ঢাকা রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

হৃদয়-হৃদ্যতার সেতুবন্ধ হাদিয়া


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৯-১০-২০২৫ দুপুর ১০:৫১

মানবিক বন্ধন ছাড়া শান্তির সমাজ গঠন করা অসম্ভব। হৃদ্যতাপূর্ণ সমাজ গড়তে হলে অবশ্যই মানুষের মাঝে সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। ইসলাম কখনো আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করাকে সমর্থন করে না। ইসলাম চায় মানুষ পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে জীবনযাপন করুক। এটাই ইসলামি সভ্যতার শিক্ষা। আর পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষার অনেক পাথেয় ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম পন্থা হলো হাদিয়া আদান-প্রদান করা। হাদিয়া শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ হলো উপঢৌকন, উপহার ও সম্মানী। মানুষ একে অপরকে হাদিয়া বা উপঢৌকন প্রদান করার কারণে তাদের মধ্যে এক অনন্য বন্ধন সৃষ্টি হয়। সম্পর্কটা দৃঢ়-অটুট হয়। 
হাদিয়া দানের মাধ্যমে দূরের আত্মীয়ও কাছের হয়ে যায়। এমনকি শত্রুও আত্মার আত্মীয়ে পরিণত হয়। উপঢৌকনে রয়েছে এক জাদুকরী শক্তি। হাদিয়া আদান-প্রদান নবীজি (সা.)-এর অনুপম আদর্শ ও সুন্নত। তবে হাদিয়া আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বৈধ পন্থায় বৈধ জিনিস হওয়ার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। শরিয়ত নির্দেশিত তরিকায় হতে হবে। আর হাদিয়া আদান-প্রদান কোনো খানকাহ-দরবার, পীর-বুজুর্গ বা বড় আলেমের মধ্যে সীমাদ্ধ নয়। এটি আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, জ্ঞানী-গুণী, মাতাপিতা-সন্তানাদি, ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যেও হতে পারে।
হাদিয় দান সুন্নত : হাদিয়া দান নবীজি (সা.)-এর একটি মহৎ সুন্নত। এ আমলে হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত হয় এবং ভ্রাতৃত্ববোধের জন্ম নেয়। তবে হাদিয়া গ্রহণ সহজ কাজ হলেও কিন্তু হাদিয়া দান একটি কঠিন বিষয়। কারণ মানুষ সাধারণত হাদিয়া নিতে অভ্যস্ত হলেও প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। সুতরাং হাদিয়া দানে অভ্যস্ত হওয়া উচিত। হাদিয়া দান আন্তরিকতার শ্রেষ্ঠ উপায়। এটা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও হৃদ্যতা অর্জনের অনন্য হাতিয়ার। চাই হাদিয়াটি বড় হোক কিংবা ছোট হোক। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা একে অপরকে হাদিয়া দাও। কেননা হাদিয়া অন্তরের বিদ্বেষ দূর করে। এক প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীকে ছাগলের খুরের টুকরা হলেও তা হাদিয়া দিতে যেন তুচ্ছ মনে না করে। (তিরমিজি : ২২৭৭)
হাদিয়া গ্রহণ সুন্নত : রাসুল (সা.)-এর দরবারে হাদিয়া এলে তা নির্দ্বিধায় গ্রহণ করতেন। হাদিয়াদাতা ধনী নাকি গরিব আর হাদিয়াটা ছোট জিনিস নাকি বড় তা নিয়ে নবীজি (সা.) কখনো আপত্তি করতেন না। বর্তমান সমাজে কিছু মানুষকে হাদিয়ার ক্ষেত্রে ধনী-গরিব এবং ছোট-বড় ভেদাভেদ করতে দেখা যায়। মূলত এটি হাদিয়া আদান-প্রদানে দাম্ভিকতা ও অবমূল্যায়নের বহিঃপ্রকাশ। এতে হাদিয়াদাতা বা হাদিয়া গ্রহীতার মনে কষ্ট পাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। এমন করা অন্যায়। সাধারণত হাদিয়া গ্রহণ করা এবং হাদিয়াদাতার শুকরিয়া আদায় করা উচিত। এটাই হলো ইসলামের শিক্ষা। হাদিসে আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) হাদিয়া কবুল করতেন এবং এর বদলা দিতেন (বুখারি : ২৬২৩)। রাসুল বলেন, কারও কাছে তার মুসলিম ভাইয়ের পক্ষ থেকে যদি কোনো হাদিয়া আসে, অথচ তার প্রতি তার কোনো কামনা নেই—এ ক্ষেত্রে তা ফিরিয়ে না দিয়ে সে যেন তা গ্রহণ করে। কারণ এটা এমন রিজিক, যা আল্লাহ তায়ালা তার জন্য ব্যবস্থা করেছেন। (আহমদ : ১০০৫)
হাদিয়া আদান-প্রদানে বিধিনিষেধ : হাদিয়া আদান-প্রদানে অবশ্যই বৈধ-অবৈধ কি না তা যাচাই-বাছাই করতে হবে। প্রত্যেক হাদিয়া গ্রহণযোগ্য নয়, আবার প্রদানযোগ্যও নয়। এ ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধিনিষেধ মানতে হবে। নবী করিম (সা.) স্বয়ং হাদিয়া আদান-প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন করতেন। অনেক সময় নবীজি (সা.) যৌক্তিক কারণে হাদিয়া ফেরত দিয়েছেন। আমাদেরও হাদিয়া আদান-প্রদানে শরিয়ত নির্দেশিত শর্তাবলির প্রতি লক্ষ রাখা। হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) আবওয়া নামক স্থানে ইহরাম থাকার সময় এক ব্যক্তি একটি বন্য গাধা হাদিয়া দিলে তিনি ফেরত দেন। এতে লোকটি মন খারাপ করলে তিনি বলেন, আমরা হাদিয়া ফেরত দিই না। কিন্তু ইহরাম অবস্থায় থাকার কারণে ফেরত দিলাম। (বুখারি : ১৮২৫, মুসলিম : ১১৯৩)
হাদিয়ার বদলায় হাদিয়া দান সুন্নত : মানবসমাজে কিছু মানুষ আছে তারা শুধু হাদিয়া গ্রহণকে পছন্দ করে, আর হাদিয়া প্রদানকে ভারী বা কষ্ট মনে করে। মূলত এটি সংকীর্ণতার পরিচায়ক। অথচ নবী করিম (সা.) হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং হাদিয়াদাতাকে এর বদলা দিতেন। তিনি কখনো কখনো কোনো জিনিস দিয়ে হাদিয়ার বদলা দিতেন, আবার কখনো মৌখিকভাবে হাদিয়াদাতার শুকরিয়া আদায় করতেন। এ ছাড়া তিনি হাদিয়াদাতাকে ধন্যবাদ জানাতেন এবং তার প্রশংসাও করতেন। এটাই ছিল নবীজি (সা.)-এর অনুপম আদর্শ। এভাবে রাসুল (সা.) হাদিয়াদাতাকে অনুপ্রাণিত করতেন। আমাদেরও উচিত হাদিয়াদাতাকে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু দেওয়া এবং তার শুকরিয়া আদায় ও প্রশংসা করা। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, যাকে দান করা হয় তার যদি সামর্থ্য থাকে তা হলে সে যেন তার বিনিময় দেয়। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন তার প্রশংসা করে। কেননা যে তার প্রশংসা করল, সে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল, আর যে তা গোপন করেছে সে তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। (আবু দাউদ : ৪৮১৫)
রাসুল আরও বলেন, যে ব্যক্তির কোনো উপকার করা হলো, অতঃপর সে উপকারীকে ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ বলে দোয়া দিল, সে নিঃসন্দেহে উপকারীর পূর্ণাঙ্গরূপে প্রশংসা করল। (তিরমিজি : ২১৬৭)

Aminur / Aminur