ভিন্ন মতের শিকার: জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের দীর্ঘ প্রশাসনিক দুর্ভোগ

বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে ভিন্ন মত পোষণকারীদের জন্য কতোটা প্রতিকূল বাস্তবতা অপেক্ষা করে থাকে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে আছেন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান। এক দীর্ঘ প্রশাসনিক জীবনে তিনি যে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন, তা শুধু একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত দুঃখগাথা নয়—বরং রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্রের অস্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের নগ্ন চিত্র তুলে ধরে।
বিগত ১৫ বছর ধরে তিনি একের পর এক শাস্তিমূলক বদলি (Punishment Posting) এবং পদায়নের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। যোগ্যতা ও সততার কারণে তিনি যখন উন্নয়নমূলক কাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন, তখনই তাকে একের পর এক দূরবর্তী কিংবা অপ্রত্যাশিত স্থানে পাঠানো হয়েছে। অথচ দীর্ঘ এই সময়ে তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি, আসলে কোন অপরাধের জন্য তাকে এমন শাস্তি পেতে হলো।
অবশেষে তিনি যখন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হলেন, তখনও তার জন্য পরিণতি বদলায়নি। দায়িত্ব শেষে তাকেও করানো হলো ও.এস.ডি (Officer on Special Duty)—যা বাস্তবে একধরনের প্রশাসনিক নির্বাসন।বাংলাদেশের প্রশাসনে "প্যানিশমেন্ট পোস্টিং" নতুন কোনো বিষয় নয়। যেসব কর্মকর্তা ভিন্ন রাজনৈতিক মত পোষণ করেন, কিংবা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করেন না, তাদের অযাচিতভাবে দুরবর্তী জায়গায় বদলি করে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই বছরের পর বছর ধরে যোগ্য কর্মকর্তাদের প্রমোশন আটকে রাখা হয়।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের কাহিনী তারই একটি বাস্তব চিত্র। ১৫ বছর ধরে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছেন, যেখানে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও কাজের পরিবেশ ছিল অস্বস্তিকর। তিনি কখনো বুঝতেই পারেননি, তার প্রকৃত অপরাধ কী ছিল।প্রশাসনিক অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের বদলি কেবল ব্যক্তিগত শাস্তি নয়, বরং একধরনের মানসিক নির্যাতন। কারণ কর্মকর্তাদের কর্মোদ্যম ধ্বংস হয়ে যায় এবং জনসেবায়ও স্থবিরতা নেমে আসে।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ দেশের নগর উন্নয়ন ও জনস্বার্থে আবাসন ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা একজন কর্মকর্তার জন্য গৌরবের বিষয় হওয়ার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার জন্য সেই পদটি ছিল আরেকটি "ফাঁদ"।তিনি আবাসন খাতে স্বচ্ছতা, ন্যায়নীতি ও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। ফলে প্রভাবশালী গোষ্ঠী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। যদিও তিনি কোনো দুর্নীতি বা অনিয়মে অভিযুক্ত ছিলেন না, তারপরও তাকে অবশেষে ও.এস.ডি করে sidelined করা হয়।
প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব হাসান এই প্রসঙ্গে বলেন “বাংলাদেশের প্রশাসনে মেধা ও সততার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয় এবং সিন্ডিকেটের আনুগত্যই বেশি মূল্যবান হয়ে উঠেছে। যে কর্মকর্তা সিস্টেমের বাইরে গিয়ে সততা বজায় রাখেন, তাকে একসময় প্রশাসনিক ‘বহিষ্কৃত’ করে রাখা হয়। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের ঘটনা সেটিরই একটি নির্মম দৃষ্টান্ত।”
অন্যদিকে সাবেক সচিব আবুল কাসেম মন্তব্য করেন “১৫ বছর ধরে একজন কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক বদলির মধ্যে রাখা মানসিক নির্যাতনের শামিল। এতে শুধু ব্যক্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, গোটা প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে।”প্রশাসনের ভেতরে বছরের পর বছর ধরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয়। যারা কর্মকর্তাদের পদায়ন, প্রমোশন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগে অস্বচ্ছ প্রভাব খাটায়। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সখ্য না থাকলে বা তাদের স্বার্থে কাজ না করলে কর্মকর্তাদের জন্য অপেক্ষা করে বদলি, হয়রানি এবং শেষ পর্যন্ত ও.এস.ডি হওয়া।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানও এই সিন্ডিকেটের চাপে পড়েছিলেন বলে সহকর্মীদের ধারণা।যারা তার সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের মতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও স্বচ্ছ একজন কর্মকর্তা। একজন সহযোগী বলেন,“আমরা সবসময় দেখেছি তিনি নিয়মনীতি মেনে কাজ করেছেন। কখনো অযাচিত সুবিধা দেননি, বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন। হয়তো সেই কারণেই তাকে সহ্য করা হয়নি।”সাধারণ নাগরিকদের দৃষ্টিতে এ ধরনের ঘটনা কেবল একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং জনগণেরও ক্ষতি। কারণ, দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তারা sidelined হলে রাষ্ট্রীয় সেবা ব্যাহত হয়।
ঢাকার এক নাগরিক বলেন,“আমরা দেখি, যিনি কাজ করেন তিনিই শাস্তি পান। যারা দুর্নীতি করে, তারাই পদে পদে সুবিধা নেয়। এভাবে চলতে থাকলে দেশের উন্নয়ন কি করে হবে?”জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের দীর্ঘ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা একটি প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে বাংলাদেশের প্রশাসনে আসলেই কি সততা ও মেধার কোনো মূল্য আছে? নাকি ভিন্ন মত পোষণ করলেই একজন কর্মকর্তাকে বারবার শাস্তি ভোগ করতে হয়? যদি এ সংস্কৃতি চলতে থাকে, তবে দক্ষ কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবেন, আর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে পড়বে দুর্নীতিগ্রস্ত ও অকার্যকর।
এমএসএম / এমএসএম

ক্রীড়া পরিদপ্তরে ভয়াবহ লুটপাট

ভিন্ন মতের শিকার: জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের দীর্ঘ প্রশাসনিক দুর্ভোগ

রেলের “র” এর ষড়যন্তকারীরা আবারো সক্রিয়

ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত

দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিআরটিএ’র ৪ কর্মকর্তার সাজা মওকুফে তৎপরতা

নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্তে বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের চালান

ক্রীড়া পরিদপ্তরে ভয়াবহ লুটপাট!

৯২৬ টন পণ্যের হদিস নেই কাস্টমসে

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিমের পাহাড় সমান দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে না কেন?

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্পে অনিয়মের পাহাড়

সরকার উৎখাতে জড়িত এনবিআর কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি

সড়ক, জনপদ ও সেতু মন্ত্রণালয়ে মোটরযান পরিদর্শক রাকিবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ
