দুনিয়ার কষ্টের বিনিময়ে আখেরাতের সুখ

মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না স্বাভাবিক বিষয়। মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়েছে এমন বৈশিষ্ট্য দিয়ে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি মানুষকে বিভিন্ন রকম কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে সৃষ্টি করেছি’ (সুরা বালাদ : ৪)। এ কারণেই মানুষ সমস্যায় পড়ে, দুঃখ পায়, কষ্ট বয়ে বেড়ায়।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব দুঃখ-কষ্ট পোহানোয় মানুষ অভ্যস্ত। তারা বেশ ভালো করেই জানে, এসবই জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু হিসাব কষলে দেখা যায়, অন্যান্য জাতির তুলনায় মুসলমানরাই যেন বেশি দুঃখ-কষ্টে আছেন। ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অসহায়ের জীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন।
ইহুদি, খ্রিস্টান কিংবা অন্য ধর্মাবলম্বীদের মুসলমানদের চেয়েও এই এগিয়ে থাকা এবং তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আর বিলাসী জীবনযাপন দেখে অনেকের কপালেই চিন্তার ভাঁজ পড়তেই পারে—তবে কেন মুসলমানরাই এত দুঃখ-কষ্টের জীবনযাপন করছে? অথচ আল্লাহর প্রিয় ধর্ম ইসলাম! আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম। সুতরাং সেই মনোনীত ধর্মের অনুসারী মুসলমানদেরই তো এমন সুখময় বিলাসী জীবন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টো। এমনটা হচ্ছে কেন?
এমন হওয়ার পেছনেও আল্লাহ তায়ালার কিছু মহৎ উদ্দেশ্য আছে। আর তা হলো, মুসলমানদের পরকালীন জীবনকে জান্নাতের সুখে সুষমাম-িত করা। মুসলমানদের কাছে ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীর তেমন কোনো মূল্য নেই। তারা জানে এই জীবনের শেষে যে জীবনের শুরু তার সমাপ্তি নেই। সেই অনন্ত জীবনের সুখই তো প্রকৃত সুখ। আর এই সুখময় জীবন পেতে হলে জান্নাতে যেতে হবে। কিন্তু এই জান্নাত প্রাপ্তির জন্য মুসলমানদের যতটুকু ইবাদত সাধনা দরকার, ততটুকু ইবাদত সাধনা তাদের নেই। থাকলেও তা ভুল-ত্রুটিতে ভরা। তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের সেই ভুল-ত্রুটি মোচনের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রোগ-শোক, দুঃখ-কষ্ট দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালার বাণী, ‘অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে।’ (সুরা বাকারা : ১৫৫)
এই দুঃখ-কষ্টের পরীক্ষা মুসলমানদের জন্য পরম নেয়ামত। রাসুল (সা) বলেছেন, ‘মুসলমানের ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আপতিত হয়, এমনকি তার দেহে যে কাঁটা ফোটে, তার বিনিময়েও আল্লাহ গুনাহ ক্ষমা করে দেন’ (বুখারি : ৫৬৪১)।
এ হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রোগ-শোক, দুঃখ-কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের জান্নাত নিশ্চিত করেন। তাই কারও সন্তান মারা গেলে, কারও সম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেলে কিংবা অন্য কোনো বিপদাপদে পড়লে এমন কথা না বলা, আল্লাহ আমার সঙ্গেই কেন এমনটি করলেন? অধৈর্য না হয়ে সবুর করতে হবে। মনে ধারণা আনতে হবে আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। হাদিসেও বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ যার ভালো চান, তাকেই দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’ (বুখারি : ৫৬৮৪)
মুসলমানদের এত দুঃখ-কষ্ট পাওয়ার আরেকটা উদ্দেশ্য হলো, সতর্ক করা। দুনিয়ার চাকচিক্য, শয়তানের প্ররোচনা এবং লোভ-লালসায় পড়ে মুসলমান যখন পাপের পথে ধাবিত হয়, ভুলে ভরা পথেই চলতে থাকে, তখন তাদের কিছু বিপদাপদ, শোক-দুঃখ ও কষ্ট-ক্লেশ দেওয়া হয়। যেন তারা সতর্ক হয়ে যায়। নিজেদের শুধরে নেয়। কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করে। সিরাতুল মুস্তাকিমে ফিরে আসে। পবিত্র কুরআনের বাণী, ‘তারা কি লক্ষ করে দেখে না যে, প্রতি বছর তাদের ওপর দুই-একবার বিপদ আসছে? এরপরও তারা তওবা করে না। উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না?’ (সুরা তওবা : ১২৬)
এই দুনিয়াবি জীবনে অমুসলিমরা মুসলমানদের চেয়ে অর্থবিত্তে, ক্ষমতায় এগিয়ে থাকার পেছনেও একটা সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। আর তা হলো তাদের ভালো কাজের বিনিময় বুঝিয়ে দেওয়া।
অমুসলিমরাও অনেক সময় দুস্থদের সাহায্য-সহযোগিতা, রোগীর সেবা, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি জনসেবামূলক কাজ করে থাকে। নিঃসন্দেহে এগুলো ভালো কাজ। তাদের এই ভালো কাজের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার জীবনকে ভোগ-বিলাসে ভরিয়ে দেন। দুনিয়াকে তাদের কাছে জান্নাত বানিয়ে দেন। যদিও প্রকৃত জান্নাতের কাছে এই দুনিয়ার চাকচিক্য কিছুই না।
অমুসলিমদের এই সুখ, ঐশ্বর্য দেখে মুসলমানদের আফসোস করার কিছুই নেই। মুসলমানদের কাছে জান্নাতের তুলনায় এই ক্ষণস্থায়ী সুখ মূল্যহীন। এই পৃথিবীর চেয়ে দশগুণ বড় জান্নাত তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সেই জান্নাতি সুখের জন্যই তারা সব দুঃখ, কষ্ট-ক্লেশ হাসিমুখে বরণ করে নেয়। প্রকৃত মুসলমান তো তিনিই, যিনি বিপদে পড়লে বিচলিত না হয়ে ধৈর্যধারণ করেন। নিজেকে পরিশুদ্ধ করেন। কারণ তিনি জানেন, ‘সেই সফল হয়েছে, যে নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে।’ (সুরা শামস : ১০)
Aminur / Aminur

দুনিয়ার কষ্টের বিনিময়ে আখেরাতের সুখ

সঠিক কথা বলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য

সুসম্পর্কের সূচনা হয় সালাম থেকে

ইস্তেগফারের উত্তম বাক্য

ইবাদতের জন্য স্বাস্থ্যসচেতনতা জরুরি

জান্নাতে প্রবেশের সহজতর আমল

অমুসলিমদের কি মসজিদে প্রবেশ নিষেধ?

মেহমানকে সম্মান দিলে নিজের সম্মান

জীবনের অনিশ্চয়তা কাটবে যেভাবে

আল্লাহর রহমত পায় যারা

পাপের সূচনা হয় যেভাবে

ঈমান ও কুফর নির্ণয় হয় নামাজে
