আত্মা যেভাবে শক্তিশালী হয়

মানুষ শরীর ও আত্মার সমন্বিত সত্তা। যদি কারও শরীর শক্তিশালী হয়, কিন্তু আত্মা দুর্বল হয় তা হলে সে একসময় আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়। পক্ষান্তরে যার আত্মা শক্তিশালী, সে বেঁচে থাকে অনেক দিন। তার থেকে পৃথিবীবাসী উপকৃত হয়। কারণ সে বেঁচে থাকার শক্তি সংগ্রহ করে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে। জিকির বা আল্লাহর স্মরণ এমন একটি শক্তির উৎস, যার মাধ্যমে দ্রুত আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়। মহান প্রতিপালকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের এটি একটি অব্যর্থ পন্থা। জিকির আল্লাহর নৈকট্য লাভের শক্তিশালী উপায়।
জিকির সব ইবাদতের প্রাণ : ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত হচ্ছে সালাত। সালাতের মাধ্যমেই মুমিন ও কাফেরের পার্থক্য স্পষ্ট হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর স্মরণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি আমার স্মরণের উদ্দেশে সালাত কায়েম করো’ (সুরা তোহা : ১০)।
একইভাবে সিয়াম, জাকাত, হজ ও জিহাদ নামক ইবাদতের মূল প্রাণ হলো আল্লাহকে স্মরণ করা। এসব ইবাদতের মাধ্যমেও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। তবে এসব ইবাদতে যদি আল্লাহর স্মরণ ও সন্তুষ্টি না থাকে তা হলে ফরজ আদায় হয় ঠিকই কিন্তু আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় না। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতা জরুরি। আর জিকির ছাড়া এ বিষয়টি থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অন্তরের খাদ্য জিকির : পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাবার খেতে হয়। পানি দিয়ে পিপাসা মেটাতে হয়। মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো রুহ। এটি সুস্থ থাকলে পুরো দেহ সুস্থ থাকে। আর এই রুহের খাবার হচ্ছে আল্লাহর জিকির। যার অন্তরে যতবেশি জিকির, তার অন্তর ততবেশি সুস্থ। যার অন্তর যতবেশি সুস্থ, তার অন্তর ততবেশি হেদায়েতপ্রাপ্ত। আর হেদায়েতপ্রাপ্ত অন্তরগুলোই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে বেশি ধন্য হয়।
আল্লাহর স্মরণ : বান্দা যখন জিকির করে, আল্লাহ তায়ালাও তখন তাকে স্মরণ করেন। আবু উসমান (রহ.) একদা তার ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, আমি এমন এক সময়ের কথা জানি যখন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই তার বান্দার জিকির করেন। তোমরা কি সে সময়ের কথা জানো? সবাই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। কেউই জবাব দিতে পারল না। আবু উসমান (রহ.) বললেন, তোমরা কি এই আয়াত শ্রবণ করোনি? ‘তোমরা আমার জিকির করো, তবে আমিও তোমাদের জিকির করব’ (সুরা বাকারা : ১৫২)। এটাই হচ্ছে সেই সময় যার কথা আমি বললাম। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ঘোষণা করেন, আমি সে রকমই, যে রকম বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি বান্দার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি সে জনসমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি’ (বুখারি : ৭৪০৫)। হাদিসে আরও এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি আমার বান্দার সঙ্গেই থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে এবং তার দুই ঠোঁট নড়ে।’ (ইবনে মাজা : ২৯)
আল্লাহর নৈকট্য লাভ : জিকিরের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর একদম নিকটবর্তী হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালাও বান্দার নিকটবর্তী হন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি বান্দার সঙ্গে তাই করি, সে যেমনটি আমার ব্যাপারে ধারণা করে। সে যখন আমাকে একান্তে জিকির করে, আমিও তাকে একান্তে স্মরণ করি। সে যখন কোনো মজলিসে আমার জিকির করে, আমি তার চেয়ে অনেক উত্তম মজলিসে তার কথা আলোচনা করি। আমার বান্দা যখন আমার দিকে এক বিঘত ধাবিত হয়, আমি তখন তার দিকে এক হাত ধাবিত হই। আর সে যখন আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, আমি তখন তার দিকে দুই হাত এগিয়ে আসি। সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’ (বুখারি : ৭৫৩৬)
জীবিত মানুষের উদাহরণ : অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় জিকিরের মর্যাদা ও ফজিলত অনেক। এটি এমন এক ইবাদত যার দ্বারা অন্তর সজীব হয়। হাদিসে এসেছে, ‘যে জিকির করে আর যে জিকির করে না, তাদের উপমা হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো’ (বুখারি : ৬৪০৭)। এ হাদিসে রাসুল (সা.) জিকিরকারীকে জীবিত আখ্যা দিয়েছেন। আর যারা জিকির করে না তাদের মৃত বলেছেন। হাদিসে আরও এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হালকা-পাতলা লোকেরা অগ্রগামী হয়ে গেছে। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! হালকা-পাতলা লোক কারা? তিনি বলেন, যেসব লোক আল্লাহ তায়ালার স্মরণে নিমগ্ন থাকে এবং আল্লাহর জিকির তাদের (পাপের) ভারী বোঝাটি তাদের থেকে সরিয়ে ফেলে। ফলে কেয়ামাতের দিন তারা আল্লাহ তায়ালার সামনে হালকা বোঝা নিয়েই হাজির হবে’ (তিরমিজি : ৩৫৯৬)। হাশরের মাঠে আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। সেদিন সাত শ্রেণির লোক আরশের নিচে ছায়া পাবে। তন্মধ্যে এক শ্রেণি হলো ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে এবং দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।’ (বুখারি : ৬৪০৪)
সার্বক্ষণিক করণীয় আমল : জিকির শব্দটি ব্যাপক। দ্বীনি ইলম অর্জন, কুরআন তেলাওয়াত ও তসবিহ-তাহলিল সবই জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। জিকিরের মজলিস বলতে সাহাবায়ে কেরাম ইলমের মজলিস বুঝতেন। তা ছাড়া আমরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর, সকাল-সন্ধ্যায় ও বিভিন্ন উপলক্ষে যেসব দোয়া পড়ি সেগুলোও জিকিরের অন্তর্ভুক্ত (আল-আযকার লিননববী)। এ সময়গুলো ব্যতীত বাকি সময় মুখে মুখে আল্লাহর নাম জারি রাখা যায়। সর্বদা জিকির করা খুবই সহজ। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর জিকির করতেন (মুসলিম : ৭১২)। জন্যই তাঁর উম্মতও যেন সর্বদা জিকিরে রত থাকে সে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমার জবান যেন সর্বদা জিকিরে সিক্ত থাকে।’ (তিরমিজি : ৩৩৭৫)।
আল্লাহ পাকের জিকিরের মাধ্যমে আমরা সহজেই তাঁর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারল, সেই সফলকাম। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন।
Aminur / Aminur

আত্মা যেভাবে শক্তিশালী হয়

আসমাউল হুসনা: গুরুত্ব ও ফজিলত

মৃত্যুর সময় অবিশ্বাসীরা যে আফসোস করবে

পরকালে মুক্তি পাওয়ার আমল

অজু করার ৭ ফজিলত

ফজরের পর ঘুমালে বরকত কমে

ফিতনার এই যুগে ঈমানের প্রকৃত নিরাপদ আশ্রয় হলো মদীনা

ছোট ছোট সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় অর্জন

হজ ও পবিত্র দুই মসজিদের ইতিহাস সংরক্ষণে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করছে সৌদি

মানুষের জীবনে তাড়াহুড়োর কুপ্রভাব

সৎ বন্ধু নির্বাচনে সুন্দর জীবন

শৈশবের ভুলও কি গুনাহ হিসেবে গণ্য হবে?
