কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্পে অনিয়মের পাহাড়
● কেন্দ্রয়ী প্যাকিং হাউজ প্রকল্পে প্রায় দেড় কোটি টাকার মেশিন ও যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়নি
● কান্ট্রি অফ অরজিন পরিবর্তন করে প্রতারণা করা হয়েছে
● ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা অঞ্চলের প্রকল্পে কম ক্ষমতা সম্পন্ন এলএলপি মেশিন কেনা হয়েছে।
● পলিনেট হাউজের মেজারমেন্ট সঠিক না থাকা সত্ত্বেও বিল দেয় হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ে আওতাধীন কৃষি সম্প্রসরণ অধিদপ্তরে ২৮টি প্রকল্প রয়েছে। তার মধ্যে অধিকাংশ প্রকল্পে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সরকারি অডিটে পাহাড় পরিমান সরকারি অর্থ আত্মসাতের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এবং এর অধীনস্থ প্রকল্পসমূহের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অডিট সম্পন্ন করে নিরীক্ষা দল কর্তৃক ১২৩টি অডিট আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। যার বিপরীতে ১৯২ কোটি ৫১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৪ টাকার গুরুতর আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে থেকে দুইটি প্রকল্পের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হলো। একটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগণিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর প্রকল্প। অন্যটি হচ্ছে ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পে।
এর মধ্যে কেন্দ্রয়ী প্যাকিং হাউজ প্রকল্পে ৫ কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪৮ টাকার আত্মসাতের অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অডিটের অভিযোগে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগণিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর প্রকল্পে গত ২নভেম্বর ২০২৩ সালে ই- জিপি টেন্ডারে মাধ্যমে, যার আইডি নাম্বার ৮৯৫৫৫২ এর আওতায় ৩টি ফ্লোর ক্লিনার এন্ড স্ক্রাবার, ৮টি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ও ৩টি এয়ার শওয়ার পাস বক্রা কেনার জন্য ইটি টিস লিমিটেড কোম্পানির সাথে ৬১ লাখ ৬৮হাজার টাকা চুক্তি সম্পাদন করে কার্যদেশ দেয় হয়, শর্ত থাকে মেশিনগুলো জাপান ও সিঙ্গপুর হতে হবে কিন্তু মেশিনগুলো দেয়া হয় বাংলাদেশের। ঠিকাদার কান্ট্রি অফ অরজিন পরিবর্তন করলেও তাকে চুক্তিনুযায়ী বিল দেয়া হয়েছে। এখানে বাংলাদেশে মেশিনের দাম আর জাপানের মেশিনের দামে বিস্তার ব্যবধান রয়েছে। ঠিকাদারের সাথে যোগসাজেসে প্রকল্প পরিচালক অনিয়ম করছে বলে অডিটে আপত্তি জানানো হয়েছে।
ল্যাব যন্ত্রপাতি ইনস্টল না করে প্যাকেটবন্দি অবস্থায় ফেলে রাখায় সরকারের ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬৮হাজার টাকার অপচায় হয়েছে বলে অডিটে অভিযোগ জানিয়েছে।
অডিটের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গ্লোবাল টেকনোরজি নামে কোম্পানির কাজ থেকে ১টি কম্পাউন্ড মাইক্রোস্কোপ উইথ ফটোগ্রাফিক এটাচমেন্ট,১টি ট্রাইনোকুলার মাইক্রোস্কোপ উইথ ফ্লুরোমেন্ট এটাচমেন্ট, আউট অসিল এভিই মেশিন ও ১টি সেন্ট্রিফিউজ মেশিন(১৬০০০আরপিএম) ক্রয় করে ২৪ মার্চ ২৪ সালে ১ কোটি ২২লাখ ৩৮হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। নেমাটোলজি ল্যাবরেটরির জন্য মার্কস সিন্ডেকেট লিঃ এর নিকট থেকে ডিস্টিলড ওয়াটার প্লান ল্যাবরেটরি রেফ্রিজারেটার ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ক্রয় করে ফেলে রাখা হয়েছে। এছাড়া ইনসেক্ট ডায়াগনোসিস ল্যাবরেটরির জন্য ১টি কম্পাউন্ড মাইক্রোস্কোপ উইথ ফটোগ্রাফিক এটাচমেন্ট মেশিন ডায়মিক সলিউশন কোম্পানির কাছ থেকে ৩৯লাখ ৫০হাজার টাকা কিনে ইনস্টল না করে যন্ত্রগুলো প্যাকেটবন্দি অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। এতে রাষ্টের টাকা অপচয় হয়েছে বলে অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকার কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজের বিভিন্ন ল্যাবের জন্য কেনা ১ কোটি ৪৪লাখ ৫০হাজার টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি সরেজমিনে পরিদর্শন কালে পাওয়া যায়নি বলে সরকারি অডিটে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে অডিটের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ঢাকার শ্যামপুরে অবস্থিত কেন্দ্রীয়ও প্যাকিং হাউজের ইনসেক্ট ডায়াগনোসিস ল্যাবরেটরির জন্য সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান ডায়মিক সলিউশন এর নিকট থেকে ১টি সফট এক্রা-রে মেশিন ৪৫ লাখে কেনা হয় এবং অনুরুবভাবে টকি্রাকোলজি ল্যাবরেটরির জন্য সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান ক্যানেল ইনটারন্যাশনাল লিঃ এর কাছ থেকে ৯টি আইটেমের যন্ত্রপাতি ১৯ জুন ২০২৪ সালে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা কেনা হলেও অডিটের দল সরেজমিনে পরির্দশনে গেলে প্রকল্প পরিচালক এস এম সাইফুল্লা খালিদ তা দেখাতে পারেনি। এ জন্য অডিট দল মনে করেন প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজেশে ঠিকাদার মেশিন ও যন্ত্রপাতি না দিয়েই বিল নিয়ে গেছেন।
মাটি ভরাটের পরিমান থেকে উত্তোলিত মাটির পরিমান বাদ না দিয়ে বিল পরিশোধ করায় আর্থিক ক্ষতি ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৬০০ টাকা। কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগণিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর প্রকল্পে পান শোধনাগার(৬তলা) ভবন সম্প্রসারণ ডরমেটরি ভবন নিমার্ণেও প্রাক্কলন ও বিওকিউতে মাটি উত্তোলনের পরিমান দেখানো হয় ৯৫০ ঘনমিটার কিন্তু মাটি ভরাটের পরিমান দেখানোয় হয় ১৮০০ঘনমিটার। তা হলে ওখান থেকে যে মাঠি উত্তোলন করা হয়েছে সেই মাটি কোথায়। ওই মাটি যে ব্যবহার করা হয়নি তা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। এই জন্য অডিটের দল নিরীক্ষা করে বলছে এখান থেকে ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৬শত টাকার অনিয়ম করা হয়েছে।
ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পে মোট ৪ কোটি ৪৬লাখ ৯৫ হাজার ৯৪৮ টাকার অনিয়মে অভিযোগ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রধান অভিযোগ হচ্ছে ডিপিপিতে(ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) যে ক্ষমতা সম্পন্ন যে পাম্প মেশিন দেয়ার কথা ছিলো তার থেকে অনেক কম ক্ষমতা সম্পন্ন মেনিশ সরবাহ করা হয়েছে। গত ১১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৪২০টি এলএলপি(১০০মিটার ফিতাসহ) ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকায় কেনা হয় মেসার্স জনি এন্টারপ্রাইজ থেকে । যার পাওয়ার ছিলো ৬.৬ অশ্ব ক্ষমতা সম্পন্ন অথচ ডিপিপিতে ৮.৫ অশ্ব ক্ষমতা সম্পন্ন এলএলপি পাম্প মেশিন দেয়ার কথা ছিলো। এখান থেকে বিপুল পরিমান অর্থ অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
দ্বিতীয়, ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পে অনিয়ম হচ্ছে মেজারমেন্ট ব্যতীত পলিনেট হাউজ নির্মাণে বিল প্রদান। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ডিপিপি মোতাবেক প্রকল্পের আওতাধি ৪ জেলায় ৪টি উপজেলায় ৪টি পলিনেট নির্মাণ করা হয়। ৯৮ লাখ ৯৮ হাজার ৯৪৮ টাকায়, কাজ গুলো দেয়া হয় কাজল এন্টারপ্রাইজ নামক একটি কোম্পানিকে কিন্তু কাজের মেজারমেন্ট ঠিক না থাকার পরও তাকে বিল দেয়া হয়েছে এখানে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অডিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন শেখ ফজলুল হব মণি তার শেখ পদবি থাকায় ওই সময় তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পরিবারের লোক বলে পরিচয় দিতেন। শেখ সেলিম তার আত্মীয় বলে তিনি প্রভাব খাটাতেন এবং দুর্নীতি করতেন। যাতে কেউ তাকে কিছুনা বলে।
এ বিষয় দুই প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাদের সাথে যোগযোগা করা সম্ভব হয়নি এমনকী ক্ষুদে বার্তা পাঠালে তারা উত্তর দেননি।
এমএসএম / এমএসএম
দু’জন উপদেষ্টার পদত্যাগ, ভোগাবে উপদেষ্টা পরিষদকে নতুন নিয়োগ অপরিহার্য
বিটিসিএল এর হিন্দু কর্মচারীকে চাঁদার দাবিতে বিশেষ অঙ্গ কেটে ভারতে পাঠানোর হুমকি
এনা পরিবহনের মালিক এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ১০৭ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা সিআইডি’র
অধরায় গৃহায়ণের প্রশাসক
অনিশ্চয়তায় নির্বাচন
পায়রা বন্দর সংযোগ সড়ক প্রকল্পে উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা
দুর্নীতির টাকায় কোটিপতি চসিকের মোরশেদ
রকিবুল হাসান রনি ও তার পরিবারের ভয়ঙ্কর প্রতারণার জাল
পাপ্পীর কানাডা ও আমেরিকার ভিসা বাতিলের আবেদন
আপিল বিভাগের নিদের্শনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ
ঘুষ কেলেংকারীতে ১৫ দিন খালি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের চেয়ার
ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এমডির বিচার চেয়ে ফের দুদকে আবেদন