চলাফেরায় জিকিরের সওয়াব লাভের সুযোগ
ইসলাম সৌন্দর্যের ধর্ম। পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর, ইসলাম ও ইসলামি সভ্যতা তার চেয়েও বেশি সুন্দর। কারণ পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর সৃষ্টি মানুষ।
আর মানুষ সুন্দর ইসলাম ও ইসলামি সভ্যতার ধারক হিসেবে। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় ইসলামই সুন্দর। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা প্রাত্যহিক জীবনে কিছু শব্দ ব্যবহার করে থাকেন যা সভ্যতার বিচারে যেমন উত্তীর্ণ, তেমনি মর্যাদার দিকেও অনন্য। নিচে এমনই কিছু ব্যবহৃত শব্দের আলোচনা তুলে ধরা হলো
বিসমিল্লাহ : বিসমিল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি’। যেকোনো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা অত্যন্ত বরকতময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যদি আল্লাহকে স্মরণ না করে শুরু করা হয়, তা হলে তা লেজ কাটা (বরকতহীন) হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৪/৩২৯)
সুবহানাল্লাহ : সুবহানাল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহ পবিত্র ও সুমহান’। আশ্চর্যজনক ভালো কোনো কাজ হতে দেখলে কিংবা বিস্ময়কর ভালো কোনো কথা শুনলে এটি বলা ইসলামের শিক্ষা। যেমন আগুনে সব পুরে গেলেও কুরআন শরিফ অক্ষত আছে! সুবহানাল্লাহ!
আলহামদুলিল্লাহ : আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ ‘সব প্রশংসা মহান আল্লাহর’। যেকোনো সুখবর বা ভালো অবস্থা সম্পর্কিত সংবাদের বিপরীতে সাধারণত এটি বলা ইসলামি সভ্যতার অংশ। যেমন ভাই আপনি কেমন আছেন? জবাবে বলুন, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যারা সুখে-দুঃখে আল্লাহর প্রশংসা করবে, কেয়ামতের দিন তারা প্রথম সারির জান্নাতিদের মধ্যে থাকবে। (সিলসিলাতুয যাঈফা : ৬৩২)
মাশাআল্লাহ : মাশাআল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আল্লাহ যেমন চেয়েছেন’। এটি আলহামদুলিল্লাহ ও সুবহানাল্লাহ শব্দের মতোই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অর্থাৎ যেকোনো সুন্দর এবং ভালো বিষয়ে এটি বলা হয়। যেমন মাশাআল্লাহ তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো। মাশাআল্লাহ বাচ্চাটি অনেক সুন্দর।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো বিস্ময়কর বস্তু দেখার পর মাশাআল্লাহ লা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলবে, তবে তাকে কুদৃষ্টি স্পর্শ করবে না। (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৫/২১)।
নাউজুবিল্লাহ : নাউজুবিল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আমরা মহান আল্লাহর কাছে এ থেকে আশ্রয় চাই’। যেকোনো মন্দ ও গুনাহের কাজ দেখলে তার থেকে আত্মরক্ষার্থে এটি বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা ভয়াবহ বিপদ, হতভাগ্যের অতল গহ্বর, মন্দ তকদির এবং শত্রুর আনন্দ প্রকাশ থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। (বুখারি : ৬১৬৩)।
ইনশাআল্লাহ : ইনশাআল্লাহ শব্দের অর্থ ‘যদি আল্লাহ চান’। মাঝেমধ্যে ‘কেমন আছেন?’ প্রশ্নের জবাবে কাউকে বলতে শোনা যায়, ইনশাআল্লাহ ভালো আছি। মূলত ভবিষ্যতের কোনো কথা কাজ ও পরিকল্পনা প্রকাশ এবং প্রতিশ্রুতি প্রদানের সময় ইনশাআল্লাহ বলা ইসলামের শিক্ষা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, (হে নবী!) আপনি কোনো কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামীকাল করব; ‘যদি আল্লাহ চান’ (ইনশাআল্লাহ) বলা ব্যতিরেকে। (সুরা কাহাফ : ২৩)
আসতাগফিরুল্লাহ : আসতাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ ‘আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই’। অনাকাক্সিক্ষত কোনো অন্যায় বা গুনাহ হয়ে গেলে আমরা এটি বলব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি প্রতিদিন সত্তর বারেরও বেশি (আসতাগফিরুল্লাহ বলে) আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই ও তওবা করি।’ (বুখারি : ৬৩০৭)
জাজাকাল্লাহু খায়রান : জাজাকাল্লাহু খায়রান শব্দের অর্থ ‘আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন’। কেউ আপনার কোনো উপকার করলে তাকে থ্যাঙ্কইউ বা ধন্যবাদ না বলে বলুন, জাজাকাল্লাহু খায়রান। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির জন্য কোনো উপকার করা হলো এবং সে উপকারকারীকে ‘জাজাকাল্লাহু খায়রান’ বলে দোয়া দিল, সে নিঃসন্দেহে (উপকারীর) পূর্ণাঙ্গরূপে কৃতজ্ঞতা আদায় করল। (তিরমিজি : ২০৩৫)
ইন্নালিল্লাহ বা ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন : এর অর্থ ‘নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁর দিকেই ফিরে যাব।’ ছোট-বড় যেকোনো দুঃসংবাদ বা বিপদের সময় আমরা এটি বলব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিম নর-নারী যদি পূর্বের কোনো বিপদাপদের কথা মনে পড়ার পর নতুনভাবে ‘ইন্নালিল্লাহ বা ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়ে তা হলে আল্লাহ তাকে নতুনভাবে সে সওয়াবই দেবেন, যে সওয়াব সে বিপদে পতিত হওয়ার প্রথম দিন ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে পেয়েছিল। (মুসনাদে আহমাদ : ১৭৩৪)
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ : এর অর্থ ‘ইবাদত করার এবং গুনাহ থেকে বাঁচার শক্তি একমাত্র আল্লাহর হাতে’। শয়তানের কোনো ওয়াসওয়াসা বা দুরভিসন্ধিমূলক কোনো প্রতারণা ও গুনাহের চিন্তা থেকে বাঁচার জন্য অধিকহারে আমাদের এটি পড়া উচিত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বেশি বেশি বলো। কেননা তা জান্নাতের রত্নভান্ডারের অন্তর্ভুক্ত।
মাকহুল (রহ.) বলেন, যে লোক ‘লা হাওলা ওয়াল কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ওয়ালা মানজায়া মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি’ পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা তার থেকে সত্তর প্রকারের অনিষ্ট অপসারণ করেন এবং এগুলোর মাঝে সাধারণ বা ক্ষুদ্র বিপদ হলো দরিদ্রতা (তিরমিজি : ৩৬০১)।
উল্লেখ্য, এসব শব্দ জিকিরেরও অন্তর্ভুক্ত। আর অধিকহারে আল্লাহর জিকিরকারী সর্বশ্রেষ্ঠ আমলকারীদের অন্যতম। জিকিরের মাধ্যমে কঠিন বিষয় সহজ হয়, কষ্ট হালকা হয়, রিজিকের পথ সুগম হয়, শরীর শক্তিশালী হয়। জিকিরের মাধ্যমে শয়তান দূরীভূত হয়, তার মূলোৎপাটন করে তাকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি জিকির করার তওফিক দান করুন।
Aminur / Aminur
সুস্বাস্থ্যের জন্য যে দোয়া করবেন
পারিবারিক জীবনে ভরণপোষণের গুরুত্ব
অবসরে জান্নাত সাজানোর সুযোগ
চলাফেরায় জিকিরের সওয়াব লাভের সুযোগ
মুমিনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান
বাম হাতে তসবি পড়া যাবে?
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের পদ্ধতি
কুরআনের আলোকে মৌমাছি ও মধু
জান্নাতে প্রবেশে কিছু বাধা
মিজানের পাল্লা ভারী হবে যেভাবে
কসম করতে সতর্কতা জরুরি
চার দোষে ঈমান নষ্ট