ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

স্ত্রী-সন্তানের জন্য খরচ করাও সদকা


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৯-১০-২০২৫ সকাল ৯:৪৪

মানুষ তার স্ত্রী-পরিবারের জন্য যা খরচ করে তা সদকা হিসেবে পরিগণিত হয় বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত মিকদাদ ইবনে মাদি কারাব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তুমি নিজে যা খাবে তা তোমার জন্য সদকা। তুমি তোমার সন্তানকে যা খাওয়াবে তা তোমার জন্য সদকা। তুমি তোমার স্ত্রীকে যা খাওয়াবে তা তোমার জন্য সদকা। তুমি তোমার চাকরকে যা খাওয়াবে তা তোমার জন্য সদকা’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৭২১৮)। তবে এটি হতে হবে একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য। যখন কোনো মুমিন তার স্ত্রী-পরিবারকে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার করাবে তখনই প্রতিটি খরচের বিনিময়ে সদকার সওয়াব লাভ হবে। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু মাসউদ আল বদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যখন কোনো মুসলমান তার পরিবারের জন্য কিছু খরচ করে, তখন তা তার জন্য সদকায় পরিণত হয়।’ (মুসলিম : ২৩৬৯)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘হজরত ওমর (রা.) একবার হজরত আমর ইবন উমাইয়া (রা.)-এর কাছে আসেন। তখন তিনি বাজারে একটি রেশমি চাদর কেনার জন্য দরদাম করছিলেন। ওমর (রা.) বললেন, হে আমর! এই রেশমি চাদর কী করা হবে? তিনি বললেন, আমি এটি ক্রয় করব, অতঃপর তা সদকা করব। তিনি বললেন, কাকে সদকা করবেন? তিনি বললেন, আমার সঙ্গিনীকে। তিনি বললেন, আপনার সঙ্গিনী কে? তিনি বললেন, আমার স্ত্রী। তিনি বললেন, আপনি আপনার স্ত্রীকে সদকা করবেন? তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের যা দেবে তাই তোমাদের জন্য সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে। তিনি (হজরত উমর) বলেন, হে আমর! আপনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর মিথ্যা আরোপ করবেন না। অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি আয়েশা (রা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত আমি আপনাকে ছাড়ব না। বর্ণনাকারী বলেন, তারা উভয়েই গিয়ে হজরত আয়েশা (রা.)-এর কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন। অতঃপর তাকে আমর বললেন, হে আম্মাজান! ইনি ওমর। তিনি আমাকে বলছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর মিথ্যা আরোপ করবেন না। আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলি, আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, তোমরা যা তাদের (স্ত্রীদের) দেবে তাই তোমাদের জন্য সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে? তিনি বললেন, জি, অবশ্যই! জি, অবশ্যই!’ (মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার : ২৫৫৮)

সাহাবাগণ নবীজির কাছ থেকে এসব শুনে ঘরে গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে এসবের বাস্তবায়নও করতেন। হজরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবীজিকে (সা.) বলতে শুনেছি, একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে পানি পান করালে সওয়াব লাভ করবে; নবীজির মুখে এ কথা শুনে আমি আমার স্ত্রীর কাছে এলাম, অতঃপর তাকে পানি পান করালাম এবং আমি যা নবীজি (সা.)-এর কাছে শুনেছি তা বর্ণনা করলাম।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৭১৯৫)

সন্তান-সন্ততির প্রতি অনুগ্রহ করলে জান্নাত লাভ হয় এবং জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমার কাছে দুটি কন্যাসন্তানসহ এক মিসকিন এলো। আমি তাকে তিনটি খেজুর দিলাম। সে প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিল এবং সে নিজে খাওয়ার জন্য একটি খেজুর মুখের দিকে ওঠাল। কিন্তু তার কন্যা দুজন খেজুরটি খাওয়ার জন্য তার কাছে চাইল। ফলে সে যে খেজুরটি খেতে চেয়েছিল তা দুই ভাগে ভাগ করে দুজনকে দিয়ে দিল। তার বিষয়টি আমাকে বিস্মিত করল। সে যা করল আমি তা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বললাম। অতঃপর নবী (সা.) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন।’ (মুসলিম : ৬৮৬৩)

পরিবারের ভরণপোষণের জন্য চিন্তাফিকির করাও নবীজির নির্দেশনা। হজরত সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হলে নবীজি (সা.) শুশ্রূষার জন্য এলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আমার সব সম্পত্তি অসিয়ত করতে চাই। নবীজি (সা.) বললেন, ‘না। আমি বললাম, তবে অর্ধেক অসিয়ত করি। তিনি (সা.) বললেন, না। আমি বললাম, তবে আমি এক-তৃতীয়াংশ অসিয়ত করি? নবীজি (সা.) বললেন, এক-তৃতীয়াংশ করতে পারো, এক-তৃতীয়াংশই অনেক। তুমি তোমার সন্তান-সন্ততিকে মুখাপেক্ষী করে রেখে যাবে, আর তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে চেয়ে বেড়াবে এর চেয়ে তাদের তুমি অমুখাপেক্ষী করে রেখে যাবে, এটিই উত্তম। তুমি পরিবারের জন্য যা খরচ করবে তাই সদকা। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমা তুলে দেবে তাও সদকা।’ (বুখারি : ২৫৯১)

সন্তান-সন্ততির জন্য যা খরচ করা হয় তাই সর্বশ্রেষ্ঠ দান। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তুমি একটি দিনার আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছ, একটি দিনার দাস মুক্তির কাজে ব্যয় করেছ, একটি দিনার মিসকিনকে দান করেছ, আর একটি দিনার তোমার পরিবারের জন্য খরচ করেছ। এর মধ্যে যে দিনারটি তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ করেছ; তার সওয়াব সবচেয়ে বেশি।’ (মুসলিম : ২৩৫৮)

Aminur / Aminur