ঢাকা শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫

বারহাট্টার প্রকৃতিতে ফুটন্ত শাপলা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে


বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি photo বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১-৮-২০২৫ দুপুর ২:৪৭

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুচক্রে বাংলার প্রকৃতি জুড়ে এখন বর্ষা। নীল আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের ভেলা, আবার কালো মেঘের সাথে সূর্যের লুকোচুরি খেলা। নিচে বিলের কালচে পানির ওপর সবুজের ফাঁকে থরে থরে ফুটে আছে লাল-সাদা শাপলা। সবকিছু মিলিয়ে বারহাট্টার প্রকৃতি সেজেছে ভিন্ন এক রূপে, এ যেন রং-তুলির আঁচরে আঁকাবর্ষার মোহনীয় রূপ।

গ্রামবাংলার প্রকৃতির ঐতিহ্য শাপলা ফুল বছরের প্রায় সব সময়ই ফুটতে দেখা যায় কিন্তু বর্ষা ও শরৎ কালে শাপলা ফুল ফোটার শ্রেষ্ঠ সময়। আবহমান বাংলার অকৃত্রিম রুপছায়া আর মায়া সবই যেন ধারণ করে আসছে শাপলার সৌন্দর্য। গ্রামের মেঠোপথের ধারে ছোট-বড় জলাশয়, খাল-বিল আর নদীর নয়নাভিরাম রূপ দিতে ফুটে রয়েছে লাল-সাদা কিংবা নীল রঙের শাপলা। খালে-বিলে, জলাশয়ে অনাদরে ফুটে থাকা লাল-সাদা শাপলার সৌন্দর্যে পূর্ব আকাশের সূর্যের রক্তিম আভাকে যেন আলিঙ্গন করেছে। শাপলা ফুল বাংলা সাহিত্যের ছন্দমিলানোর একটি অনন্য উপকরণ। বাংলা সাহিত্যের সব সাহিত্যিকই শাপলা ফুলকে করেছেন সাহিত্যের বিশেষ।উপকরণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ, পল্লীকবি জসীমউদ্দিন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল থেকে শুরু করে সবার কবিতা ও গানে রয়েছে শাপলার কদর। শাপলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গ্রামীণ পরিবেশ চিত্রায়ণে পল্লী কবি জসীম উদ্দিন 'সোজন বাদিয়ার ঘাট' কবিতায় লিখেছেন, "দীঘিতে তখনো শাপলা ফুলেরা হাসছিলো আনমনে, টের পায়নিক পান্ডুর চাঁদ ঝুমিছে গগন কোণে।" গ্রামবাংলার অকৃত্রিম রুপছায়া আর মায়া সবই যেন ধারণ করে আসছে ঐতিহ্যের শাপলা ফুল।

সরেজমিনে উপজেলা সদর, সাহতা, আসমা, রায়পুর, চিরাম, সিংধা, বাউসী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, প্রায় সব এলাকার খালে-বিলে, আঁকাবাঁকা মেঠো পথের ধারে ছোট-বড় জলাশয়ে ও নদীতে চোখে পড়ে বিভিন্ন রঙের শাপলা ফুলের বিপুল সমাহার। গ্রামীণ প্রকৃতির এই শাপলা ফুলের বাহারী রঙে ছেয়ে গেছে উপজেলার নদী-নালা, খালবিল। উপজেলার বিভিন্ন বিলের স্বচ্ছ পানিতে বাহারি রঙের শাপলা ফোটে থাকার দৃশ্য দেখে যে কারোরই মনে হবে, ভেজা প্রকৃতি পানিতে যেন রঙিন চাদর বিছিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার নৌকায় চড়ে বিলের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে বাহারি রঙের শাপলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করছে। বারহাট্টার প্রায় সকল জলাশয়ে বর্ষাতেই তার সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক নিয়ে হাজির হয় শাপলা। এ জলজ ফুল শাপলার উপস্থিতিতে যেন প্রাণ ফিরেছে ছোট-বড় সকল জলাশয়ে।

উপজেলার রায়পুর এলাকার ফকিরের বাজার গ্রামের জামাল মিয়া, ঝন্টু সরকার, শাসনউড়া গ্রামের রহিস উদ্দিন, সালেক খাঁ, রায়পুর গ্রামের চন্দন সরকার, মিন্টু মিয়ার সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখছি, বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে আমাদের এলাকার রামদিয়া বিল, সিংধা বিলসহ ছোট-বড় খাল কিংবা নিচু জমি। তখনই দেখা যায়, হাজার হাজার লাল-সাদা শাপলা ফুল ফুটে আছে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত এ শাপলা ফুল ফুটে থাকে। আমাদের এলাকার আসেপাশের শিশুরা খেলার উপকরণ হিসাবে শাপলা ফুল তুলে নিয়ে যায়।

কথা হয় উপজেলা সদরের বড়ি গ্রামের দাস পাড়া এলাকার কয়েকজনের সাথে তারা জানান, আমাদের এলাকার চারপাশ ঘিরে আছে রড়ি বিল। প্রতিবছর বর্ষার মাঝামাঝি ও শেষের দিকে বিলে যখন পানি বেশি হয় তখন বিলে লাল, সাদা, নীল বাহারি রঙের শাপলা-পদ্মসহ অনেক সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে। এ বছর বর্ষার শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় দেরিতে ফুল ফুটেছে। এখন শাপলা-পদ্ম ফুলের বাহারি রঙে সেজেছে আমাদের প্রিয় বিলটি। বিলের স্বচ্ছ পানিতে লাল-সাদা শাপলা ফোটার দৃশ্য দেখে যে কারোরই মনে হবে, পানিতে যেন কেউ রঙিন চাদর বিছিয়ে রেখেছে। বিকেল হলেই বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সি লোকজন এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।

বারহাট্টা প্রেসক্লাবের নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার সাংবাদিক আজিজুল হক ফারুকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, শাপলা ফুলের সৌন্দর্য চিরকালই আমাকে বিমোহিত করে। ভাসমান একেকটি শাপলার রূপশোভা অভিভূত করে যে কোনো বয়সের মানুষকে। ছবির মতো সাজানো, হৃদয়কাড়া দৃশ্য আটকে রাখতে পারে না দুরন্ত শৈশবকে। শাপলা ফুলের সৌরভ বিমোহিত করে মনকে। ছোট-বড় সবার কাছেই শাপলা ফুল অনেক পছন্দের। এই শাপলা ফুল কোনরকম কোন পরিচর্যা ছাড়াই পুকুর, পরিত্যক্ত হাওড়, ডোবা, খাল-বিল, জলাশয় ইত্যাদি অনেক জায়গায় জন্মে থাকে।

তিনি আরও বলেন, ছোটবেলায় শুকনো মৌসুমে  আমরা অনেক শাপলা গাছের (শালুক) বীজ কুড়িয়ে খেয়েছি। এখন আগের মতো আর বেশি শালুক দেখা যায় না। আমাদের উপজেলায় আমতলা, রৌহা, নন্দী বাড়ী, কামালপুর, মরা কংস, মরা বিশনাই, বড় ধলা, ঘালিয়ামারি, চাপারকোনা, ধলেশ্বরী, বাঘাইর, মহেশখালী, ধলা, গুলামখালী, শিববাড়ী বালিজুড়ী, বড়িখালসহ ছোট-বড় ২৬টি খাল রয়েছে। একসময়ে এসব খালে-বিলে, পুকুরে, রাস্তার ধারে ডোবায় অনেক শাপলা দেখতে পেতাম। এখন জনসংখ্যার চাপে পতিত খাল বিল কমে আসছে। চাষাবাদ হচ্ছে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে। তাই শাপলা হয়ে পরছে অবহেলিত ফুল। তবুও বর্ষার জল আর শাপলা ফুলের সৌন্দর্যে যেন বর্ষার চিরায়ত রূপ ফুটে উঠেছে।

বারহাট্টা সরকারি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হক জানান, শাপলা "Nymphaea" গোত্রের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম- "Nymphaea nouchali"। ইংরেজি নাম- "Water Lily"। এর বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। শাপলা ফুলের ১৩ থেকে ১৫টির মতো পাঁপড়ি হয়। পাঁপড়ির মাঝখানে হলুদ রঙের পরাগদানী থাকে। লাল এবং সাদা রঙের ফুল হয়। শাপলার পাতাও খুব সুন্দর। বড় গোলাকার পাতা পানির উপর চমৎকার ভাবে ভেসে থাকে। শালুক বা শাপলার মধ্যে রয়েছে বহু ঔষধি গুণ। এর ডাঁটায় পুষ্টিগুণ রয়েছে। এটিকে সবজি হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায়। এর ফল কাঁচা কিংবা রান্না করেও খাওয়া যায়।

এমএসএম / এমএসএম

হাইস্পিড গ্রুপ অফ কোম্পানির মালিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান

বোদায় মহিলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে সাইকেল বিতরণ

হাটহাজারী মাদ্রাসায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্থায়ী সদস্য কবর জেয়ারত ও পরিচালক'র সাথে সৌজন্য সাক্ষাত

ভবদাহ অঞ্চলে পানিবন্দি শত শত পরিবার

বারহাট্টার প্রকৃতিতে ফুটন্ত শাপলা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে

কুড়িগ্রামে দূর্গম চরাঞ্চলের দরিদ্র মহিলাদের মাঝে সেলাই/হস্তশিল্প বিষয়ক প্রশিক্ষনের উদ্বোধন

মানিকগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী মুন্নুর মৃত্যুবার্ষিকীতে চিকিৎসা সেবা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিয়ে হয়নি তবুও নিচ্ছেন মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা

মির্জাগঞ্জে চাঁদাবাজির মামলায় রাসেল মৃধা গ্রেপ্তার

কর্ণফুলী পেপার মিলসের তামার তার পাচারের সময় ১ জন গ্রেফতার

‎নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগ নেতা বিস্ফোরক মামলার আসামি ভারতে পালানোর সময় গ্রেপ্তার

তানোরে বিএনপির স্থবিরতা কাটাতে মিজানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের!

মেহেরপুর জেলা বিএনপি'র উদ্যোগে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত