ঝিনাইদহের রাবেয়া হাসপাতালের ভুল রিপোর্টে জীবন-সংসার হারাতে বসেছিলেন নারী
ঝিনাইদহের রাবেয়া হাসপাতালে (প্রাইভেট ক্লিনিক) একের এক অপচিকিৎসার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অপচিকিৎসা ও অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরের এই রাবেয়া হাসপাতাল। তার পরেও বহালতবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। গত রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঝিনাইদহ সদর থানায় এই রাবেয়া হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিকসহ ৩-৪ জনের নামে অভিযোগ করেছেন উপজেলার ধানহাড়িয়া গ্রামের শামসুর রহমানের ছেলে এনামুল হক। অভিযোগ সূত্র ও এনামুল হকের বক্তব্য মতে, ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে তার বোনকে অপারেশনের টেবিলে নিয়ে যাচ্ছিল ক্লিনিকের এমডি রানাসহ অন্য স্টাফরা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর এনামুল হকের বোন পারভিনার পেটে ব্যথা হলে রাবেয়া ক্লিনিকে ভর্তি করেন। ওই হাসপাতালের ডায়গনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে দেখানো হয় রাপটার্ড ইকটপিক প্রেগনেন্সি। হাসপাতালের এমডি রানা রোগীর স্বজনদের জানান, বাচ্চা টিউবের বাইরে চলে গেছে। অপারেশন না করলে রোগীকে বাঁচানো যাবে না। তিনি ৩০ হাজার টাকা ক্লিনিকে জমা দিয়ে দ্রুত অপারেশনের জন্য বলেন। কিন্তু ওই মহিলার স্বামী ৪-৫ বছরের বেশি সময় বিদেশ রয়েছেন। প্রেগনেন্সিগত সমস্যা নিয়ে পরিবারের কাছে বাধে বিপত্তি। চরিত্রের ওপর প্রশ্ন আসে। পারভিনার সাথে পরিবারের লোকজন কথা বলে নিশ্চিত হন তার প্রেগনেন্সিগত কোনো সমস্যা হতেই পারে না।
অভিযোগকারী এনামুল হকের বক্তব্য, তারা রাতে ১৫-১৬ হাজার টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা জোগাড়ের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। ক্লিনিক থেকে বলে ডা. কাফি এসে রোগী দেখে ব্যবস্তা নেবেন। এনামুল হক বলেন, আমার দুটা ভাগ্নে ছোট ছোট। তাদের বাবা মালয়েশিয়ায়। প্রথমে তারােই তার মায়ের সাথে ক্লিনিকে খোঁজখবর নিচ্ছিল। ক্লিনিকের লোকজন মনে করে স্বামী বিদেশে, অপারেশনের টাকার কথা বললে জোগাড় করে ফেলবে। কোনো সমস্যা হবে না। সে কারণে ভুল রিপোর্ট দিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা চালায়। এদিকে পরদিন পারভিনা খাতুনকে রাবেয়া ক্লিনিক থেকে রিলিজ করে সমতা ডায়গনস্টিক ও ডায়বেটিক হাসপাতালের ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে পুনরায় পরীক্ষা করা হলে তাদের রিপোর্টে অন্য বিষয় আসে। রোগীকে পরে ফরিদপুর মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বর্তমানে বিনা অপারেশনে সুস্ততার দিকে।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, রোগীর সাথে ভালো বুদ্ধিসম্পন্ন লোক না থাকায় ভুল রিপোর্ট দিয়ে অপারেশন টেবিলে নিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালের এমডি রানাসহ অন্যরা।
এ বিষয়ে ক্লিনিকের মালিক রানা বলেন, আল্ট্রাসোনোর ডাক্তার তার মন্তব্যের আগে দুটি জিজ্ঞাসা চিহ্ন দিয়েছেন। আমরা রোগীর কোনো স্বজনের কাছে বলিনি প্রেগনেন্সিগত সমস্যা। এ ধরনের রোগী ৮০% অপারেশন না করলে মারা যায়। ২০% বেঁচে যায়। কিন্তু রাবেয়া হাসপাতালের শুধু আল্ট্রাসোনো রিপোর্ট নয়, রক্তের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষাতেও ভুল রয়েছে এই রোগীর।
এদিকে অন্য এক সাংবাদিককে রানা বোঝানোর চেষ্টা করেন, ২০ বছর আগে মেলামেশা করলেও বাচ্চা অপরিপক্ষক্ব অবস্থায় আউটসাইডে থাকতে পারে। এই রোগীর তেমন সমস্যাও হতে পারে। এই রোগীর স্বজনরা আমার সাথে বেয়াদবি করেছে। অভিযোগ করে করুক, আমি থানাতেই ওদের মোকাবেলা করব।
এদিকে রানার কাছে আল্ট্রাসোনো রিপোর্ট করা ডাক্তার রেজেনা আহমেদের ফোন নাম্বার চাইলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, আমরা রাবেয়া হাসপাতালের নামে প্রায়ই অভিযোগ পেয়ে থাকি। দুবার বন্ধও করে দিয়েছি। আবার অনেকেই সুপারিশ করে চালু করতে। আমরা কোনো অনিয়ম সহ্য করব না। প্রেগনেন্সির ভুল রিপোর্টে একজন রোগী সামাজিকভাবে হেয় হতে পারে। আমরা দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
এদিকে প্রতি বছর কয়েকবার এই ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। কিন্ত দালাল সিন্ডিকেটের কারণে ও কম খরচের প্রলোভনে পড়ে এই ক্লিনিকেই রোগী ভর্তি হয়।
এমএসএম / জামান