ঢাকা শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

পারিবারিক জীবনে ভরণপোষণের গুরুত্ব


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২-১২-২০২৫ দুপুর ১১:১৩

পরিবার-পরিজন মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পরিবার ছাড়া প্রাত্যহিক জীবন কল্পনা করা যায় না। আবার প্রতিটি পরিবার পরিচালনার জন্য রয়েছেন একজন অভিভাবক। এ অভিভাবকের ওপর পরিবারের ভরণপোষণের মহান দায়িত্ব রয়েছে। 
পরিবারের ভরণপোষণ বলতে বোঝায় পরিবারের সদস্যদের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করা। ইসলাম ধর্ম পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করাকে ইবাদত ও সদকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। আর এ খরচের বিনিময়ে পরকালে অভিভাবকদের জান্নাত নসিব হবে। 
এ ছাড়া অভিভাবকের জীবিকা নির্বাহে আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করবেন। মাতা-পিতা ও সন্তান-সন্ততির যাবতীয় প্রয়োজন সম্পাদন করা একজন অভিভাবকের গুরুদায়িত্ব। 
কুরআন ও হাদিসে পরিবারের ভরণপোষণ সম্পর্কে অসংখ্য দিকনির্দেশনার কথা রয়েছে। তাই প্রত্যেক অভিভাবককে পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচপাতিতে দায়িত্বশীলের পরিচয় দিতে হবে। পরিবারের ব্যয়ভারকে বোঝা মনে করা ও উপেক্ষা করা উভয়টি অন্যায়। তবে খরচাপাতির ক্ষেত্রে বিলাসিতা ও অপচয়কে অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কারণ ইসলাম পরিবারের প্রয়োজন সম্পাদনকে সওয়াবের কাজ বলেছে, আর অপচয়কে শয়তানি কর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
কুরআনে পরিবারের খরচাপাতির নির্দেশ : পরিবারের জন্য ভরণপোষণ করা শুধু পারিবারিক দায়িত্ব নয়, বরং ঈমানের দাবি। আল্লাহর অর্পিত দায়িত্ব। অন্যকে দান করার আগে নিজের পরিবারের প্রয়োজন পূরণ করাই বড় সদকা-দান। আর এটাই হলো একজন অভিভাবকের প্রতি পরিবারের অধিকার। 
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী খরচ করবে? বলুন, তোমরা যে কল্যাণকর জিনিস খরচ করবে তা হোক মাতা-পিতার জন্য এবং কাছের আত্মীয়দের জন্য। (সুরা বাকারা : ২১৫)
পরিবারের ব্যয়ভার সবার আগে : বর্তমান সমাজে কিছু মানুষকে অতি উৎসাহিত হতে দেখা যায়। তারা মানবসেবামূলক বিভিন্ন কাজ করে যায়। অসহায়দের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে কার্পণ্য করে না। কিন্তু তারা স্বীয় পরিবারের ব্যয়ভার বিষয়ে একেবারেই বেখবর। এমনকি মাতা-পিতা, স্ত্রী ও সন্তানদের চিকিৎসা নিয়েও অবহেলা করে। এভাবে নিজের পরিবারের অধিকার নষ্ট করে পরের সেবায় কাজ করার নির্দেশ ইসলাম দেয়নি। ইসলাম পরিবারের সেবা ও ব্যয়ভারকে প্রাধান্য দিয়েছে। সমুদয় মানবহিতৈষী কাজের মধ্যে পরিবারের ব্যয়ভার সবার আগে। পরিবারের খরচাপাতির দায়িত্ব একজন অভিভাবকের ওপর ফরজ। 
এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ওপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম। যাদের ভরণপোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদের আগে দাও। প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সদকা করা উত্তম। যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাব শূন্য করে দেন (বুখারি : ১৪২৭)। 
রাসুল আরও বলেন, তোমার ওয়ারিশদের অভাবমুক্ত রেখে যাও, তাদের অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া মানুষের কাছে হাত পাতার চাইতে উত্তম। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তুমি যেকোনো ব্যয় করো না কেন তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেবে তারও বিনিময় পাবে। (বুখারি : ১৩০৭)
সন্তানদের খরচে সম্পদের বরকত নিহিত : প্রতিটি পরিবারের সৌন্দর্যই হলো সন্তান-সন্ততি। ফুল দ্বারা যেমন বাগানের সৌন্দর্য রক্ষা হয়, তেমনিভাবে পরিবারের সৌন্দর্য সন্তানদের দ্বারা রক্ষা হয়। প্রতিটি সন্তান মাতা-পিতার কাছে আল্লাহ প্রদত্ত আমানত। এ আমানতগুলোর সেবাযত্ন করা মাতা-পিতার নৈতিক দায়িত্ব। কন্যাসন্তানকে বিয়ে দেওয়া পর্যন্ত, আর ছেলেসন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত যাবতীয় খরচ মাতা-পিতাকে বহন করতে হবে। এসব খরচের বিনিময়ে মহান আল্লাহ মাতা-পিতাকে সওয়াব দান করবেন। এমনকি মাতা-পিতার সম্পদে বরকতও দান করবেন। সুতরাং পরিবারের প্রয়োজনে খরচ করলে সম্পদের ক্ষয় হয় না, বরং সম্পদ বৃদ্ধি পায়। 
হাদিসে আছে, হজরত কিলাবা (রহ.) বলেন, ওই ব্যক্তির চেয়ে আর কে বেশি সওয়াবের অধিকারী যে তার ছোট ছোট সন্তানদের জন্য খরচ করে এবং আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তাদের উপকৃত করেন এবং সম্পদশালী করেন। (তিরমিজি : ২০৯৩)
পরিবারের জন্য খরচ সদকাতুল্য : পরিবার-পরিজনদের জন্য খরচ করাকে সদকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সাধারণত সদকা গরিব-মিসকিন ও অসহায়দের প্রদান করা হয়। তবে পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচপাতিকে সদকা বলা থেকে উদ্দেশ্য হলো হাদিয়া। এ ছাড়া পরিবারের ব্যয়ভারটি আল্লাহর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে যে অভিভাবক পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে সদকার সওয়াব দান করবেন। এটাই হলো ইসলামের অনুপম আদর্শ ও শিক্ষা। 
এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা. ) বলেন, কোনো মুসলিম যখন সওয়াবের আশায় তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, এ খরচ তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়। (বুখারি : ৫৪০৫) 

Aminur / Aminur