

চুয়াডাঙ্গার অনুকরণীয় নারী উদ্যোক্তা নাহিদার সাফল্যগাথা উত্থান

দেশী ও বিদেশি নারীদের ফ্যাশন হাউজ অপরাজিতা

সৈয়দ সামিউল হোসেন: হোটেল ইন্ডাস্ট্রির স্বপ্নবাজ এক তরুণ পেশাজীবী

অপ্সরা ডিজায়ার হেয়ার সেলুনের যাত্রা থেকে সাফল্যের গল্প

হোটেল ও রেস্টুরেন্ট শিল্পের সফল জাদুকর সুকান্ত সৈকত

শুরু হয়ে গেল রাঁধুনী নিবেদিত মাংসের সেরা রেসিপি ২০২৫ সিজন ৪ রান্নার প্রতিযোগিতা

অপরাজিতায় কবিতার শাড়ি 

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে শক্তিশালী করতে এসএমই ফাউন্ডেশন ও অক্সফ্যাম একসাথে কাজ করবে

ঈদ ফ্যাশন ফিক্সেশন এর উদ্বোধন

ভর্তার স্বাদ ও সাতকাহন 

মাসরুমের গুরুত্ব ও মাশরুমের উৎপাদন কৌশল শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

আমার মমতাময়ী মা 

শেষ হলো আইডিয়া পিচিং কম্পিটিশন ক্রিয়েভেঞ্চার ৩.০