ঢাকা শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫

পরকালে মুক্তি পাওয়ার আমল


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৪-১০-২০২৫ সকাল ৯:২৫

মানুষের পৃথিবীর জীবন মূলত পরকালের জীবন সমৃদ্ধ করার জন্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে এবং তোমাদের সবাইকে কেয়ামতের দিন (তোমাদের কর্মের) পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তখন যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। আর এই পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫)। সফলতার চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা অর্জন করা আল্লাহ তায়ালা অনেক সহজ করে দিয়েছেন। হাদিস শরিফে অনেক ছোট ও সহজ আমলের কথা বর্ণিত রয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ সহজেই জান্নাত লাভ করতে পারে।
আয়াতুল কুরসি পাঠ : প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ। আয়াতুল কুরসি পবিত্র কুরআনের প্রসিদ্ধতম একটি আয়াত। হাদিস শরিফে এই আয়াতকে কুরআনে শ্রেষ্ঠ আয়াত বলে ঘোষণা করা হয়েছে (মুসলিম : ১৩৯৬)। এ ছাড়া এই আয়াতের অনেক ফজিলত রয়েছে। আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে তাকে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু জান্নাতে যেতে বাধা দিতে পারবে না।’ (তাবরানি : ৭৫৩২)
সুন্নতে মুয়াক্কাদা আদায় : দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের আগে-পরে বারো রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা রয়েছে। এগুলো আদায় না করার ওপর যেমন তিরস্কার রয়েছে, তেমনি গুরুত্বসহ আদায়কারীদের জন্য বিশেষ ফজিলত রয়েছে। উম্মে হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাত-দিনের বারো রাকাত (সুন্নত) সালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করা হবে—জোহরের আগে চার রাকাত, এরপর দুই রাকাত, মাগরিবের পর দুই রাকাত, এশার পর দুই রাকাত, ভোরের সালাত ফজরের আগে দুই রাকাত।’ (তিরমিজি : ৪২৫; মুসলিম : ৭২৮)
পথের ময়লা দূর করা : ঈমানের ৭৭টি শাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বনিম্ন শাখা হলো, রাস্তাঘাট ও মানুষের চলাচলের পথ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরানো। হাদিসে এর অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একটি গাছ মুসলিমদের (পথ গমন করার সময়) কষ্ট দিত। এক ব্যক্তি এসে সে গাছটি কেটে ফেলল, এরপর সে জান্নাতে প্রবেশ করল।’ (মুসলিম : ১৯১৪)
ইস্তেগফার পাঠ : সকাল-সন্ধ্যা সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পাঠ করা। শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার হলো বান্দার এ দোয়া পড়া—‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাততু, আউযুবিকা মিন শা‌ররি মা সানাতু আবু-উ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবু-উ লাকা বিযানবি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুযযুনুবা ইল্লা আনতা, অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য আপনার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। আপনি আমার প্রতি আপনার যে নেয়ামত দিয়েছেন তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইস্তেগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যদি মারা যায়, সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া পড়ে নেবে আর ভোর হওয়ার আগেই মারা গেলে সে জান্নাতি হবে। (বুখারি : ৬৩২৩)
অজুর পর শাহাদাত পাঠ : উকবা বিন আমির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওজু করে এ দোয়া পড়বে—আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (মুসলিম : ২৩৪)
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি হাসিলের আশায় কোনো অসুস্থ লোককে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ঘোষক (ফেরেশতা) তাকে ডেকে বলতে থাকেন, কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময় তোমার এই পথ চলাও। তুমি তো জান্নাতের মধ্যে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে।’ (তিরমিজি : ২০০৮)
রাগ না করা : আবু দারদা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে বলেন, এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসুল (সা.) বললেন, রাগ করো না। তা হলে তোমার জন্য জান্নাত নির্ধারিত। (মুসনাদে আবু ইয়ালা : ১৫৯৩)

Aminur / Aminur