প্রেরণার উৎস দুই কিশোর সাহাবি

দ্বিতীয় হিজরিতে সংগঠিত হয় ঐতিহাসিক বদরযুদ্ধ। এটা ছিল হক ও বাতিলের প্রথম লড়াই। এই যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় কম ছিল। তবুও আল্লাহর সাহায্যে তারা বিজয় লাভ করেছিলেন। এ যুদ্ধে প্রাপ্তবয়স্ক সাহাবিদের সঙ্গে কিশোর সাহাবিরাও অংশ নিয়েছিলেন অসীম সাহস ও প্রেরণার প্রতীক হয়ে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং সত্য প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার তাদের অন্তরে এমন আগুন জ্বালিয়েছিল যে বয়সের সীমাবদ্ধতা তাদের রুখতে পারেনি।
আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি বদরের দিন যুদ্ধসারিতে অবস্থান করছিলাম।
এমন সময় আমি আমার ডান ও বাঁ-দিকে তাকিয়ে দেখি যে, আমি দুজন আনসারি তরুণের মাঝে আছি। আমি তখন আশা করেছিলাম, যদি আমি দুজন শক্তিশালী যুবকের মাঝে থাকতাম। এমন সময় তাদের একজন আমাকে ইঙ্গিতে বলল, হে চাচা, আপনি কি আবু জাহেলকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তবে তাকে দিয়ে তোমার কী প্রয়োজন? সে বলল, আমি জেনেছি সে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে গালাগাল করে। সেই আল্লাহর শপথ, যার হাতে আমার জীবন, যদি আমি তাকে দেখতে পাই তবে অবশ্যই আমার দেহ তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না- যতক্ষণ না আমাদের দুজনের মধ্যে যার মৃত্যু পূর্বে হওয়া অবধারিত তার মৃত্যু হয়। বর্ণনাকারী বলেন, কিশোরের এই কথা শুনে আমি অবাক হলাম। তারপর অন্য কিশোর আমার দিকে ইঙ্গিত করে অনুরূপ কথা বলল। পরে বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি, হঠাৎ আমি দেখলাম আবু জাহেল লোকদের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, আমি তখন কিশোর দুজনকে বললাম, এই সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসা করেছ। তারা উভয়ে দৌড়ে গিয়ে তাদের তলোয়ার দ্বারা তাকে আঘাত করল এবং হত্যা করে ফেলল। অতঃপর উভয়েই ফিরে এসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এই ঘটনার সংবাদ দিল।
তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের মধ্য থেকে কে হত্যা করেছে? দুজনই বলল, আমি তাকে হত্যা করেছি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের তলোয়ার কি মুছে ফেলেছ? তারা তখন বলল, না। তখন তিনি উভয়ের তলোয়ার পরীক্ষা করে দেখলেন। তারপর বললেন, তোমরা উভয়েই তাকে হত্যা করেছ। অতএব তিনি মুআজ ইবনে আমর ইবনে জামুহকে সালাব প্রদানের নির্দেশ দেন। আর সেই দুই ব্যক্তি হলেন- মুআজ ইবনে আমর ইবনে জামুহ এবং মুআজ ইবনে আফরা (রা.) (মুসলিম, হাদিস : ১৭৫২)। এই হাদিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শিক্ষা ও উপদেশ পাওয়া যায়।
ঈমানই আসল শক্তি : মুমিনের প্রকৃত শক্তি হচ্ছে ঈমান। এটাই তাকে অপরাজেয় করে তোলে। মুআজরা বয়সে কিশোর ছিল কিন্তু ঈমানের শক্তিতে তারা হয়ে উঠেছিল বীর সেনানী। এ ঘটনা প্রমাণ করে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরাই নয় বরং কিশোররাও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রাখতে পারে।
নবীপ্রেম মুমিনের প্রেরণা : মুমিন হৃদয়ে রাসুলপ্রেমই সর্বশ্রেষ্ঠ অনুপ্রেরণা। নবীর সম্মান রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করা ঈমানের পরিপূর্ণতার পরিচায়ক। দুই কিশোর সাহাবি ইসলামের বড় দুশমন আবু জাহেলকে হত্যার কারণ ছিল নবীপ্রেম। নবীজিকে গালি দেওয়া এবং কষ্ট দেওয়া তারা মানতে পারেনি।
যুবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য : ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তরুণ-যুবকরাই যুগে যুগে পরিবর্তন এনেছে। বিপ্লব ঘটিয়েছে। বদরের দুই কিশোর আজকের যুবকদের স্মরণ করিয়ে দেয় দেশ, জাতি ও দীন রক্ষায় তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। এখন যৌবন যার, দায়িত্ব পালনের শ্রেষ্ঠ সময় তার।
ন্যায়ের পথে অটল থাকা : সত্য ও ন্যায়ের পথে ভয় পাওয়া যায় না বরং সাহসী হতে হয় এবং আত্মত্যাগে প্রস্তুত থাকতে হয়। কিশোর সাহাবিরা শেখায় জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় আত্মোৎসর্গের মধ্যেই রয়েছে মানুষের প্রকৃত অমরত্ব।
Aminur / Aminur

পাপের সূচনা হয় যেভাবে

ঈমান ও কুফর নির্ণয় হয় নামাজে

ইসলামী বইমেলার সময় বাড়ল

নারীদের জ্ঞানচর্চায় ইসলামের তাগিদ

হৃদয়-হৃদ্যতার সেতুবন্ধ হাদিয়া

অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা থেকে মুক্তির উপায়

প্রেরণার উৎস দুই কিশোর সাহাবি

আত্মা যেভাবে শক্তিশালী হয়

আসমাউল হুসনা: গুরুত্ব ও ফজিলত

মৃত্যুর সময় অবিশ্বাসীরা যে আফসোস করবে

পরকালে মুক্তি পাওয়ার আমল

অজু করার ৭ ফজিলত
