তথাকথিত অনলাইন পত্রিকা বন্ধের নির্দেশ

সারাদেশে নিবন্ধন ছাড়াই চলছে হাজার হাজার অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এসব অনলাইন পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে কোথা থেকে তা অনেকেরই জানা নেই। বিদেশ থেকেও বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে অসত্য, ভূয়া, মনগড়া, মিথ্যা ও কাল্পনিক সংবাদও প্রকাশ করছে এসব অনলাইন পত্রিকা। অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিকদের অধিকাংশ প্রকাশিত সংবাদ মানুষ জনকে বিরক্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন করছে। তথাকথিত অনলাইন পত্রিকার নামধারী সাংবাদিকরা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের পাশপাশি মূলধারার অনলাইন পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং সাংবাদিকদের অবস্থান তলানিতে আনছে।
এ দিকে গতকাল অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল আগামী ৭ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন আদালত। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন দুই রিটকারী আইনজীবী জারিন রহমান ও রাশিদা চৌধুরী নীলু।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধারাবাহিকভাবে বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত ৯টি দৈনিক বাংলা পত্রিকা ও একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার ঘোষণাপত্র বাতিল করা হয়েছে। ঘোষণাপত্র বাতিল করে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরে গত ৮ সেপ্টেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়েছে।
জানা যায়, এক শ্রেণির নামধারী ওয়েবসাইট ডেভলপারদের মাধ্যমে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে চালু করছে অনলাইন পত্রিকা। মূল ধারার সংবাদপত্র থেকে কপি পেস্টের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংগ্রহ করে প্রকাশ করার পাশপাশি দেশের সাধারণ মানুষজনকে টার্গেট করে তাদের নামে মিথ্যাচার করছে এসব পত্রিকার নামধারী রিপোর্টার অর্থাৎ সাংবাদিকরা। পরে মানুষের চরিত্র হনন থেকে রক্ষায় পোস্ট ডিলিট অথবা প্রতিবাদ ছাপানোর নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রতিনিধি বা রিপোর্টার অর্থাৎ নামধারী সাংবাদিক হিসাবে পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড সরবরাহ করছে এসব পত্রিকার সম্পাদকরা। তাদের প্রকাশিত চটকদার খবরগুলো স্থান পাচ্ছে সাইবারস্পেসে। এসব সাংবাদিকরা অনলাইনে কাজ করার শুরুর আগে কেউ চালাতেন রিক্স, আবার কেউ ঐ জাতীয় পেশার সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ দোকান কর্মচারি, মদ, হেরোইন, ইয়াবা বিক্রেতা থেকে শুরু করে অপরাধী চক্রও রয়েছে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সব ধরনের মিডিয়ার পরিসংখ্যান থাকলেও অনলাইন মিডিয়ার কোনো পরিসংখ্যান নেই। বর্তমান সরকারের আমলে অনলাইন পত্রিকার নীতিমালা থাকার পরও তোয়ক্কা না করে প্রতিবছর গজিয়ে উঠছে এসব পত্রিকা। সাংবাদিকতার নামে চলছে যথেচ্ছাচার। সাংবাদিক হিসেবে করা হচ্ছে ক্ষমতার অপব্যবহার। জেলা সদর এমনকি মফস্বল থেকেও প্রচুর অনলাইন পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। অনেকেই অপসাংবাদিকতা করার সুযোগ পাচ্ছে।
এছাড়াও তুলনামূলক অনেক সহজ হওয়ায় অন্য পেশায় থেকেও কেউ কেউ একটি অনলাইন ভিত্তিক সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা করে নিজেকে রিপোর্টার হিসাবে জাহির করছেন। এদের অনেকেরই সাংবাদিকতার ন্যূনতম জ্ঞান নেই। সামাজিক প্রভাব বিস্তারের জন্যই তারা নিজের প্রতিষ্ঠিত মিডিয়াকে ব্যবহার করছেন। এ ধরনের সাংবাদিকতা ‘মহামারি’ আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই এটি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান মিডিয়া-সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি খায়রুল আলম রফিক জানান, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমান সরকার সুষ্ঠু সাংবাদিকতার স্বার্থে নীতিমালা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হয়েছে অনেক অনলাইন পত্রিকা।
অপরদিকে রেজিস্ট্রেশনের তোয়ক্কা না করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেকে মিডিয়াব্যক্তিত্ব হিসেবে সমাজে পরিচয় দেয়ার লোভ থেকেই অনলাইন মিডিয়ার নামে অপসাংবাদিকতা করছে। সাংবাদিকতার নামে দুর্নীতিও করছে। এর ফলে পুরো সাংবাদিক সমাজের ওপর কলঙ্ক আসছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। জানা যায়, বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতায় হাজার অনলাইন নিউজ-পোর্টাল রয়েছে। সেই সঙ্গে সংবাদপত্রের লিঙ্কিং সাইটও রয়েছে অগুনিত।
এসব সংবাদপত্রকে কতোটা সংবাদপত্র বলা যায় তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা। এসব অনলাইনের অনেক সাংবাদিক পেশাদার নয়। অনেক কম্পিউটার অপারেটরও একটি সাইট তৈরি করে ‘সম্পাদক’ বনে যাচ্ছেন। তারা পরিচয়পত্র নিজেদের ফেসবুকে শেয়ার করছে। আন্ডারগ্রাউন্ড অনলাইন পত্রিকার ভূয়া সাংবাদিকদের মোটা অংকের অর্থ আয় দেখে দেশের শিক্ষিত যুব সমাজ হাতাশায় ভূগছে। সুস্থ ধারায় ভাল কোন কাজ করার মানসিকতাও হারিয়ে ফেলেছেন তারা।
১০টি দৈনিক পত্রিকার ঘোষণাপত্র বাতিল : দীর্ঘদিন ধারাবাহিকভাবে বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত ৯টি দৈনিক বাংলা পত্রিকা ও একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার ঘোষণাপত্র বাতিল করা হয়েছে। ঘোষণাপত্র বাতিল করে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরে গত ৮ সেপ্টেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়েছে।
গণ আওয়াজ, দৈনিক জনসেবা, ঢাকা প্রকাশ, জাতির কণ্ঠ, কিষাণ, এই দেশ এই দিন, পূর্ব আলো, সময়ের পাতা ও রিপোর্টার এবং ইংরেজি দৈনিক দি ফাইনান্সিয়াল ডেইলি’র ঘোষণাপত্র বাতিল করা হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধন) আইনের ৯ (১) এর (৩) (ক) ধারা এবং পত্রিকাগুলোর প্রকাশক ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে চুক্তিপত্রের শর্ত না মানার কারণে একই আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী পত্রিকাগুলোর ঘোষণাপত্র বাতিল করা হয়েছে।
৯২টি ছাড়া সব অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধের নির্দেশ : অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল আগামী ৭দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন আদালত।
আদেশে বলা হয়, ৯২টি প্রতিষ্ঠান ব্যতিত অননুমোদিত ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন সব নিউজ পোর্টাল বন্ধ করতে হবে। আগামী ৭দিনের মধ্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
এর আগে গত ৫ মে সংবেদনশীল সংবাদসহ যে কোনো খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য ‘নৈতিক নীতিমালা’ প্রণয়ন চেয়ে সংশ্লিষ্টদের একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এই নোটিশ দেওয়া হয়। সেই নোটিশের কোনো জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী জারিন রহমান ও রাশিদা চৌধুরী নীলু।
রিট আবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি রাজধানীতে ২১ বছরের এক মেয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দণ্ডবিধি আইনের ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে বিশেষ করে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে অগ্রহণযোগ্যভাবে নিউজ পরিবেশন করা হয়েছে। অথচ এসব সংবাদ পরিবেশনা বন্ধে বিটিআরসি কিংবা প্রেস কাউন্সিল কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল কর্তৃক সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে দেশে অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টালগুলো চালু থাকার পরেও বিটিআরসি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাই এসব পোর্টালের রেজিস্ট্রেশনও জরুরি।
এই রিটের শুনানি নিয়ে ‘ন্যাশনাল অনলাইন মাস মিডিয়া পলিসি-২০১৭’ অনুযায়ী দেশে অননুমোদিত ও অনিবন্ধিতকৃত অনলাইন মিডিয়াগুলো কেন বন্ধ করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত।
এমএসএম / এমএসএম

ভুয়া লাইসেন্সে হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন লেলিন মুন্সি

গণপূর্তের ইএম কারখানা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফের দুর্নীতির রাজত্ব

দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীগন

‘এনবিআর’এ স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে থাকা চক্রের চক্রান্ত

প্রাণ ধ্বংসকারী কোম্পানি প্রাণ

বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

কোতোয়ালীতে অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে
