ঢাকা শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫

পর্ব- ২

ক্রীড়া পরিদপ্তরে ভয়াবহ লুটপাট


আলমগীর হোসেন ও আসাদুজ্জামান রনজু photo আলমগীর হোসেন ও আসাদুজ্জামান রনজু
প্রকাশিত: ২০-৯-২০২৫ রাত ১০:৪৫

এ যেন মগের মুল্লুক, দেখার কেউ নেই। গত ১৬ বছর যেভাবে মন চায় সেভাবে দুর্নীতি করে আংগুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া চক্রটির রাহুগ্রাস থেকে আজও মুক্ত হতে পারেনি দপ্তরটি। এই চক্র এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে উল্টো তাকেই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। ইতিমধ্যে তার প্রমাণও মিলেছে দৈনিক সকালের সময়'র অনুসন্ধানে। 

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অন্তর্গত ক্রীড়া পরিদপ্তরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন উপায়ে সরকারী অর্থ লুটেপুটে খাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক এস আই এম ফেরদৌস আলম (প্রশাসন ), মো, আলীমুজ্জামান (সংগঠন), মো, আজিম হোসেন, প্রধান সহকারী হাসান তারেক, স্টোর ইনচার্জ ফিরোজ হাসান, উচ্চমান সহকারী জামিল হোসেন ও পিএ নাসির উদ্দিনসহ আরও অনেকেই ।

ক্রীড়া পরিদপ্তরে অফিস প্রধানের অনুমতি ছাড়াই শুধু ৫ টি বিলে ১১ কোটি, ৪৮ লাখ, ৮ হাজার ১৩৬ টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাতের পাশাপাশি ঠিকাদারের সাথে যোগশাজস করে আরো একটি (১৬৪ নং বিল) বিলে ১ কোটি, ৪৭ লাখ, ৫ হাজার ১৫ টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে "বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ক্রয়কৃত ক্রীড়া সামগ্রীর বিল পরিশোধ সংক্রান্ত" ১১ কোটি, ৪৮ লাখ, ৮ হাজার ১৩৬ টাকার একটি বিল অফিস প্রধানের অনুমতি ছাড়াই পরিশোধ করার পর ফাইলটি গায়েবের চেষ্টা করা হয়। 

উপরোক্ত বিল পরিশোধের কাগজপত্রে অফিস প্রধানের কোন অনুমোদন বা স্বাক্ষর না থাকায়, বিষয়টি রহস্যজনক মনে হওয়ায় ক্রীড়া পরিদপ্তরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা ফাইলটি খুঁজতে থাকেন। অতঃপর সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত উল্লেখিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট ফাইলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা নানা রকম তালবাহানা করতে থাকে। কখনো বলেন ফাইল নাই, হারিয়ে গেছে ইত্যাদি। কিন্তু, ব্যাপক অনুসন্ধানের পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৪ তারিখে ফাইলটির সন্ধান মিলে একজন কর্মকর্তার গোপন হেফাজত থেকে। ধারণা করা হয়, 'ফাইলটি গায়েব করার উদ্দেশ্যেই ওই সিন্ডিকেটের একটা সদস্য গোপন করেছিল'- যাতে অফিস প্রধানের অনুমতি ছাড়াই ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৮ হাজার ১৩৬ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে থাকে বা জালিয়াতির বিষয়টি কেউ জানতে না পারে। 

ঘটনার এখানেই শেষ নেয়, ফাইলটি খুঁজে পাওয়া ওই কর্মকর্তার বদলির দাবিতে সিন্ডিকেটের সদস্যরা মিলে আন্দোলনে নামে, মানব বন্ধন করে।

নথিতে দেখা যায়, গত ১৩ জুন ২০২৩ তারিখে দাখিলকৃত ৫ টি বিল (যথাক্রমে বিল নং ১৬০, ১৬১, ১৬২, ১৬৩, ১৬৪) উপস্থাপন করেন উচ্চমান সহকারী জামিল হোসেন, একই তারিখে স্বাক্ষর করেন সহকারী পরিচালক আলীমুজ্জামান, উপ-পরিচালক এস আই এম ফেরদৌস আলম।
কিন্তু, ফাইলটি দেখে সন্দেহ হওয়ায় পরিচালক তা অনুমোদন  না করে ফেরত দেন।
পরবর্তীতে ২১ জুন ২০২৩ তারিখে একই ফাইল সহকারী পরিচালক এস আই এম ফেরদৌস আলম কর্তৃক স্বাক্ষর করে অফিস প্রধানের বরাবরে মার্ক করা হলেও তা অফিস প্রধানের কাছে উপস্থাপন করা হয়নি। বিলটি পরিক্ষান্তে যাচাইসহ অনুমোদন ও স্বাক্ষর করেন এস আই এম ফেরদৌস আলম নিজেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি একটি বিরল ঘটনা ও আর্থিক বিধি বিধানের মারাত্মক লংঘন।

উক্ত ৫ টি বিলের বিপরীতে মালামাল না পেয়েও স্টক রেজিস্ট্রারে ভুয়া এন্ট্রি দেখিয়েছেন সিন্ডিকেটের অন্যতম সহযোগী স্টোর কিপার ফিরোজ হাসান।

উক্ত বিলের চালানে স্বাক্ষর করেন মো জামিল (হিসাব রক্ষক), স্টোর ইনচার্জ ফিরোজ হাসান, সহকারী পরিচালক আজীম হোসেন, যাচাই করেছেন আলীমুজ্জামান আর বিলটি পাস করেছেন এস আই এম ফেরদৌস আলম। 

ঠিকাদার মালামাল সরবরাহের আগেই বুঝে পাওয়া অন্যদিকে, ১৬৪ নং বিলের চালান পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিউ ক্লাসিক স্পোর্টস এর সত্ত্বাধিকারী ইমাম হোসেন কর্তৃক দরপত্রের চাহিদা মোতাবেক লট-৪ এর ভলিবল ও হ্যান্ডবল সরবরাহ করা হয়েছে গত ১৭/০৭/২০২৩ তারিখে। অথচ, স্টার ইনচার্জ মো ফিরোজ হাসান উক্ত মালামাল বুঝিয়া পাইয়া  ভুয়া এন্ট্রি দেখিয়েছেন গতি ১৭/০৫/২০২৩ তারিখে। অর্থাৎ  ঠিকাদার মালামাল সরবরাহের ২ মাস আগেই স্টোর ইনচার্জ মালামাল বুঝে পেয়েছেন! মজুদ বহির (বহি নং ০১, পাতা নং ৭৩)। ঠিকাদার মালামাল সরবরাহের ২ মাস আগেই কি করে  ক্রীড়া পরিদপ্তরের স্টোর ইনচার্জ  ফিরোজ হাসান মালামাল বুঝে পেলেন বিষয়টি শুধু রহস্যজনকই নয়, রীতিমত জালিয়াতির বটে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, উপরোক্ত ভৌতিক এন্ট্রিকৃত মালামালের ১ কোটি, ৪৭ লাখ, ৫ হাজার, ১৫ টাকার বিলটি পরিক্ষান্তে ২১/০৬/২০২৩ তারিখে যাচাই করেছেন সহকারী-পরিচালক আলীমুজ্জামান আর অনুমোদন দিয়েছেন সহকারী পরিচালক এসআইএম ফেরদৌস আলম।
ইতোমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর সহকারী পরিচালক রুবেল হাসান ও উপসহকারী পরিচালক সুবিমল চাকমার নেতৃত্বে একটি টিম ক্রীড়া পরিদপ্তরে অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত টিম ঘটনার  প্রাথমিক সত্যতা পায় এবং সন্দেহজনক বেশ কিছু ফাইল জব্দ করে।
উল্লেখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কথা বলতে চাইলে এস আই এম ফেরদৌস আলম, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন), আলীমুজ্জামান, সহকারী পরিচালক (সংগঠন), তারেক হাসান, প্রধান সহকারী কথা বলতে  রাজি হননি।

এমএসএম / এমএসএম

আপিল বিভাগের নিদের্শনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ

ঘুষ কেলেংকারীতে ১৫ দিন খালি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের চেয়ার

ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এমডির বিচার চেয়ে ফের দুদকে আবেদন

উৎপাদন বেড়েছে, খরচ কমেছে, নতুন প্রকল্পে আশার আলো

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সকল সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তন করবে : জননেতা অধ্যাপক মামুন মাহমুদ

কারা অধিদপ্তরে সক্রিয় বদলী বাণিজ্য সিন্ডিকেট, মূলহোতা রিয়াল

দুদকের ফাঁদে ফেঁসে গেলেন এম এ কাশেম

দরপত্র খোলার আগেই ২.৫ কোটি টাকার চুক্তিতে কাজ নিশ্চিত করলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রুভেন বুল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক

বিআরটিএ-এর দালালি করে কয়েক কোটি টাকার মালিক

চট্টগ্রাম দিয়ে কখনই দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে চাইনি : রায়হান কবির

দেড় হাজার টাকা বেতনের সেই কর্মচারী এখন শতকোটি টাকার মালিক

ক্রীড়া পরিদপ্তরে ভয়াবহ লুটপাট

ভিন্ন মতের শিকার: জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের দীর্ঘ প্রশাসনিক দুর্ভোগ