শিবির কর্মী থেকে বিএনপি নেতা, কে এই জাকির হোসেন সরকার

গত বছরের ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো পুনরায় সক্রিয় হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলগুলোর ওপর নানা অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা ও হামলা চালানো হয়েছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। এরপর বিএনপি তাদের দলীয় কর্মকাণ্ড আবারও শুরু করে এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি বা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কুষ্টিয়া জেলা আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকারের কমিটি প্রকাশের পর জেলার ত্যাগী নেতাকর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেন। তাদের অভিযোগ, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিডদের পদ দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে, সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার তার স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়া ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কুষ্টিয়ার প্রত্যেকটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করেছেন। এর ফলে দীর্ঘ বছর ধরে আন্দোলন করা ত্যাগী কর্মীরা পদবঞ্চিত হয়েছেন। এতে জেলার রাজনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
নেতাকর্মীরা আরও অভিযোগ করেন, জাকির হোসেন সরকার অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের বিএনপির পদে বসাচ্ছেন। উপায় না পেয়ে অনেক নেতাকর্মী নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাকে টাকা দিয়ে কমিটির পদ পদবি নিচ্ছেন। এর প্রমাণ হিসেবে তারা খোকসা উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ আনিসুজ্জামান স্বপন (আনিস) এবং কুমারখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনসার প্রামাণিকের কথা উল্লেখ করেন, যারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পদ পেয়েছেন বলে তাদের দাবি।
কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জাকির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও তদন্তের আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ৫ই আগস্টের পর কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম জাকির হোসেন সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, অভ্যুত্থানের পর হাজী রবিউল ইসলাম বিএনপি নেতা জাকির হোসেন সরকারকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন এবং এ কারণেই তাকে সেল্টার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, জাকির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার শীর্ষস্থানীয় হিন্দু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। একজন আওয়ামী সমর্থিত ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিনি ২ কোটির বেশি টাকা নিয়েছেন বলে জানা যায়। আরও অভিযোগ আছে যে, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মালামাল ক্রয়ের টেন্ডারে অবৈধ ও পুরাতন মালামাল কেনার বৈধতা দিতে তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা কমিশন নেন। কুষ্টিয়া শহর বিএনপি নেতা কাজল মাজমাদা এই অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে করেছেন। এছাড়া, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন বালুমহাল, পরিবহন সেক্টর এবং সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হয়। বালুমহাল থেকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চরমপন্থীদের দিয়ে হামলা করানো হয়।
গত বছরের ৫ই আগস্টের পর থেকে চরমপন্থী নেতা জাহাঙ্গীর কবির ওরফে লিপটন জাকির হোসেন সরকারের বিশ্বস্ত ক্যাডার হিসেবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে লিপটনসহ তার দুই সহযোগী বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। কিন্তু লোকমুখে শোনা যায় এবং দেশ টিভিসহ একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয় যে, জাকির হোসেন সরকারের তদবিরে লিপটনকে প্রধান আসামি না করে সহযোগী করা হয়েছে এবং উদ্ধারকৃত অস্ত্রের সংখ্যা মামলায় কম দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় তাকে চরমপন্থীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া, দৌলতপুর উপজেলায় এক অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ীকে সেল্টার দেওয়ার বিনিময়ে তিনি প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ নেন বলে জানা যায়। কুষ্টিয়ার বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা মমিনুর রহমান মমিজের একটি মোবাইল কথোপকথন থেকে জানা যায় যে, জাকির হোসেন সরকারের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে এবং হানিফ ভাই তাকে দিয়ে বিভিন্ন ডিল করান।
জাকির হোসেন সরকারের এসব কর্মকাণ্ডে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং তারা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাদের আশঙ্কা, কেন্দ্র থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এবং সদস্য সচিবকে বহিষ্কার না করলে আসন্ন নির্বাচনে কুষ্টিয়াতে বিএনপির ভরাডুবি হবে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সমাজসেবার আড়ালে ‘গ্রীন সিটি’ রূপান্তরের নামে তিনি বিভিন্ন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি করেন। তার অতীত সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি বুয়েটে পড়াকালীন ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং পরে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন ফালুর কোম্পানিতে চাকরি করার সুবাদে কৌশলে বিএনপিতে নিজের জায়গা করে নেন। এক প্রবীণ রাজনীতিবিদের মতে, মামা-ভাগ্নের এই কমিটির অপকর্মের কারণে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন সহ্য করা ত্যাগী নেতারা রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের মতে, জাকির হোসেন সরকারের কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগের সময়ের মতোই এবং এ কারণে কুষ্টিয়াতে বিএনপির জনপ্রিয়তা দিন দিন কমছে।
এমএসএম / এমএসএম

টিসিবি'র কার্ডের কথা বলে নারী-পুরুষদের মানববন্ধনে দাঁড় করালেন প্যানেল চেয়ারম্যান, ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী

শিবির কর্মী থেকে বিএনপি নেতা, কে এই জাকির হোসেন সরকার

রৌমারীতে বিয়ের প্রলোভনে তরুনীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা

মান্দায় ছয় মাস ধরে এসিল্যান্ড শূন্য

পঞ্চগড়ে বিএনপির বিজয় র্যালি

প্রশাসনিক অনুমতিতে মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের দাফন সম্পন্ন

সড়ক দুর্ঘটনায় সুবিপ্রবি শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শোক

পটুয়াখালীতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে জেলা বিএনপির বিজয় র্যালি ও সমাবেশ

গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঠাকুরগাঁওয়ে বিজয় র্যালী

ঝিনাইদহে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ও ছাত্র-জনতার বিজয়ের বর্ষপূর্তিতে আনন্দ শোভাযাত্রা

ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তিতে ফটিকছড়িতে বিজয় মিছিল-আলোচনা সভা

আর কোন স্বৈরাচারের জন্ম হতে দিবেনা বিএনপি
