ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

ইসলামে প্রশংসা-নিন্দার নীতি


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৮-১০-২০২৫ দুপুর ১০:১

ভালো বিষয়ে প্রশংসা ধর্ম ও মন্দ বিষয়ে নিন্দা করা মানুষের স্বভাবজাত। কারও ভালো গুণ বা কাজের প্রশংসা ব্যক্তিকে আরও ভালোর দিকে উদ্বুদ্ধ করে। সফলতার দিকে এগিয়ে নেয়। কিন্তু অতিরিক্ত প্রশংসা মানুষকে বিপথগামী করে। নীতির পথ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। ইসলাম যেভাবে মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছে, সর্বোচ্চ প্রশংসায় প্রশংসিত করেছে, ঠিক তেমনই অতিরিক্ত প্রশংসা করাকে নিষেধও করেছে। পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘যারা নিজের কৃতকর্মে সন্তুষ্ট এবং তারা যা করেনি তার জন্য প্রশংসা প্রার্থী, এরূপ লোকদের সম্পর্কে ধারণা করো না যে, তারা শাস্তিবিমুক্ত; বরং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৮)
অতিরিক্ত প্রশংসা ও তোষামোদের দ্বিমুখী ক্ষতি রয়েছে। যে ব্যক্তি প্রশংসা করে আর যার প্রশংসা করা হয়, তারা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত। অতিরিক্তি প্রশংসায় তিন রকমের গুনাহ হয়ে থাকে- এক. মিথ্যাচারের গুনাহ। নিজেদের গোপন কু-উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যারা বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই এমন অবাস্তব প্রশংসা করে, তারা মূলত মিথ্যাচারীর অন্তর্ভুক্ত। আর মিথ্যা হলো সব পাপের মা। এখান থেকেই সব পাপের জন্ম হয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার জবান ও গোপনাঙ্গের হেফাজত করতে পারবে না, সে জাহান্নামি। কাজেই বোঝা গেল, মিথ্যাচারীদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। দুই. মুনাফিকির গুনাহ। যে বিষয়ে নিজের আস্থা ও বিশ্বাস নেই, সে বিষয়ে অন্য কারও প্রশংসা করা প্রকৃতপক্ষে মুনাফিকির শামিল। আর মুনাফিকদের ঠিকানা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। তিন. অন্যকে অবজ্ঞা করার গুনাহ। কোনো ব্যক্তি যদি কারও এমন প্রশংসা করে যে, তার প্রশংসার ফলে যার প্রশংসা বা গুণগান গাওয়া হচ্ছে তাতে ওই ব্যক্তি অন্যদের চোখে অবজ্ঞার পাত্রে পরিণত হয় তা হলে প্রশংসাকারী নীচুতা ও হঠকারিতার পাপে লিপ্ত হবে। মূলত অতিরিক্ত প্রশংসা করতে গিয়ে অনিবার্যভাবেই এসব গুনাহ টেনে আনা হয়।
এ জন্য কারও সামনে কিংবা পেছনে অতিরিক্ত প্রশংসা করা থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কারও সামনে তার প্রশংসা করা তার পিঠে ছুরি মারা বা তার গলা কেটে ফেলার সমান’ (আদাবুল মুফরাদ : ৩৩৫)। অন্য একটি হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ তোমাদের সামনাসামনি প্রশংসা করলে তার মুখে তোমরা পাথর ছুড়ে মারো’ (আদাবুল মুফরাদ : ৩৪০)। জনৈক সাহাবি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অপর এক সাহাবি সম্পর্কে উচ্চ প্রশংসায় লিপ্ত হলেন। তা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আফসোস! তুমি তো তোমার সাথির গর্দান কেটে ফেললে!’ কথাটি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার বললেন। অতঃপর বললেন, ‘যদি কারও প্রশংসা করতেই হয়, তবে সে যেন এভাবে বলে যে, আমি তার ব্যাপারে এমন এমন ধারণা পোষণ করি। কারণ তার প্রকৃত হিসাব মহান আল্লাহ তায়ালাই জানেন।’ (মেশকাত : ৪৮২৭)
ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে মানুষকে তার যথাযথ সম্মান দেওয়া। অতিরিক্ত মর্যাদার অনেক কুফল রয়েছে। যা মর্যদাকৃত ব্যক্তির ধ্বংস বয়ে আনতে পারে। আর এভাবেই বিশৃঙ্খলার গোড়াপত্তন হয়। তাই সব ক্ষেত্রেই চাই ভারসাম্য। মাইমুন ইবনু আবি শাবিব (রহ.) হতে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.)-এর সামনে দিয়ে একজন ভিক্ষুক যাচ্ছিল। তিনি তাকে এক টুকরা রুটি প্রদান করলেন। আবার তার সম্মুখ দিয়ে সজ্জিত পোশাকে এক ব্যক্তি যাচ্ছিল। তাকে তিনি বসালেন এবং খাবার খাওয়ালেন। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘মানুষকে তার মর্যাদা অনুযায়ী স্থান দাও।’ অন্য রেওয়াতে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আদেশ করেছেন মানুষকে তার পদমর্যাদা অনুযায়ী স্থান দিতে।’ (রিয়াদুস সালেহিন : ৩৫৬)
সম্মান খুবই স্পর্শকাতর একটা বিষয়। আর মুসলিম হিসেবে আমাদের এই মাপকাঠি ইসলাম থেকেই নিতে হবে। আর যদি তা না হয় তবে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। রাসুল (সা.)-এর প্রশংসা করার ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। 
অথচ রাসুল (সা.) ছিলেন সব সৌন্দর্যের অধিকারী। কারণ এ বাড়াবাড়ি অন্যান্য উম্মতকে পথভ্রষ্ট করেছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ওমর (রা.)-কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন যে, ‘আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন ঈসা (আ.) সম্পর্কে নাসারা সম্প্রদায় (খ্রিস্টানরা) বাড়াবাড়ি করেছিল। 
আমি তাঁর বান্দা, তাই তোমরা বলবে, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল’ (বুখারি : ৩৪৪৫)। আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। 

Aminur / Aminur