মেহমানকে সম্মান দিলে নিজের সম্মান
পরকালে যারা জান্নাতের অধিকারী হবেন, দুনিয়াতে তাদের মহৎ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- তারা অতিথিপরায়ণ হবেন এবং দুর্বল, নিঃস্ব-অসহায়, অনাহারীকে নিঃস্বার্থভাবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে খাবার খাওয়াবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যারা জান্নাতি হবে তারা খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ থাকা সত্ত্বেও অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিকে খাবার দান করে এবং তারা বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদের খাবার দান করি, আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিদান চাই না, চাই না কোনো কৃতজ্ঞতাও’ (সুরা দাহর : ৮-৯)। মেহমানকে দুভাবে সম্মানিত করা যায়। সুন্দর রুচিশীল খাবার মেহমানের সামনে উপস্থাপন করার মাধ্যমে এবং মেহমানের সঙ্গে সুন্দর আচার-আচরণ ও ব্যবহারের মাধ্যমে।
এই দুটির যেকোনো একটির অভাব হলে মেহমানদারির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মেজবানের উচিত, মেহমানের হক আদায় করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা। মেজবানের ওপর মেহমানের হক সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর এবং শেষ দিনের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে তার প্রাপ্যের বিষয়ে। জিজ্ঞেস করা হলো, মেহমানের প্রাপ্য কী, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, মেহমানের প্রাপ্য হচ্ছে এক দিন এক রাত ভালোভাবে মেহমানদারি করা আর তিন দিন হলে সাধারণ মেহমানদারি করা, আর তার চেয়েও অধিক হলে মেহমানের প্রতি দয়া করা।’ (বুখারি : ৬০১৯)
ইসলামের সোনালি যুগের সোনার মানুষ সাহাবায়ে কেরাম কীভাবে মেহমানদের সমাদর করতেন এবং কীভাবে মেহমানের হক আদায় করতেন, সে ব্যাপারে একটি চমৎকার ঘটনা হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক লোক নবীজি (সা.)-এর খেদমতে এলো।
অতঃপর রাসুল (সা.) তাঁর স্ত্রীদের কাছে খাদ্যের জন্য একজন লোক পাঠালেন। তাঁরা জানালেন, আমাদের কাছে পানি ছাড়া কিছুই নেই। তখন রাসুল (সা.) বললেন, কে আছো যে এই ব্যক্তিকে মেহমান হিসেবে নিয়ে নিজের সঙ্গে খাওয়াতে পারো? তখন এক আনসারি সাহাবি (আবু তালহা রা.) বললেন, আমি আছি ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ বলে তিনি মেহমানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন, রাসুল (সা.)-এর মেহমানকে যথাযথ সম্মান করো। স্ত্রী বললেন, বাচ্চাদের খাবার ছাড়া আমাদের ঘরে অন্য কিছুই নেই। আনসারি সাহাবি বললেন, তুমি আহার প্রস্তুত করো এবং বাতি জ্বালাও এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। সে বাতি জ্বালাল, বাচ্চাদের ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরি ছিল তা মেহমানের সামনে উপস্থিত করল। বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন।
তারপর তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মতো শব্দ করতে লাগলেন এবং মেহমানকে বোঝাতে লাগলেন যে, তাঁরাও সঙ্গে খাচ্ছেন। মেহমানকে সন্তুষ্ট রাখতে তাঁরা উভয়েই সারা রাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে গেলেন, তখন রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কাণ্ড দেখে খুশি হয়েছেন এবং এই আয়াত নাজিল করেছেন, ‘তারা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের ওপর অন্যদের অগ্রগণ্য করে থাকে। আর যাদের অন্তরের কৃপণতা হতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলতাপ্রাপ্ত।’ (বুখারি : ৩৭৯৮)
এ ঘটনায় মেহমানকে যথাযথভাবে সম্মান ও সমাদর করার কারণে আল্লাহ তায়ালা আবু তালহা (রা.) ও তাঁর স্ত্রীর প্রশংসায় কুরআনুল করিমে একটি আয়াত নাজিল করে দিয়েছেন। আমরাও যদি উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে মেহমানকে খুশি রাখতে পারি, তা হলে আমরাও আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করতে পারব।
Aminur / Aminur
ইবাদতের জন্য স্বাস্থ্যসচেতনতা জরুরি
জান্নাতে প্রবেশের সহজতর আমল
অমুসলিমদের কি মসজিদে প্রবেশ নিষেধ?
মেহমানকে সম্মান দিলে নিজের সম্মান
জীবনের অনিশ্চয়তা কাটবে যেভাবে
আল্লাহর রহমত পায় যারা
পাপের সূচনা হয় যেভাবে
ঈমান ও কুফর নির্ণয় হয় নামাজে
ইসলামী বইমেলার সময় বাড়ল
নারীদের জ্ঞানচর্চায় ইসলামের তাগিদ
হৃদয়-হৃদ্যতার সেতুবন্ধ হাদিয়া
অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা থেকে মুক্তির উপায়