যান্ত্রিকতায় বারহাট্টা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্যাডেল রিকশা

এক সময়ে বারহাট্টার প্রধান সড়ক ও আনাচে কানাচের রাস্তায় দেখা মিলতো প্যাডেল চালিত রিকশা। তখন রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে সংসার চলতো খেটে খাওয়া মানুষের। কিন্তু বর্তমানে যান্ত্রিকতা ও আধুনিকতার ছোয়ায় ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল চালিত রিকশা।
এক সময়ে গ্রাম কিংবা শহর উভয় জায়গাতেই যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল প্যাডেল চালিত রিকশা। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে, শহরের অলিগলিতে রিকশার টুংটাং শব্দ আজও অনেকের কানে বাজে। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রিকশায় চড়ার ঐতিহ্য নিয়ে উক্তিতে বলেছেন- "রিকশায় চড়ায় একটা রাজকীয় ব্যাপার আছে; মাথা সামান্য উচু করলেই আকাশ দেখতে দেখতে যাওয়া যায়।" অথচ সময়ের পরিবর্তন আর দিন বদলে আজ ঐতিহ্য হারাতে যাচ্ছে রিকশার। প্যাডেল রিকশার ব্যবহার কমে গেলেও, এর স্মৃতি ও ঐতিহ্য আজও অমলিন। যান্ত্রিকতার এ আধুনিক যুগে কর্মজীবী মানুষের জন্য এখন পেশি শক্তির বদলে আবিষ্কার হয়েছে ইলেকট্রনিক ও সহজলভ্য যানবাহন। যান্ত্রিকতার এই উৎকর্ষের দাপটে কর্মজীবী মানুষের জন্য এখন পেশী শক্তির বদলে আবিষ্কার হয়েছে ইলেক্ট্রনিক ও সহজলভ্য যানবাহন। বিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে, পৃথিবী তত ক্রমশ এগিয়ে চলেছে, আর সেই সাথে পিছিয়ে পড়ছে পুরনো অনেক ঐতিহ্য। একসময় রাস্তাঘাটে বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলতো তিন চাকার পায়ে টানা রিকশা। বর্তমানে ব্যাটারি চালিত তিন চাকার রিকশার দাপটে অনেকেটাই হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার পায়ে টানা ঐতিহ্যবাহী রিকশা।
সরেজমিনে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা শহর ও আশেপাশের এলাকায় প্রচুর রিকশা রয়েছে। তবে, এর প্রায় সবগুলোই ব্যাটারি চালিত। সদরের বাজারে দু’একটা পায়ে টানা রিকশা রয়েছে। এছাড়া ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় সয়লাব পুরো এলাকা।
প্রবীণ রিকশা চালকদের সাথে বলে জানা যায়, ২০১৬ সালের দিকেও উপজেলা জুড়ে প্যাডেল চালিত রিকশার দাপট ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। হাতেগোনা ১০-১২টির মতো প্যাডেল চালিত রিকশা থাকলেও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভিড়ে তা এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যে কয়টা প্যাডেল চালিত রিকশা চলছে সেগুলোও চালাচ্ছেন বৃদ্ধরা। টাকার অভাবে অটোরিকশা কিনতে না পারা ও ব্যাটারি চালিত রিকশা চালাতে সাহস না পাওয়ায় তারা প্যাডেল চালিত রিকশা চালাচ্ছেন। প্যাডেল চালিত রিকশার জায়গা পুরোটাই দখল করেছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা।
উপজেলার কাশবন গ্রামের রিকশা চালক তরুণী সিংহ (৭০), গোপালপুর এলাকার মোজ আলী (৬০), সাহতা এলাকার ফজর আলী (৬০) সহ কয়েকজন প্রবীণ রিকশা চালকের সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে বলেন, বর্তমানে যাত্রীরা খুবই ব্যস্ত তাই তারা প্যাডেল চালিত রিকশায় চড়তে চান না। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আমরা মাত্র ১০-১২ জন এই রিকশা চালাচ্ছি। সবার বয়স হয়ে গেছে। অটোরিকশা চালানোর মতো সাহস নেই। এছাড়া অটোরিকশা কেনার মতো টাকাও নেই। তাই বাধ্য হয়েই এই রিকশা চালাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, গত ৭-৮ বছর আগেও প্রতিদিন ৭০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা আয় করতে পারতাম। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা আয় করতে পারি। আবার কোনো কোনো দিন সেটা হয় না। বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম তা দিয়ে সংসার চলে না। এ পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন অন্য কোনো পেশায় যাব তারও কোন উপায় নেই।
এ বিষয়ে শহরের স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, "আমরা ৮-১০ বছর পূর্বে বাজার করা সহ বিভিন্ন কাজে বের হলে এ রিকশাতেই ঘুরে বেড়াতাম। তাছাড়া সেই সময়ে এতো মোটরসাইকেলের ব্যবহার ছিল না। অধিকাংশ মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে প্যাডেল রিকশা যোগেই অফিস, আদালত ও দোকানপাটে পৌঁছাতো। খুব ভালো ছিল সেই দিনগুলো এখনকার মতো সেই দিনগুলোতে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটতো না। ছিল না কোন যানজট। বর্তমানে মানুষের মধ্যে অলসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অটো চালকরা পায়ের উপর পা তুলে অটো চালায়। এতে দুর্ঘটনাও ঘটে। বর্তমানে শহরে যে পরিমান ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা চলাচল করে তাতে এই শহর থেকে প্যাডেল রিকশা বিলুপ্ত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।"
বারহাট্টা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, পেশি শক্তিকে কাজে না লাগিয়ে যতটা আরাম আয়েশে কর্ম করা যায় মানুষ এখন সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছে। কম শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষত কিংবা দিনমজুরের কাজ করা লোকেরাই এখন বেশিরভাগ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক। এক্ষেত্রে অলস মানুষের পেশা হিসেবে ব্যাটারি চালিত রিকশাই বেশি পছন্দের বলে ধারণা করছেন অনেকেই। তাই পায়ের রিকশার প্যাডেলের পরিবর্তে মানুষ এখন ঝুঁকে পড়েছে যান্ত্রিক এই ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার প্রতি। এজন্য হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল চালিত রিকশা।
তিনি আরও বলেন, ব্যাটারি চালিত রিকশা সাধারণ রিকশার চেয়ে গতি বেশি। অথচ চাকা একই ধরনের হওয়ার কারণে প্রয়োজনে গতি কমানোর সময় ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে দূর্ঘটনা ঘটে। কারিগরি ভাবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এবং এর ব্রেক সাধারণ রিকশার মত হওয়ায় গতি বেগ বেশি হলে সামলাতে পারেনা চালকেরা।ফলে ব্যাটারি চালিত রিকশায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে বেশি। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা ব্যাটারি চালিত রিকশা চালিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
বারহাট্টা প্রেসক্লাবের নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী আজিজুল হক ফারুক বলেন, পায়ে টানা রিকশা শুধু ঐতিহ্যবাহী-ই নয়, এটা মূল্যসাশ্রয়ীও ছিল। ব্যাটারিচালিত রিকশায় বিদ্যুৎ খরচ হয়। তা বাংলাদেশের মতো লোডশেডিংপ্রবণ দেশে কিছুটা সমস্যাই তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, যান্ত্রিকতা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক জিনিস ক্রমেই জাদুঘরে চলে যাচ্ছে। এই প্যাডেল চালিত রিকশাও জাদুঘরে চলে যাওয়ার অপেক্ষায়।
এমএসএম / এমএসএম

লোহাগড়ায় সরকারি রাস্তা দখল, ঘরবন্দি শিরিনা খাতুন

সান্তাহারে ইয়াবা ট্যাবলেট ও প্রাইভেট কারসহ দুইজন গ্রেপ্তার

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে গরুর গাড়ি মার্কা প্রার্থীর সমর্থনে সভা

কাউনিয়ায় এইচএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষায় টাকা নেওয়ার অভিযোগে

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে গাছের চারা বিতরণ

দুই সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালিত

পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জন করে চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন- কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সোনাগাজীতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গরু চোরসহ গ্রেফতার-০৪, চোরাই গরু উদ্ধার

সীমান্তে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

ভূরুঙ্গামারীতে বিএনপির নেতাদের নামে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এভাবেই নষ্ট হচ্ছে পৌরসভার অর্ধ কোটি টাকার সম্পদ

টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রি, শিক্ষার্থী নেই তবুও চলছে এমপিওভুক্ত কলেজ
