ফজরের পর ঘুমালে বরকত কমে

সৃষ্টিকর্তা মানুষের জন্য দিনকে নির্ধারণ করেছেন কর্মের জন্য এবং রাতকে নির্ধারণ করেছেন ঘুমের জন্য। দিনভর কর্মক্লান্তির পর রাতের নীরব প্রহরে ঘুমের মধ্যে তিনি নিহিত রেখেছেন মানুষের মনের প্রশান্তি, শরীরের সুস্থতা ও কাজের উদ্যম। মানুষ দিনে কাজ করবে, পরিশ্রম করবে, ঘাম ঝরাবে এবং রাতে বিশ্রাম নেবে, ঘুমাবে- এটিই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। এর বিপরীত করলে ব্যক্তিজীবনে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। রাত ১০টা থেকে ফজর পর্যন্ত সময়টা ঘুমের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত সময়। ফজরের সময় থেকে মানুষের দেহের কোষগুলো সচল হয়ে ওঠে। এ সময় অলস শুয়ে থাকা স্বাস্থ্যের পক্ষে সুখকর নয়। তবে আমাদের জীবন বাস্তবতায় এ সময়টাই হয়ে উঠেছে ঘুম মগ্নতার সময়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদের ঘুমকে ক্লান্তি ঘোচানোর উপায় বানিয়েছি এবং রাতকে বানিয়েছি আবরণস্বরূপ।’ (সুরা নাবা : ৯-১০)
ঘুমের উত্তম সময়
এশার নামাজের পরপর ঘুমিয়ে পড়া সুন্নত। এশার নামাজের পর কালক্ষেপণ না করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া নবীজি (সা.)-এর সারাজীবনের আমল। এর নানাবিধ উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হলো ফজরের নামাজের জন্য পূর্ণ শক্তি ও চাঞ্চল্যতার সঙ্গে উঠতে সক্ষম হওয়া। তাই প্রিয় নবী (সা.) এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্প-গুজবে মেতে ওঠাকে বড়ই অপছন্দ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজের আগে ঘুমাননি এবং তারপর নৈশ আলাপ করেননি (ইবনে মাজা : ৭০২)। আবু মিনহাল (রহ.) থেকে বর্ণিত, ‘নবীজি (সা.) এশার পূর্বে ঘুমানো এবং পরে কথাবার্তা বলাকে একদম পছন্দ করতেন না’ (সহিহ বুখারি : ৫৯৯)।
কিছু মানুষ জরুরি কোনো কাজ না থাকার পরও অহেতুক রাত জাগরণ করে। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে মোবাইল ফোন স্ক্রল করতে করতে ২-৩ ঘণ্টা অনর্থক নষ্ট করে। আড্ডার আসর কিংবা টেলিভিশনের সামনে বসে ইত্যাকার অপ্রয়োজনীয় কাজে দীর্ঘ রাত কাটিয়ে দেয়; যা নববী আমল ও ইসলামের নির্দেশনার সম্পূর্ণ বিপরীত। তবে হ্যাঁ, ভালো কোনো কাজের জন্য এশার পর কিছুক্ষণ জাগ্রত থাকলে অসুবিধের কিছু নেই। যেমন বাড়িতে মেহমান এলে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করা, কথাবার্তা বলা, দ্বীনি আলোচনা করা ও পরিবার-পরিজনকে সময় দেওয়া ইত্যাদি।
ফজরের পর ঘুমানোর ক্ষতি
ফজরের নামাজের সময় ও আগে-পরে ঘুমানো সুন্নাহ পরিপন্থী ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ইসলাম ফজরের পরের এই সময়কে বিশেষ বরকতময় সময় হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সাখার আল-গামেদি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের ভোরবেলায় বরকত দান করুন’ (তিরমিজি : ১২১২)। বর্ণনাকারী বলেন, ‘এ জন্যই রাসুল (সা.) কোনো যুদ্ধাভিযানে সৈন্যদল প্রেরণের ইচ্ছা পোষণ করলে ভোরবেলায়ই প্রেরণ করতেন। তা ছাড়া সাখার (রা.) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনিও তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভোরবেলা থেকে শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয় এবং সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন’ (আবু দাউদ : ২৬০৬)। ফাতেমা (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার পাশ দিয়ে গেলেন। তখন সকাল, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তিনি পা দিয়ে আমাকে নাড়া দিলেন এবং বললেন, ‘মেয়ে আমার, ওঠো! তোমার রবের রিজিক বণ্টন দেখো! অলসতায় থেকো না। কারণ আল্লাহ তায়ালা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের রিজিক বণ্টন করেন’ (শুআবুল ইমান : ৪৪০৫)।
এ জন্য নবী করিম (সা.) ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত দোয়া-দরুদ ও জিকিরে মশগুল থাকতে উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সূর্যোদয় পর্যন্ত স্বীয় স্থানে বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে, এরপর দুই রাকাত ইশরাক নামাজ আদায় করে, তার জন্য একটি হজ ও একটি ওমরাহর পূর্ণ সওয়াব, পরিপূর্ণ সওয়াব।’ (তিরমিজি : ৫৮৬)
মনীষীদের দৃষ্টিতে সকালের ঘুম
পূর্বসূরি বুজুর্গ ব্যক্তিবর্গও ফজরের পর ঘুমানোকে মাকরুহ মনে করতেন। উরওয়া ইবনে জুবাইর (রহ.) বলেন, জুবাইর (রা.) তাঁর সন্তানদের ভোরবেলা ঘুমানোর ব্যাপারে নিষেধ করতেন। উরওয়া (রহ.) বলেন, ‘আমি যখন কারও ব্যাপারে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা : ৫/২২২)। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তাঁর এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন, ‘ওঠো, তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছো, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ (যাদুল মায়াদ : ৪/২৪১)। যান্ত্রিকতা, কথিত সভ্যতা আমাদের একে একে সুন্নাহ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জাহেল শ্রেণির কথা তো বাদই, যারা এই দ্বীনকে আঁকড়ে ধরে চলতে চান; যারা ফজরের সালাত আদায় করেন, তাদেরও ফজরের পর একটু চোখ না বুজলেই নয়। অথচ ওই সময়টাই হলো বরকত অবতরণের সময়। প্রাচুর্য বণ্টনের মুহূর্ত। তাই আমাদের সময়ে বরকত হয় না। জীবনে প্রাচুর্য নামে না। সুতরাং জীবনকে বরকত ও প্রাচুর্যময় করতে ফজরের পরের ঘুমকে না বলি। মহান আল্লাহ আমাদের
তওফিক দান করুন।
Aminur / Aminur

পরকালে মুক্তি পাওয়ার আমল

অজু করার ৭ ফজিলত

ফজরের পর ঘুমালে বরকত কমে

ফিতনার এই যুগে ঈমানের প্রকৃত নিরাপদ আশ্রয় হলো মদীনা

ছোট ছোট সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় অর্জন

হজ ও পবিত্র দুই মসজিদের ইতিহাস সংরক্ষণে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করছে সৌদি

মানুষের জীবনে তাড়াহুড়োর কুপ্রভাব

সৎ বন্ধু নির্বাচনে সুন্দর জীবন

শৈশবের ভুলও কি গুনাহ হিসেবে গণ্য হবে?

রাস্তার হক আদায়ে সওয়াব

উমাইয়া আমলের স্থাপত্য নান্দনিকতার নিদর্শন বহন করছে যে দুই মসজিদ

কথা না বলা যখন সওয়াবের
