ঢাকা রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫

কারা অধিদপ্তরে সক্রিয় বদলী বাণিজ্য সিন্ডিকেট, মূলহোতা রিয়াল


এসএম পিন্টু photo এসএম পিন্টু
প্রকাশিত: ৫-১০-২০২৫ রাত ১২:১৩

কারা অধিদপ্তরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে কর্মরতদের বদলী বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। আর অধিদপ্তরের প্রিজনস সিকিউরিটি ইউনিটের ডেপুটি জেলার মো. জাকির হাসান রিয়াল এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আবার অনেকে তাকে বদলী বাণিজ্যের নায়ক হিসেবেও চিনেন বলে বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে। 
সূত্র জানায়, একসময়কার ছাত্রলীগের নেতা জাকির হাসান রিয়াল টাকার বিনিময়ে যে কাউকে বদলী হতে সহযোগিতা করে। সকল পোস্টিং বাণিজ্যের সাথে সে জড়িত। এছাড়া বাংলাদেশের সবগুলো কারাগারে পিআইইউ সদস্যদেরকে বিভিন্ন কারাগারে টাকার বিনিময়ে বদলীর ব্যাবস্থা করে থাকেন। কারাগারগুলোতে বদলীর ক্ষেত্রে আড়াই লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে থাকেন। কাসিমপুর(১-৪), ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জ কারাগারে বদলির জন্য বেশী টাকা নিয়ে থাকেন। আবার প্রতি কারাগারের পিআইইউ সদস্যদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা মাসোয়ারা আদায় করেন ডেপুটি জেলার জাকির হাসান রিয়াল। পিআইইউ সদস্যরা তার মাসোয়ারার টাকার যোগান দিতে কারাগারে নানারকম অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। অনেক সিনিয়র জেল সুপার লেবেলের কর্মকর্তাও তাদেরকে সমিহ করে চলে। সূত্র মতে, জাকির হাসান রিয়াল ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের প্রতি একান্ত অনুরক্ত। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সে কাশিমপুর কারাগার থেকে রাজবাড়ি কারাগারে বদলি যায়। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে সুপারিশ করিয়ে কয়েক মাসের ব্যবধানে দুইবার বদলি হয়ে লোভনীয় পিআইইউ এর দায়িত্ব বাগিয়ে নেয়। তার আগেও সে কারা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে। সে ঘুরেফিরে দীর্ঘদিন যাবৎ কারা অধিদপ্তর কেন্দ্রিক দায়িত্ব পালন করে আসছে। কারা বিভাগে যোগদানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে তাকে দূরে কোথাও কাজ করতে হয়নি। ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন অলিগলি সম্পর্কে তার জানা আছে। তাই হাজার কোটি টাকাওয়ালা আওয়ামী লীগাররা কারাগারে থাকার সময়ে পিআইইউ পদের গুরুত্ব সে ভালোভাবেই বুঝে যায়। ফ্যাসিবাদের আমল থেকেই দীর্ঘ অনেক বছর ধরে সে কারা অধিদপ্তরে তার কুপ্রভাব ধরে রেখেছে। বিভিন্ন সময় সুবিধাজনক বদলি প্রদানের জন্য সে সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে কাজ করে আসছে।  বর্তমানে সে সিন্ডিকেটের কালেক্টর হিসেবে কাজ করছে। 
জানা যায়, জাকির হাসান রিয়ালের বাড়ি রাজশাহীতে (গোদাগাড়ি)। চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ছাত্রলীগের সদস্য মাসুদ হাসান জুয়েলকে যখন ঢাকায় নেয়ার পরিকল্পনা হয়, তখন সে চট্টগ্রামে জেলার পদায়নে আবারো বাণিজ্যের সুযোগ লুফে নেয়। যোগাযোগ করে তার গোদাগাড়ির পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাড়ি ডেপুটি জেলার সৈয়দ শাহ শরীফের সাথে। পরস্পর আস্থাভাজন হিসেবে টাকার বিনিময়ে সৈয়দ শাহ শরীফকে বগুড়া জেলা কারাগার থেকে নিয়ে আসে সরাসরি গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বে। এভাবে গত এক বছরে চট্টগ্রাম জেলে দুইবার জেলার পদায়ন হয় এবং ঢাকা জেলেও দুইবার জেলার পদায়ন হয়। এ বাবদ সিন্ডিকেটের ৪ বার বাণিজ্য হয়। সৈয়দ শাহ শরীফ কাশিমপুরের মহিলা কারাগারের ডেপুটি জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী মক্ষিরাণীখ্যাত পাপিয়াকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বিতর্কিত হওয়ায় তাকে বদলি করে কারা কর্তৃপক্ষ। আর তাকেই দেয়া হলো চট্টগ্রাম জেলের দায়িত্ব। সম্প্রতি কক্সবাজারের জেলার আবু মুছাকে বদলি করে তার নিজের জেলা কুমিল্লার পাশে নোয়াখালিতে পদায়ন করা হয়েছে। যদিও স্বল্প বেতনভুক্ত কারারক্ষিদের কথায় কথায় বদলি করে দেয়া হচ্ছে দূরদূরান্তে। 
রিয়ালের নিজ বিভাগের নওগাঁর তারেক কামালের সুনাম না থাকলেও রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তাকে পদোন্নতি দিয়ে পোস্টিং দেয়া হয় নরসিংদী কারাগারে। যদিও নরসিংদী কারাগারের জেল সুপারের বদলির সময় হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলখানার দায়িত্বে ছিল জেলার জাকির। তার বাড়িও নওগাঁ। রিয়ালের বিশ্বস্ত লোক হিসাবে তাকে বসানো  হয়েছে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলের জেলারের পদে। যদিও তার বিরুদ্ধে চাঁপাইয়ে থাকাকালীন বন্দিদের পিসির টাকায় কমিশন বাণিজ্যের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে কারা অধিদপ্তরে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সদস্য মাসুদ হাসান জুয়েলের সাথে রয়েছে রিয়ালের সুসম্পর্ক। তাদের কাজেও মিল, নামেও মিল। মাসুদ হাসান জুয়েল, আর জাকির হাসান রিয়াল। সিন্ডিকেটের নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে আসার এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরাণীগঞ্জ) জেলার পদে বসানো হয়েছে মাসুদ হাসানকে। এ পোস্টিং হওয়ার বেশ কিছুদিন আগেই তার ঢাকা জেলের জেলার হিসাবে পদায়নের পরিকল্পনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে ফাঁস হয়ে যায়। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। সবাই ভেবেছিল পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সিন্ডিকেট তা থেকে পিছিয়ে আসবে। তবে মোটা টাকার ভাগাভাগিতে সিন্ডিকেট আর পিছিয়ে আসেনি। ভুয়া ঠিকানায় চাকরিসহ ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ হাসান জুয়েলের নানা অপকর্ম রিয়ালের গোয়েন্দা রাডারে ধরা পড়েনি। কারণ সে রাডার অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল। কেন একই ব্যক্তিকে বারেবারে প্রাইজ পোস্টিং দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে কারা অধিদপ্তর মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। অথচ সাধারণ অবস্থায় তার চাকরি থাকার কথা নয়। ভুয়া ঠিকানা দিয়ে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকুরি নেয়ার অপরাধে তার স্থান জেলখানায় বন্দি প্রকোষ্ঠে হওয়া উচিৎ। তাকে এ পর্যন্ত দেয়া বেতন-ভাতাও ফেরত নেয়া উচিৎ। বন্দি পালালেও তার বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো তাকে পুরস্কৃত করা  হয়েছে। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার তথাকথিত পুত্র ও শামীম ওসমানের আত্মীয়, আগের ফ্যাসিবাদের দোসর বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া পলাতক জেলার মাহবুবের পর এবার মাসুদ হাসান জুয়েল পরপর চট্টগ্রাম ও ঢাকার দায়িত্ব পেল। কারারক্ষি বদলির নীতিমালা আছে কিন্তু এসব আওয়ামী জেলার বদলির কোন নীতিমালা নেই। একটি মগের মুল্লুকের মতো অবস্থা করে রাখা হয়েছে। 
অন্যদিকে ঢাকার জেলার একেএএম মাসুমকে পদোন্নতি দিয়ে এআইজি বানিয়ে আওয়ামী দোসর জান্নাতুল ফরহাদ গংদের আড্ডাখানা কারা অধিদপ্তরে পদায়ন করা হয়েছে। জেলার মাসুম সম্পর্কেও ব্যাপক অভিযোগ আছে। কারাগারে সাধারণত কেউ জেলার থেকে জেল সুপার হলে তাকে প্রথমে দূরবর্তী কারাগারে পদায়ন করা হয়। তার ক্ষেত্রে এ নিয়মের বালাই নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সিন্ডিকেট যেকোনভাবে তাদের প্রভাব ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। তাদের সিন্ডিকেটের একচ্ছত্র আধিপত্যে বাগড়া দেয়ায় ঢাকা জেলের ডিপ্লোমা নার্স আফজালুর রহমানকে সিন্ডিকেট সদস্যরা চাকুরি থেকে সরিয়ে দেয়।
সূত্র জানায়, রিয়ালের সাথে সুসম্পর্ক রাখলে বানোয়াট তথ্যসমৃদ্ধ ভালো রিপোর্ট করে তাকে সুবিধা দেয়া হয়। পাশাপাশি কারা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভালো পোস্টিং দেয়া হয়। সহজেই পিআইইউ সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া যায়।  সুসম্পর্ক না রাখলে তার উপর নেমে আসে অত্যাচারের খড়গ। গত একবছরে শতশত পিআইইউ নিয়োগ ও পদায়নে জাকির হাসান রিয়াল সিন্ডিকেট মাথাপিছু ১ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি তাদের সিন্ডিকেট এর এক সদস্যের হঠাৎ মৃত্যুতে পুরো সিন্ডিকেট সাময়িকভাবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। অবশ্য মাত্র অল্প কয়েকদিনে তারা তা কাটিয়ে উঠে। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ না হলে তাকে পদে পদে হয়রানি করা হয়, এমনকি তাকে কারাগার এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয় যা আইনসিদ্ধ নয়। 
জানা যায়, গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সাথে ডেপুটি জেলার জাকির হাসান রিয়ালের পারিবারিক সংযোগ আছে এবং সম্পর্কে চাচা হয়। আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তার স্ত্রীর ছবিও এই প্রতিবেদকের হাতে আছে। সে চাচা যখন জেলে, তখন ভাতিজা কি তাকে সেবা না দিয়ে পারে?
সাম্প্রতিক ডেপুটি জেলার অর্পণ চৌধুরীকে কুমিল্লার ডেপুটি জেলার থেকে সরাসরি কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত জেলার পদে পদায়ন করা হয়। এই ডেপুটি জেলার ২০২৫ এর জুলাইয়ে বদলি হয়ে জয়পুরহাট কারাগার থেকে কুমিল্লা কারাগারে যোগদান করে। এতে স্পষ্ট হয়, তাকে কুমিল্লার জেলার পদে বসানোর বিষয়টি পূর্ব থেকেই পরিকল্পনাতে রাখা হয়। এটি আর্থিক বিনিময়ের মাধ্যমে হয়। ঢাকার ডেপুটি জেলার মো. দেলোয়ার জাহানকে সরাসরি কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেলার হিসেবে পদায়ন করা হয়। ইয়াবাখোর, মাদকাসক্ত ডেপুটি জেলার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন শেখকে দেখাসাক্ষাতে অনিয়ম করার কারণে কয়েক মাস আগে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রাজশাহীতে সংযুক্ত করা হয়। তার সংযুক্তির আদেশে স্পষ্ট তা উল্লেখ ছিল। আবার তাকেই ডেপুটি জেলার থেকে সম্প্রতি মেহেরপুর কারাগারের জেলার (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে পদায়ন করা হয়। 
এদিকে অনেক জেলার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও রিয়াল সিন্ডিকেটের সাথে সুসম্পর্ক না থাকায় পোস্টিং, পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপর দিয়ে কিছু ভাল কাজ দেখিয়ে গভীরে সিন্ডিকেটের কাজ পুরোদমে চলছে।
রিয়াল কারা গোয়েন্দা বিভাগের মূল দায়িত্বে থাকাকালীন গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে যত অঘটন ঘটেছে তার কোনটাই সে বা তার সিন্ডিকেট ঠেকাতে পারেনি। কারণ তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাণিজ্য। কারাগারের নিরাপত্তা তাদের কাছে মুখ্য নয়। একজন সাবেক ডিআইজি প্রিজন্সও তাদের এই হয়রানি থেকে রেহাই পাননি। তাদের কর্মকান্ডের ফলে বিভিন্ন কারাগারে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে। কিছুদিন আগে পাবনা, তার আগে ঢাকা জেলে বন্দি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাদের মানসিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নিজ বিভাগের বাইরে বদলি হওয়া একজন কারারক্ষি কয়েক মাস আগে আত্মহত্যা করে। ঢাকার অদূরে গাজীপুর কারাগারে সার্জেন্ট ইন্সট্রাকটার ফয়েজ উদ্দীনের অপকর্মে অতিষ্ঠ ছিল বন্দি ওমর ফারুক। এতে কারো ভ্রূক্ষেপও ছিল না। ওমর ফারুক তাকে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে খুলি ফাটিয়ে ফেলে। পরে তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। পরে ঐ বন্দি ১১ ফেব্রুয়ারি আত্মহত্যা করে। কিশোরগঞ্জ কারাগারে প্রধানরক্ষী রোকনুজ্জামানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কারারক্ষিরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার  হাত ও পা ভেঙ্গে দেয়। কাশিমপুর কারাগারে মাদক সরবরাহ করতে গিয়ে ধরা পড়ে কারারক্ষি কাফিন মৃধা, যে দীর্ঘদিন ধরে মাদক সরবরাহ করে আসছিল। ঢাকার কাছের এই কারাগারগুলির দিকেও নজর নেই কারা গোয়েন্দাদের।  চট্টগ্রাম জেলখানায় বন্দি পালানোও তার লক্ষণ বটে। কয়েক মাস আগে কুমিল্লা কারাগারে পেরিমিটার ওয়ালের উপরে উঠে বন্দি পালানোর উপক্রম হয়েছিল। কোনমতে সে ধরা পড়ে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সিলেট কারাগারে কারারক্ষিদের কাছ থেকে বুলেট খোয়া যায়, যা পরে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করা হয়। তাদের নজর এসব মূল নিরাপত্তার দিকে মোটেও নেই। গোপালগঞ্জ কারাগারে সাম্প্রতিক আক্রমণের সময়ও এই সিন্ডিকেট কোন পূর্ব সতর্কতা দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে কারাগারগুলির নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

কারা বিভাগে নিশ্চয়ই অভিজ্ঞ দক্ষ ডেপুটি জেলার ও জেলার আছে। কাউকে নিয়ে বারেবারে প্রশ্ন উঠলে তাকে সরিয়ে দিতে কোথায় অসুবিধা তা নিয়ে সঙ্গত কারণে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাকে সরালে সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হাতছাড়া হবে। তাছাড়া নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে সময় লাগবে। বাণিজ্যে ভাটা পড়বে। মূলত তাকে না সরানোর এটাই কারণ। জাকির হাসান রিয়ালের কাজের দায় কারা অধিদপ্তর এড়াতে পারে না। সিন্ডিকেটের দায়ও তাদের। আগামী নির্বাচনের আগে এ সিন্ডিকেট না ভাঙ্গলে কারাগারগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের আরো সচেতন হওয়া উচিত বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন
সূত্র জানায়, দেশের কারাগারগুলোর একক নিয়ন্ত্রণ করছে রিয়াল, কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী রিয়াল সিন্ডিকেটের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তার কথাই শেষ কথা আর যদি কেউ সিন্ডিকেটের সিস্টেম মানতে নারাজ হয় তবে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্ট তৈরি করে হয়রানি করা হয়। করা হয় শাস্তিমূলক বদলী। কারাগারে যারা সৎভাবে কাজ করেন তাদেরকেই টার্গেট করেন রিয়াল ও তার দোসররা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা চলছে সমানতালে। অনেকেই বলছেন, পিআইইউ সিন্ডিকেটের সাজানো মিথ্যা রিপোর্টের নামে আজ সৎ ও পরিশ্রমী কারারক্ষীদের অন্যায়ভাবে ডিভিশনের বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে-এটাই প্রমাণ করে কারা ব্যবস্থার ভেতরে কী ভয়াবহ দুঃশাসন চলছে। আসল সত্য হলো-কারাগারে যারা দায়িত্বশীল ও সৎভাবে কাজ করেন, তারাই টার্গেটে পড়েন। ডেপুটি জেলার জাকির হাসান রিয়াল ও তার দোসর পিআইইউ সিন্ডিকেট মিথ্যা রিপোর্ট বানিয়ে নিরীহদের ক্ষতিগ্রস্ত ধ্বংস করছে, অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয় না কোন ব্যবস্থাও নেয়া হয়না।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ হাসান জুয়েলের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলীর বিষয়টি নিয়ে কারা দপ্তরে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তার দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে দৈনিক সকালের সময়সহ একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন জাকির হোসেন রিয়েল। এসব সংবাদ প্রকাশের পেছনে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী মো. হামিদুরকে সন্দেহ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঢাকা থেকে সে কয়েকজন পিআইইউ সদস্যকে নিয়ে হাইসে করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে যান এবং কারারক্ষি হামিদুর রহমাসকে সন্দেহ করে ট্রাংক থেকে তার ব্যাবহৃত ২টি মোবাইল সেট সিমসহ জব্দ করে নিয়ে চলে যান। এই বিষয় নিয়ে রিয়ালের কাছে জানতে চাইলে অফিসিয়াল কারণ দেখিয়ে হামিদুরকে অন্যত্র বদলী করে দেন।
জানা যায়, গতবছরের ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ মাসুদ হাসান জুয়েল এবার জাকির হোসেনের সহায়তায় মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে ঢাকা কেন্দীয় কারাগারের জেলারের পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। 
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী মো. হামিদুর রহমানের মোবাইল জব্দ করার বিষয়টি স্বীকার করে কারা অধিদপ্তরের প্রিজন সিকিউরিটি ইউনিটের ডেপুটি জেলার মো. জাকির হাসান রিয়াল বলেন, ”হামিদুলের মোবাইল জব্দ করার সাথে জেলার মাসুদ হাসানের নিউজের কোন সম্পর্ক নেই, অন্য একটি বিষয়ে তার মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।” তবে কি কারণে জব্দ করা হয়েছে তাও স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি। বদলী বাণিজ্য ও নিয়মিত মাসোয়ারার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ”আমি কোন বদলী বাণিজ্যের সাথে জড়িত নই, একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। আমি ভালো কাজ করছি বলে কারো কারো সহ্য হচ্ছে না তাই আমাকে সরাতে চাইছে।”

Aminur / Aminur

কারা অধিদপ্তরে সক্রিয় বদলী বাণিজ্য সিন্ডিকেট, মূলহোতা রিয়াল

দুদকের ফাঁদে ফেঁসে গেলেন এম এ কাশেম

দরপত্র খোলার আগেই ২.৫ কোটি টাকার চুক্তিতে কাজ নিশ্চিত করলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রুভেন বুল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক

বিআরটিএ-এর দালালি করে কয়েক কোটি টাকার মালিক

চট্টগ্রাম দিয়ে কখনই দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে চাইনি : রায়হান কবির

দেড় হাজার টাকা বেতনের সেই কর্মচারী এখন শতকোটি টাকার মালিক

ক্রীড়া পরিদপ্তরে ভয়াবহ লুটপাট

ভিন্ন মতের শিকার: জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের দীর্ঘ প্রশাসনিক দুর্ভোগ

রেলের “র” এর ষড়যন্তকারীরা আবারো সক্রিয়

ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত

দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিআরটিএ’র ৪ কর্মকর্তার সাজা মওকুফে তৎপরতা

নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্তে বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের চালান

ক্রীড়া পরিদপ্তরে ভয়াবহ লুটপাট!