ঢাকা বৃহষ্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

তৃতীয় পর্ব

গাজীপুরের শেষ নিঃশ্বাস: গাউকের দুর্নীতি যখন বিধ্বংসী


এম এস রহমান  photo এম এস রহমান
প্রকাশিত: ৩-৯-২০২৫ দুপুর ৩:৪৬

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (গাউক) সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিষবৃক্ষ এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা কেবল নগরীর অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলছে না, বরং জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধ্বংসের বীজ বপন করছে। এই প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা এখন এমন এক ভয়ংকর মাফিয়াচক্রের রূপ নিয়েছে, যেখানে জনস্বার্থের কোনো স্থান নেই। এই প্রতিবেদনটি আগের পর্বগুলোর ধারাবাহিকতায় গাউকের অপশাসনের আরও গভীর ও সুনির্দিষ্ট চিত্র তুলে ধরছে, যা তাদের অপকর্মের স্পষ্ট প্রমাণ।

অনুসন্ধানে গাউকের দুর্নীতির একের পর এক সুনির্দিষ্ট উদাহরণ বেরিয়ে এসেছে। জয়দেবপুর মৌজায় ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (২০২২-২০৩৫) অনুযায়ী চিহ্নিত জলাশয় এলাকায় ১৩ তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বরুদা এলাকার ৩৬ শতাংশ জমিতে খন্দকার নাজিমউদ্দিন গং-কে এই ভূমি ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে (স্মারক নং-১৫০৫.২৪.১৬৮১)। এটি ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান-এর সরাসরি লঙ্ঘন এবং জনগণের জন্য নির্ধারিত জলাশয়কে ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য বিক্রি করে দেওয়ার মতো অপরাধ।

একইভাবে, কাজী শায়লা শারমিন গং-এর নকশা অনুমোদনের জন্য ১১ তলা ভবন নির্মাণের শর্ত অনুযায়ী ২০ ফুট রাস্তা প্রয়োজন হলেও,  টাকার বিনিময়ে ১০ ফুট রাস্তাকে ২০ ফুট দেখিয়ে অনুমোদন দিয়েছেন (নথি নং ৬২/২৫)। এটি একটি জঘন্য জালিয়াতি, যা শুধু ভবন নির্মাণে নিয়ম ভঙ্গই নয়, বরং নগরীর অবকাঠামোকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

এমনকি, গাউকের কর্মকর্তারা ত্রুটিপূর্ণ জমিতে 'বিশেষ প্রকল্প' দেখিয়ে আইরিশ ফ্যাশন লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনহীন ভবনগুলোকে ছাড়পত্র দিয়েছেন। এটি একটি অশুভ চক্র, যেখানে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা অর্থের বিনিময়ে যেকোনো অন্যায়কে বৈধতা দিচ্ছেন। লুফর রহমান এবং মো. আব্দুস সোবাহান গং-এর নামে জমা হওয়া দুটি ফাইলে (নথি নং ১৪৩৫/২৪ এবং ১৫৯/২৫) ছাড়পত্র জালিয়াতিরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, দক্ষিণ পানিসাইল মৌজায় শতবর্ষী শফিউল্লাহ খাল দৃশ্যমান থাকা সত্ত্বেও সেখানে বহু তল ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই খালটি পাঁচটি গ্রামের জল নিষ্কাশনের একমাত্র ব্যবস্থা। জনগণের জীবন এবং পরিবেশের কথা চিন্তা না করে গাউকের কর্মকর্তারা নিজেদের পকেট ভরার এই জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছেন।

গাউকের কর্মকর্তারা ফাইল আটকে রাখা, ত্রুটি খুঁজে বের করা এবং বছরের পর বছর ধরে আবেদনকারীদের হয়রানি করার মাধ্যমে ঘুষ আদায়ের এক সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। এটি একটি জিম্মি করার কৌশল, যার ফলে একটি ন্যায্য কাজ সম্পন্ন করতেও নাগরিকদের আর্থিক দণ্ডের শিকার হতে হয়। এই দুর্নীতির বিষাক্ত সংস্কৃতি গাজীপুরের উন্নয়নের প্রতিটি স্তম্ভকে ক্ষয় করছে এবং জনগণের ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে।

শহরের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো প্রমাণ করে, আইনের কঠোর বিধান গাউকের কর্মকর্তাদের কাছে নিছক উপহাস। তারা নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে এই অবৈধ নির্মাণকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এর ফলে, গাজীপুর শুধু তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে না, বরং যেকোনো মুহূর্তে ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হতে পারে। অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে এই ভবনগুলো শত শত মানুষের জীবনের জন্য চরম ঝুঁকির কারণ হবে।

গাউকের দুর্নীতি কেবল আর্থিক ক্ষতিই করছে না, এটি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে চরম সংকটে ফেলছে। অপরিকল্পিত শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য নদী ও খাল-বিলে মিশে যাচ্ছে, যা নীরব ঘাতকের মতো মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। গাউকের কর্মকর্তাদের এই নীরবতা প্রমাণ করে, তারা কেবল দুর্নীতিবাজই নন, বরং পরিবেশ বিনাশের ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত।

গাউকের সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের মূল কারণ হলো জবাবদিহিতার চরম অভাব। যখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো সংস্থা এই ভয়াবহ অনিয়মগুলো দেখেও না দেখার ভান করে, তখন এই কর্মকর্তারা নিজেদেরকে ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে মনে করেন। এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দ্রুত অবসান ঘটাতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোরতম পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। যদি এই অপশাসন চলতে থাকে, তবে গাজীপুর তার অস্তিত্ব হারাবে এবং রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের অবশিষ্ট বিশ্বাসও সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যাবে।

এই ভয়াবহ চিত্র কি এভাবেই চলতে থাকবে, নাকি আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে? এই প্রশ্ন এখন পুরো জাতির সামনে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

এমএসএম / এমএসএম

বালু খে‌কোরা যত বড় হোক কাউকে ছাড় দেয়া হ‌বে নাঃ ইউএনও ত‌রিকুল ইসলাম

‎বন্দরবান জেলা পরিষদের প্রকল্প বাতিল, পিছিয়ে পরার ভয় ১৩ জনগোষ্ঠীর

পারিবারিক কলহের জেরে পিতার হাতে পুত্র খুন

চিলমারীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

কুড়িগ্রামে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

জয়পুরহাটে জেলা পরিষদের শিক্ষাবৃত্তির চেক প্রদান

ডায়াগণস্টিকে স্বাক্ষর জালিয়াতি : খাবারে নেই মেয়াদ, দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা, অভিযোগের তীর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে

‎সাঘাটা খাদ্য বান্ধব ডিলার এসোসিয়েশনের কার্য্যনির্বাহী কমিটি গঠন

পঞ্চগড়ে প্রাঃ শিক্ষা অফিসারের অর্থ কেলেঙ্কারি ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি কতৃপক্ষের

সাতক্ষীরা শহরের ৯নং ওয়ার্ডের ওএমএস ডিলারের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ

গোদাগাড়ীতে উন্নত জাতের মাসকলাই বীজ ও সার বিতরণ

কাজ শেষে না করেই লাশ হলো দুই বন্ধু, ট্রাকের ধাক্কায় দুই তরুণের মৃত্যুতে চলছে শোক