জীবনের অনিশ্চয়তা কাটবে যেভাবে

আমাদের জীবনের পথে কেবল ফুল বিছানো নয়, বরং পদে পদে আছে অনেক বাধা, জটিলতা, অনিশ্চয়তা, হতাশা, ব্যর্থতা ও বিছানো কাঁটা। জীবন চলার পথে আমরা বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হই। অভাব-অনটন, দুঃখ-শোক, কষ্ট-ক্লেশ, দুর্দশা-দুর্গতি, রোগব্যাধি, বিপদাপদ, বালা-মুসিবত, দুর্যোগ-দুর্বিপাক, অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টি, বন্যা, ভূমিকম্পসহ নানা সমস্যায় আমাদের জীবন সংকটাপন্ন হয়। আমরা দুঃখ-বেদনায় কাতর হই। দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা, বিষণ্নতা ও জটিলতায় অস্থির হয়ে পড়ি। এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকি। সমস্যার সমাধান ও সংকটের প্রতিবিধান খুঁজতে থাকি। প্রতিকারের উপায় অনুসন্ধান করতে থাকি। তাই এসব মুহূর্তে একজন ঈমানদার হিসেবে আমাদের কী করণীয় সে বিষয়ে কুরআন-হাদিসের আলোকে কিছু কথা বলা হচ্ছে।
আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা
মহাশক্তিধর আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, ত্রাণকর্তা ও রক্ষাকর্তা। একমাত্র তিনিই পারেন আমাদের সব সমস্যা থেকে মুক্ত করতে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একসময় আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পেছনে ছিলাম। তিনি বললেন, ‘হে তরুণ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি- তুমি আল্লাহ তায়ালার বিধিনিষেধ মেনে চলবে, আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ রাখবে, এতে আল্লাহকে কাছে পাবে। তোমার কোনো কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তায়ালার কাছে চাও। আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে মহান আল্লাহর কাছেই করো। আর জেনে রেখো, যদি সব উম্মতও তোমার কোনো উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়, তা হলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অপরদিকে যদি সব উম্মত তোমার কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে একতাবদ্ধ হয়, তা হলে ততটুকু ক্ষতিই করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ তায়ালা তোমার ভাগ্যে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজগুলোও শুকিয়ে গেছে।’ (তিরমিজি : ২৫১৬)
ধৈর্যধারণ ও নামাজ আদায়
আরবি ভাষায় একটি প্রবাদ আছে যার অর্থ হলো ধৈর্য সফলতার চাবিকাঠি। ধৈর্যধারণ করার মাধ্যমে বহু সমস্যার সমাধান করা যায়। হাদিস শরিফেও এসেছে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং সালাতুল হাজতের দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহ তায়ালার কাছে সমাধানের জন্য দোয়া করে, তা হলে আল্লাহ তায়ালা সঙ্গে সঙ্গে বা পরবর্তী সময়ে তার সমস্যা দূরীভূত করে দেন। হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে ওজু করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তায়ালা তার কাক্সিক্ষত বস্তু সঙ্গে সঙ্গে বা পরবর্তী সময়ে প্রদান করেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ২৭৪৯৭)
দান করা
ধন-সম্পদ মানুষের প্রিয় বস্তু। এই বস্তু কেউ সহজে হাতছাড়া করতে চায় না। সঞ্চয় করে রাখতে চায়। তবে কারও মধ্যে যখন আল্লাহর ভালোবাসা প্রবল হয় তখন সে তাঁর পথে ব্যয় করতে কুণ্ঠিত হয় না। টাকা-পয়সা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও ভোগ-বিলাসের উপকরণ। তাই দান করার সময় মনে হতে পারে সুখ লাভের উপকরণ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁর পথে ব্যয় করলে সুখের পথ সুগম করবেন। এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ‘যে দান করে ও খোদাভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে, আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্য সহজ পথ দান করব’ (সুরা লাইল : ৫-৭)। অন্যায়-অপরাধ ও পাপ-পঙ্কিলতা অনেক সময় অশুভ পরিণতি ডেকে আনে। পাপ-পঙ্কিলতাকে বিলীন করে অশুভ পরিণাম ও ঘোরতর বিপদ হতে মুক্ত থাকার সহজতম উপায় হলো দান-অনুদান প্রদান করা। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা নেক আমলগুলো খেয়ে ফেলে, যেমন আগুন জ্বালানি কাঠ খেয়ে ফেলে। দান-খয়রাত গুনাহগুলো বিলীন করে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ : ৪২১০)
তওবা-ইস্তেগফার
দৈনন্দিন জীবনে আমাদের ভুলত্রুটি, অন্যায়-অপরাধ ও গুনাহ হতেই থাকে। ত্রুটি-বিচ্যুতি ও গুনাহের কারণে মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। আল্লাহর অসন্তুষ্টির অনিবার্য ফলস্বরূপ মানুষ দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা, বালা-মুসিবত ও সমস্যা-সংকটে নিপতিত হয়। তাই কোনো পাপ সংঘটিত হওয়ার পর আমাদের জন্য করণীয় হলো মহান আল্লাহর দরবারে লজ্জা ও অনুতাপ প্রকাশ করা। সঙ্গে সঙ্গে মিনতি ও নম্রতা সহকারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। এতে মহান আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হয়। তিনি বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তার সমস্যা দূর করেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক সবসময় ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে আল্লাহ তাকে প্রতিটি সংকীর্ণতা বা কষ্টকর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ করে দেন, প্রতিটি দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করেন ও এমন সব উৎস থেকে রিজিক দান করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।’ (আবু দাউদ : ১৫১৮)
আল্লাহর ভয় রেখে চলা
বিপদাপদ, বালা-মুসিবত ও সমস্যা-সংকট হতে মুক্ত থাকার কার্যকর মহৌষধ হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে ভয় করে চলা। মহান আল্লাহর আজাব-গজব ও ক্রোধ ডেকে আনে এমন সব কাজ বর্জন করা। আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ অবলম্বন করা ও অসন্তুষ্টির পথ পরিহার করে জীবনযাপন করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর আজাব-গজবকে ভয় করে তাঁর আদেশ-নিষেধগুলো মেনে চলে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য নিষ্কৃতির পথ উন্মুক্ত করে দেন। তার জীবনযাপন সহজ করে তুলেন। পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘যে আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক প্রদান করবেন’ (সুরা তালাক : ২-৩)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের একমাত্র আশ্রয়। তিনি ছাড়া আর কোনো আশ্রয়স্থল আমাদের নেই। তিনি আমাদের উপাস্য, সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। আমাদের সর্বাবস্থায় তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে। তাঁরই সমীপে সমস্যার সমাধানের জন্য ধরনা দিতে হবে। তাই আসুন, সব সমস্যার সমাধানে উপর্যুক্ত উপায়গুলো মেনে চলার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তায়ালার অভিমুখী হই।
Aminur / Aminur

জীবনের অনিশ্চয়তা কাটবে যেভাবে

আল্লাহর রহমত পায় যারা

পাপের সূচনা হয় যেভাবে

ঈমান ও কুফর নির্ণয় হয় নামাজে

ইসলামী বইমেলার সময় বাড়ল

নারীদের জ্ঞানচর্চায় ইসলামের তাগিদ

হৃদয়-হৃদ্যতার সেতুবন্ধ হাদিয়া

অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা থেকে মুক্তির উপায়

প্রেরণার উৎস দুই কিশোর সাহাবি

আত্মা যেভাবে শক্তিশালী হয়

আসমাউল হুসনা: গুরুত্ব ও ফজিলত

মৃত্যুর সময় অবিশ্বাসীরা যে আফসোস করবে
