ঢাকা বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

সঠিক কথা বলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২২-১০-২০২৫ সকাল ৯:২৬

মানুষ কথা বলা ছাড়া থাকতে পারে না। কথার মাধ্যমেই পৃথিবীতে সূচিত অধিকাংশ পাপ-পুণ্য। কথার মাধ্যমে মানুষ সম্মানিত হয় আবার অসম্মানিত হয়। এর কারণে কেউ জান্নাতে যাবে আবার কেউ জাহান্নামে যাবে। বুদ্ধিমান ও নির্বোধ নির্ণয়ের মাধ্যমও মানুষের কথা। পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা লাখো মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি চতুষ্পদ জন্তুসহ ইত্যাকার জলচর ও নভোচর অসংখ্য প্রাণীর সমাহার সৃষ্টিজুড়ে। তাদের আল্লাহ তায়ালা জিহ্বা দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু তারা কখনো কথা বলতে পারে না। সবাইকে তিনি কথা বলার সুযোগ-সক্ষমতা দেননি। শুধু আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা মানুষকে তিনি কথা বলার শক্তি দিয়েছেন।
তাই কথা বলার স্থান-কাল-পাত্র সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মানুষের জন্য জরুরি। পৃথিবীতে শান্তি ও পরকালে মুক্তির অন্যতম উপায় সর্বদা উত্তম কথা বলা নতুবা চুপ থাকা। অপাত্রে ব্যবহার করলেই পাপে জড়িয়ে পড়ার প্রবল শঙ্কা। মানুষকে কথা বলার শক্তি প্রদানের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা, দ্বীনের বাণী উচ্চারণ ও প্রচার করা, তাসবিহ-তাহলিল জপ করা, মানুষকে সত্যের গল্প শোনানো, আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা। জবানের অপব্যবহার করলে কেয়ামতের দিন প্রতিটি কথার হিসাব দিতে হবে এবং জবানের অপব্যবহারের জন্য জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। জবানের অপব্যবহার করলে আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন। আর সঠিক জায়গায় ব্যবহার করলে খুশি হন। আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের এবং দুই রানের মধ্যবর্তী গোশতের টুকরাটির (জিহ্বা ও লজ্জাস্থান) নিশ্চয়তা দিতে পারবে আমি তার জান্নাতের জামিনদার হয়ে যাব।’ (বুখারি : ৭৮৮৪)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। তা হলে আল্লাহ তোমাদের কার্যক্রমগুলো সংশোধন করবেন এবং তোমাদের অপরাধগুলো ক্ষমা করবেন। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহাসফলতা লাভ করবে’ (সুরা আহযাব : ৭০-৭১)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই সত্য অবলম্বন করবে। কেননা সততা মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। কোনো মানুষ সদা সত্য কথা বলতে থাকলে এবং সত্যের ওপর মনোযোগী থাকলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে পরম সত্যবাদী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। আর অবশ্যই মিথ্যা পরিহার করবে। কেননা মিথ্যা কথা মানুষকে পাপের দিকে পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। কোনো মানুষ মিথ্যা কথা বলতে থাকলে এবং মিথ্যার প্রতি ঝুঁকে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর দরবারে মিথ্যাবাদী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।’ (তিরমিজি : ১৯২১)
এ জন্য কথা বললে উত্তম কথা বলা অথবা নীরবতা অবলম্বন করা। এটি ঈমানের অন্যতম লক্ষণ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানদের আপ্যায়ন করে। 
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরব থাকে’ (বুখারি ও মুসলিম)। একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, নিশ্চয় জান্নাতে বালাখানা থাকবে, যার ভেতরের সবকিছু বাইরে থেকে দেখা যাবে। 
একজন বেদুইন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, ওই বালাখানা কাদের জন্য হবে? রাসুল (সা.) বললেন, ‘যারা মিষ্টভাষী হবে, অভাবীদের আহার করাবে, রাতের গভীরে যখন মানুষ নিদ্রামগ্ন থাকে তখন যারা নামাজ পড়ে- তাদের জন্য হবে (তিরমিজি)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে একজন নারী সম্পর্কে বলা হলো- সে খুব নফল নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং অনেক দান-সদকা করে, কিন্তু তার মুখের কথা ও ভাষা প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে জাহান্নামি! ওই ব্যক্তি আরেকজন এক নারী সম্পর্কে বলল- যার নফল নামাজ, নফল রোজা ও দান-সদকার ক্ষেত্রে তেমন প্রসিদ্ধি নেই কিন্তু ভালো কথা বলে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে জান্নাতি।’ (রিয়াজুস সালিহিন)
আল্লাহভীরু ও আন্তরিক ঈমানদারের অন্যতম আলামত হচ্ছে সে কখনো শোনা কথা বলে বেড়াবে না। কোনো কথা শোনার পর যদি অন্য কাউকে বলতেও যায় তবে সেটির সত্যাসত্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মানুষ মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যে কথা শোনে তাই বলে বেড়ায়।’ (রিয়াজুস সালিহিন : ১৫৪৭)

Aminur / Aminur