পাপের ভারে ভূমিকম্প বাড়ে
ভূমিকম্প মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা। কুরআন ও হাদিসে উল্লেখ আছে যে, এটি মানুষের পাপাচার ও অন্যায়ের ফল হতে পারে। ভূমিকম্পকে কেয়ামতের অন্যতম লক্ষণ হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ অতীতে পাপে লিপ্ত হওয়ার কারণে একাধিক জাতিকে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে শাস্তি প্রদান করেছেন মর্মে উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র কুরআনে নির্দিষ্টভাবে কয়েকটি জাতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ভূমিকম্প দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাতি হলো- হজরত সালেহ (আ.)-এর জাতি সামুদ। সামুদ জাতি তাদের নবী সালেহ (আ.)-কে অস্বীকার করেছিল এবং আল্লাহর নিদর্শন উটনীকে হত্যা করেছিল। এর ফলস্বরূপ তাদের ওপর এক প্রচণ্ড ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং তারা তাদের ঘরে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। হজরত শুয়াইব (আ.)-এর জাতি মাদিয়ান। মাদিয়ানবাসী ওজনে কম দিত এবং অন্যান্য পাপাচার করত। যখন তারা হজরত শুয়াইব (আ.)-এর সতর্কবাণী প্রত্যাখ্যান করে, তখন এক শক্তিশালী ভূমিকম্প তাদের গ্রাস করে। হজরত লুত (আ.)-এর জাতি। এই জাতি সমকামিতার মতো চরম অশ্লীলতায় লিপ্ত ছিল। তাদের শহর সদোম ও গোমোরা উল্টে দেওয়া হয়েছিল, যার সঙ্গে তীব্র ভূমিকম্প এবং আকাশ থেকে পাথরবৃষ্টি হয়েছিল। হজরত মুসা (আ.)-এর জাতির ৭০ জন বনি ইসরাইলের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৭০ জন আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সময় তাদের পাপের কারণে ভূমিকম্পের শিকার হয়েছিলেন। কারুন- যে তার সম্পদ নিয়ে অহংকার করত, আল্লাহ তাকে তার সম্পদসহ জমিনে গেঁথে দিয়েছিলেন। যদিও এটি সরাসরি ‘জাতি’ নয়, তবে এটি পাপের কারণে মাটির গ্রাস করার একটি উদাহরণ।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ১৫টি অপরাধের কারণে ভূমিকম্প আসবে- ১. যখন গনিমতের (যুদ্ধলব্ধ) মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে। ২. যখন গনিমতের মাল লুটের মালে পরিণত হবে। ৩. জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে। ৪. ধর্মবিবর্জিত শিক্ষার প্রচলন হবে। ৫. পুরুষ স্ত্রীর অনুগত হয়ে যাবে। ৬. কিন্তু নিজ মায়ের অবাধ্য হবে। ৭. বন্ধুবান্ধবকে কাছে টেনে নেবে ৮. কিন্তু পিতাকে দূরে ঠেলে দেবে। ৯. মসজিদে কলরব ও হট্টগোল করবে। ১০. পাপাচারীরা গোত্রের নেতা হবে। ১১. নিকৃষ্ট লোক সমাজের কর্ণধার হবে। ১২. কোনো মানুষের অনিষ্ট হতে বাঁচার জন্য তাকে সম্মান দেখানো হবে। ১৩. গায়িকা-নর্তকী ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে। ১৪. মদপান করা হবে। ১৫. এই উম্মতের শেষ জামানার লোকরা তাদের পূর্ববতী মনীষীদের অভিসম্পাত করবে। (তিরমিজি)
কুরআনে ‘জিলজাল’ অর্থাৎ ভূমিকম্প নামের একটি স্বতন্ত্র সুরা হয়েছে। সাহাবিদের বিশ্বাস ছিল মানুষের পাপ যখন বেড়ে যায় তখন ভূমিকম্প হয়। আর বিশেষজ্ঞদের মতে ছোট ছোট ভূমিকম্পের পর বড় ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে কয়েক দফায় ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যদি আল্লাহর আজাব আসে, আমরা ঈমান এনেছি এবং নেক কাজ করি বলে আমাদেরও ছেড়ে দেবে না। সময় আরও প্রমাণ করে ইতিহাসে এমন অনেক জাতি ছিল যারা আমাদের মতো। যারা দুনিয়ার মোহে মত্ত ছিল, পাপাচারে মেতে ছিল কিন্তু সময় তাদের গিলে ফেলেছে। কাজেই আজাব আসার আগেই সতর্ক হওয়া জরুরি। ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে একে অন্যকে উপদেশ দিতে হবে? পাপের দুনিয়া থেকে নিজে বাঁচার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও বাঁচানো জরুরি।
সব গুরুতর পাপ এবং অন্যায়ের কারণে আল্লাহ পূর্ববর্তী বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিলেন, তার অনেক কিছুই এই আধুনিক যুগেও সংঘটিত হচ্ছে। পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ধ্বংসের কারণগুলো প্রায়ই নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং এই একই ধরনের অপরাধ আজকের সমাজে ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায়। বর্তমান সময়ে সমাজে যে পাপ হচ্ছে, তা অতীতের সব জাতির পাপের সমষ্টি। যে অপরাধগুলো পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ধ্বংসের কারণ হয়েছিল এবং যা বর্তমানেও বিদ্যমান। এর অংশবিশেষ নিম্নে উল্লেখ করা হলো- পূর্ববর্তী অনেক সম্প্রদায় সৃষ্টিকর্তার একত্ববাদকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। বর্তমানেও বহু সমাজে স্রষ্টার অস্তিত্ব বা তাঁর নির্দেশের প্রতি অবিশ্বাস এবং বিভিন্ন ধরনের শিরক প্রচলিত আছে।
আগের জাতিগুলো দুর্বলদের প্রতি জুলুম করত এবং সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করেনি। আজকের বিশ্বেও সমাজের ক্ষমতাবানদের দ্বারা দুর্বলদের ওপর অন্যায়, অবিচার এবং নিপীড়ন ব্যাপক মাত্রায় দেখা যায়। মাদইয়ান সম্প্রদায় ব্যবসায়িক লেনদেনে প্রতারণা করত এবং পরিমাপে কম দিত। এই যুগেও ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে জালিয়াতি, ধোঁকাবাজি এবং আমানতের খেয়ানত প্রচলিত আছে। পূর্বের জাতিগুলো তাদের কাছে প্রেরিত নবী-রাসুলদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছিল এবং তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। যদিও এখন আর নবী আসেন না তবে আল্লাহর প্রেরিত নির্দেশনা উপেক্ষা করার প্রবণতা বর্তমান সমাজে লক্ষণীয়। পূর্ববর্তী নবী ও রাসুলগণের উম্মতদের তাদের কৃত পাপাচারের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাৎক্ষণিক শাস্তি প্রদান করতেন। এমনও দেখা যেত যে, পুরো কওমকে আল্লাহ তায়ালা তাৎক্ষণিক ধ্বংস করে দিয়েছেন। এটি সেই দোয়া যার কারণে আল্লাহ আমাদের আদ, সামুদ, লুতের জাতির মতো একসঙ্গে ধ্বংস করেন না, যদিও আমরা গুনাহ করি। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।
Aminur / Aminur
পাপের ভারে ভূমিকম্প বাড়ে
সুস্বাস্থ্যের জন্য যে দোয়া করবেন
পারিবারিক জীবনে ভরণপোষণের গুরুত্ব
অবসরে জান্নাত সাজানোর সুযোগ
চলাফেরায় জিকিরের সওয়াব লাভের সুযোগ
মুমিনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান
বাম হাতে তসবি পড়া যাবে?
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের পদ্ধতি
কুরআনের আলোকে মৌমাছি ও মধু
জান্নাতে প্রবেশে কিছু বাধা
মিজানের পাল্লা ভারী হবে যেভাবে
কসম করতে সতর্কতা জরুরি