ঢাকা রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

সমাজে শালীনতা বজায় রাখার গুরুত্ব


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৬-১০-২০২৫ সকাল ৯:১৯

সমাজ সুন্দর হয় মানুষের সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে। ইসলামে সুন্দর ব্যবহারের প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বিশ্বাসী ও আদর্শবান মানুষদের ‘ইবাদুর রহমান’ তথা ‘দয়াময় সত্তার বান্দা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। আর আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দা হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো শালীনতাবোধসম্পন্ন হওয়া, নম্র ও ভদ্র হওয়া। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নরম পায়ে চলে এবং যখন তাদের অজ্ঞ লোকেরা সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, ‘সালাম’ (সুরা ফুরকান : ৬৩)। 
আয়াতে আল্লাহ তায়ালা খাঁটি বান্দাদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে - তারা প্রকৃত মুমিন, পরহেজগার, উন্নত আদর্শের অনুসারী, তারা বিনম্র পদক্ষেপে চলাফেরা করে, তারা কখনো অহংকার করে না। তাদের মনে যেমন অহংকার থাকে না, তেমনি তাদের চালচলনে, কথা-বার্তায়, ওঠা-বসায় কখনো অহংবোধ পরিলক্ষিত হয় না। তারা রহমানের নাম শ্রবণ করে মুশরিকদের ন্যায় মন্দ কথা বলার ধৃষ্টতা দেখায় না। এমন বিনীত, বিনম্র ও নিরহংকার মুমিনদেরই আল্লাহ তাঁর প্রকৃত বান্দা বলে ঘোষণা করেছেন। প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে সুউচ্চ মর্যাদা দান করেন। বিনয় অর্থ নিজেকে ছোট মনে করা। হজরত ইয়ায ইবনে হিমার (রা.) বলেন, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ আমার কাছে এ মর্মে ওহি নাজিল করেছেন যে, তোমরা বিনয় অবলম্বন করে চলো। অতএব, কেউ কারও ওপর গর্ব করবে না, কেউ কারও ওপর বাড়াবাড়ি করবে না।’ (মুসলিম : ২৮৬৫; আবু দাউদ : ৪৮৯৫) 
যাদের ভেতর নম্রতা থাকে না, তাদের মধ্যে ঔদ্ধত্য জন্মায়। এই আত্মঅহমিকা পারমাণবিক বোমার মতো আত্মবিধ্বংসী। পারমাণবিক বোমা যেমন জাপানের হিরোশিমা, নাগাসাকিতে ধ্বংস করেছে, তেমনি অহংকার মানুষকে এভাবেই ধ্বংস করে দেয়। মানুষকে মর্যাদার আসনে বসিয়ে লাঞ্ছনার ধুলোমলিন পথে নিক্ষেপ করে। অহংকার ও আত্মগরিমার ফলে মানুষ কেবল দুনিয়াতেই অপদস্থ হয় না, পরকালেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। শালীনতাবোধসম্পন্ন ব্যক্তি অহংকারের ন্যায় বদস্বভাব থেকে মুক্ত থাকে। শালীনতাবোধসম্পন্ন লোকেরা হয় সরল স্বভাবের। আর সরলতা মুমিনের জীবনযাত্রার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সরল চরিত্রের মানুষ সবার কাছে প্রিয়। সবাই সরল প্রকৃতির মানুষকে ভালোবাসে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ঈমানদার ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয় আর পাপী, প্রতারক ও নিচু প্রকৃতির হয়।’ (আবু দাউদ : ৪৭৯০; তিরমিজি : ১৯৬৪)
অহংকারমুক্ত ও শালীনতাবোধসম্পন্ন মানুষের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো - সময়, সুযোগ ও শক্তি থাকা সত্ত্বেও শত্রুকে ক্ষমা করে দেওয়া। ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল। মানুষ মানুষকে ক্ষমা করার আদেশ দিয়ে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘অতএব তোমরা ক্ষমা করো এবং উপেক্ষা করে যাও যতক্ষণ না আল্লাহ কোনো নির্দেশ দেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান’ (সুরা বাকারা : ১০৯)। আল্লাহ তায়ালা সুরা আলে ইমরানের ১৩৪ আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘মুমিনরা হলো ক্রোধ সংবরণকারী ও মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ঈমানের শাখা-প্রশাখা সত্তরেরও অধিক। তন্মধ্যে উত্তম শাখা হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলা। আর সর্বাধিক সহজ শাখা হলো মানুষের চলার পথ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া। লজ্জাশীলতা ঈমানের অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা।’ (বুখারি : ৯; মুসলিম : ৩৫)
শালীনতাবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা হয় সুন্দর ও রুচিশীল। আল্লাহ তায়ালা সুন্দর। তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। একে অপরের প্রতি দয়া ও করুণার মনোভাব পোষণ করা এবং অপরকে অনুগ্রহ করা শালীনতাবোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের অন্যতম গুণ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তুমি (অন্যের প্রতি) দয়া করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করেছেন। পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না। 
আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালোবাসেন না’ (সুরা কাসাস : ৭৭)। হজরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়াশীল নয় আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন না’ (বুখারি : ৬০১৩; মুসলিম : ২৩১৯)। 
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যারা অপরের প্রতি দয়াশীল, দয়াময় আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে থাকেন। কাজেই জমিনবাসীর প্রতি দয়া করো তা হলে আকাশের প্রভুও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন’ (আবু দাউদ : ৪৯৪১)। শালীনতাবোধসম্পন্ন লোকদের মধ্যে দয়া-মায়া, প্রেম-প্রীতি, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আমানতদারিতা, ওয়াদারক্ষার ন্যায় বহু মহৎ গুণের সন্নিবেশ ঘটে থাকে। তাই তারা মানুষকে ভালোবাসতে জানে এবং মানুষও তাদের ভালোবাসে। ফলশ্রুতিতে এ মহৎ গুণের অধিকারী ব্যক্তিরা পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনে। এবং আদর্শ সমাজ ও দেশ গঠনে তারা অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আসুন আমরা শালীনতাবোধসম্পন্ন আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য চেষ্টা করি।

Aminur / Aminur