ঢাকা রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সৎ বন্ধু নির্বাচনে সুন্দর জীবন


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৫-৯-২০২৫ সকাল ৯:৫৭

মানবজীবনে চলার পথে বন্ধুত্ব অপরিহার্য। প্রকৃত বন্ধু সেই যে সুখে-দুঃখে পাশে থাকে, আন্তরিকতায় একে অপরকে সমর্থন করে এবং সঠিক পথে পরিচালিত করে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক হবে দৃঢ় ও মজবুত। একজন ভালো বন্ধু মানুষকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে, আর খারাপ বন্ধু তার জীবন ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। সমাজে বন্ধুর হাতে বন্ধুকে হত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনাও ঘটে থাকে। তাই একজন মুসলমানের জীবনে সঠিক বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
সৎ বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্ব
বন্ধুর প্রভাব মানুষের জীবনে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েরা বন্ধু ও সমবয়সিদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। এ সময়েই তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে, যা ভবিষ্যৎ গঠন বা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অধিকাংশ অপরাধ, গুনাহ বা অন্যায় কাজ মানুষ করে থাকে পরিবেশ, প্রতিবেশী বা বন্ধুদের প্রভাবে; তবে বন্ধুদের প্রভাবই সবচেয়ে প্রবল। অসৎ সঙ্গ মানুষের অধঃপতনের প্রধান কারণ। বিপরীতে সৎ বন্ধুর সংস্পর্শ জীবনকে আলোকিত করে, সঠিক পথে পরিচালিত করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীন অনুসারে চলে। তাই প্রত্যেকেরই খেয়াল রাখা উচিত, সে কাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করছে।’ (সুনান আবু দাউদ : ৪৮৩৩; তিরমিজি : ২৩৭৮)
অসৎ বন্ধু নির্বাচনের জন্য আফসোস
কেয়ামতের দিন মানুষ অসৎ বন্ধুর কারণে অনুতপ্ত হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেদিন জালিম ব্যক্তি নিজের হাত কামড়ে বলবে, হায়! যদি আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সঠিক পথ অবলম্বন করতাম! হায় দুর্ভোগ! যদি অমুককে বন্ধু না বানাতাম! নিশ্চয়ই সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছে, যদিও আমার কাছে উপদেশ পৌঁছেছিল। শয়তান তো মানুষের মহাপ্রতারক।’ (সুরা ফুরকান : ২৭-২৮)
ইসলামে বন্ধু নির্বাচনের মূলনীতি
ইসলামে বন্ধুত্ব গড়ার জন্য কিছু মৌলিক শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন—১. মুমিন হওয়া; আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের প্রকৃত বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহর কাছে বিনম্র হয়। যারা আল্লাহ, রাসুল ও মুমিনদের বন্ধু, তারা আল্লাহর দলভুক্ত, আর আল্লাহর দলই বিজয়ী’ (সুরা মায়েদা: ৫৫-৫৬)। ২. সত্যবাদী হওয়া; কুরআনে এসেছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও’ (সুরা তওবা : ১১৯)। ৩. তাকওয়াবান ও সৎকর্মশীল হওয়া; আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সৎকর্ম করে’ (সুরা নাহল : ১২৮)। ৪. জালিম না হওয়া; কুরআনে এসেছে, ‘জালিমরা একে অপরের বন্ধু। আর আল্লাহ মুত্তাকিদের বন্ধু।’ (সুরা জাসিয়া : ১৯)
হজরত আলি (রা.)-এর উপদেশ
হজরত আলি (রা.) তার পুত্রকে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক করে বলেছিলেন—১. নির্বোধ ব্যক্তির সঙ্গ থেকে দূরে থাকো; কারণ সে মঙ্গল চাইলেও অজ্ঞতার কারণে ক্ষতি করে। ২. কৃপণ ব্যক্তির সঙ্গ এড়িয়ে চলো; কেননা প্রয়োজনে সে পাশে দাঁড়াবে না। ৩. পাপাচারীর সঙ্গ ত্যাগ করো; সে তোমাকে সামান্য স্বার্থে বিক্রি করে দেবে। ৪. মিথ্যাবাদীর সঙ্গ থেকেও দূরে থাকো; কারণ তার থেকে উপকারের আশা করা যায় না।
সন্তানদের বন্ধু নির্বাচনে অভিভাবকের দায়িত্ব
শিশু ও কিশোরদের বন্ধু নির্বাচনে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা জরুরি। পিতা-মাতা সন্তানকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেন—সন্তানের মনে যেন নেতিবাচক ধারণা জন্ম না নেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সরাসরি কাউকে খারাপ বলা যাবে না, তবে উত্তম চরিত্রের বন্ধুদের দিকে উৎসাহিত করতে হবে। বলা যেতে পারে, ‘অমুক ছেলেমেয়ের চরিত্র ভালো, পড়াশোনাতেও মনোযোগী। তুমি ওদের সঙ্গে থাকলে উপকৃত হবে।’ বন্ধু সন্তানের জীবনে প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করে। তাই শিশুদের শেখাতে হবে, কোন গুণাবলির ওপর ভিত্তি করে বন্ধুত্ব গড়তে হয়।
শেষ কথা
সুতরাং মুসলমানের উচিত এমন বন্ধু নির্বাচন করা যারা ঈমানদার, তাকওয়াবান, সত্যবাদী, বিশ্বস্ত, ন্যায়পরায়ণ, সৎকর্মশীল ও সহানুভূতিশীল। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর অবাধ্য, মিথ্যাবাদী, অনৈতিক কাজে লিপ্ত বা অসৎ চরিত্রের অধিকারী তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। জীবনের পথে সত্যিকারের বন্ধু হলো সেই, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সঙ্গ দেয় এবং সারাজীবন সৎকাজে সহযোগিতা করে। তাই আমাদের দায়িত্ব হলো ভালো বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখা এবং খারাপ বন্ধুত্ব থেকে সর্বদা দূরে থাকা।

Aminur / Aminur