বিকেল ৩ টার পর অসহায় হয়ে পড়েন মনপুরা দ্বীপের দেড় লক্ষ মানুষ
                                    দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন উপজেলা মনপুরা। প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই দ্বীপে এখন দেড় লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস।নৌ-পথ ছাড়া এই দ্বীপের মানুষের যাতায়াতের বিকল্প কোনো মাধ্যম নেই। ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের নৌকা আর স্প্রিড বোট দেড় লক্ষ মানুষের যাতায়াত এর একমাত্র ভরসা। এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত উত্তাল মেঘনা পাড়ি দেয় মনপুরা দ্বীপের বাসিন্দারা। যাতায়াতের এই সীমাহীন দুর্ভোগ মনপুরার বাসিন্দারদের কে কাঁদায় প্রতিনিয়ত। বিনা চিকিৎসায় স্বজনের মৃত্যুর শোকও বয়ে বেড়াচ্ছে অনেক পরিবার। দুপুর ৩ টার পর মনপুরার সাথে আর কোন যোগাযোগ থাকে না পাশের উপজেলা গুলোর সাথে । অননুমোদিত স্পিডবোট, মালবাহী ট্রলার কিংবা জরাজীর্ণ সি-ট্রাকে করেই মনপুরা বাসি পাড়ি দেন উত্তাল মেঘনা।
এই দ্বীপবাসীকে মনপুরা রামনেওয়াজ লঞ্চ ঘাট ও জনতা ঘাট দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে আনুমানিক ৪ হাজার যাত্রী ঢাকা – ভোলা, চরফ্যাশন সহ বিভিন্ন স্থানে আসা যাওয়া করেন। কিন্তু বিগত ১০ বছরে এই ঘাট গুলোর আশানুরূপ উন্নয়ন না হওয়ায় এ পথে যাতায়াতকারী শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ সবাইকে পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য ট্যাক্স-টোলসহ বিভিন্ন খাতে বিআইডব্লিউটিএ বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা পায়। তারপরও মনপুরা লঞ্চ ঘাটে কাঁদামাটি মাড়িয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় হাজারও যাত্রীদের।
বর্ষার মৌসুমে মনপুরা রামনেওয়াজ লঞ্চ ঘাটটি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় ফলে যাত্রীসাধারণের দুর্ভোগের অন্ত:নেই।ঘূনিঝড় শক্তির বিরুপ প্রভাবে উত্তাল মেঘনার আছরে পড়া ঢেউয়ের তান্ডবে লঞ্চ ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। জোয়ারের তীব্র স্রোতে লঞ্চ ঘাটটি ভাঙ্গনের ফলে যাত্রীদের কষ্ট হয়। মেঘনা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে লঞ্চে উঠা নামায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।লঞ্চে উঠা নামায় রাস্তাটি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ঘাটের অসাধু শ্রমিকরা যাত্রীদের সেবার নামে রমরমা ব্যবসা করেন। লঞ্চে মালামাল উঠা নামায় বেপরোয়া শ্রমিকরা যাত্রীদের থেকে ইচ্ছে মাফিক টাকা আদায় করছে। এছাড়া ঘাট এজাড়াদার বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ৫ টাকা টিকেট মূল্যা নির্ধারন করা থাকলেও আদায় করা হয় ১০ টাকা করে ।জোয়ারে ডুবে যাওয়া হাত পাচেঁক পথ নৌকায় পাড়ি দিতে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা এতে করে যাত্রীদের অতিরিক্ত ৩০ টাকা গুনতে হয় বর্ষার মৌসুমে ।এছাড়াও নাজুক অবস্থা মনপুরা দক্ষিণ সাকুচিয়া জনতা বাজার থেকে পাশের উপজেলা চরফ্যাশন বেতুয়া ঘাটে আসা যাওয়া করা লঞ্চ ঘাটের । প্রতিদিন এই ঘাট থেকে ফিটনেস বিহীন ২টি কাঠ দিয়ে বানানো লঞ্চ আসা যাওয়া করেন। লঞ্চগুলো দিনে ৪ বার করে এই পথে চলাচল করে ।
এই ঘাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, পন্টুন না থাকায় প্রখর রোদে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের।লঞ্চ উঠতে যাত্রীদের আলাদা নৌকা করে লঞ্চে উঠতে হচ্ছে।যাত্রীপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া নিয়ে নৌকা দিয়ে লঞ্চে উঠিয়ে দেয়। আবার যাত্রীরা ফেরার সময় একইভাবে ২০ টাকা ভাড়া নিয়ে নামিয়ে দেয়। ঘাট ইজারা তোলা হয় ১০ টাকা করে । এতে করে প্রতি যাত্রীর বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা।
অননুমোদিত স্পিডবোট, মালবাহী ট্রলার কিংবা জরাজীর্ণ সি-ট্রাকে করেই মনপুরাবাসী পাড়ি দেন উত্তাল মেঘনা নদী ।
মনপুরা–তজুমদ্দিন নৌপথে ‘এসটি শেখ কামাল’ নামে একটি সি-ট্রাক যাত্রি পারাপার করে । কিন্তু বর্ষা আসলে বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে সি-ট্রাক এ পথে সি–ট্রাকই একমাত্র মনপুরার বৈধ নৌযান। ফলে ভোগান্তির শেষ নেই দ্বীপ উপজেলা মনপুরার দেড় লক্ষাধিক মানুষের। অনন্যোপায় হয়ে হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে অবৈধ ট্রলার বা স্পিডবোটে যাতায়াতের কাজ সারছে মনপুরাবাসী।।এতে করে দুর্ভোগ বাড়ছে যাত্রীদের ।
স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরেও মনপুরা দ্বীপের দেড় লাখ মানুষ পায়নি যাতায়াতের একটি নিরাপদ রুট। এমনকি ভাগ্যে জোটেনি একটি টেকসই স্টিমার ।
মনপুরা লঞ্চ ঘাটে একটি পল্টন দিয়ে পারাপারে সুযোগ পেলেও তার সামনে কোমর সমান কাদা পানি মাড়িয়ে যাত্রীদের উঠতে হয় ঢাকা গামী লঞ্চে।
স্থানীয় শিক্ষার্থীরা জানায়, উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকার বিভিন্ন কলেজে পড়া শোনা করেন ।নৌপথ ছাড়া তাদের বিকল্প যাতায়াতের কোনো পথ নেই। কিন্তু নদীর মাঝখানে গিয়ে লঞ্চে ওঠানামায় চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় নারী শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক বলেন,মেঘনা নদীতে পানি বাড়লে পল্টুন চলে যায় কোমড় সমান পানির নিচে ।এতে করে দুর্ভোগে পড়েন এলাকার রোগী, গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক যাত্রীরা। তাদের লঞ্চে ওঠাতে হিমশিম খেতে হয় স্বজনদের। পন্টুন যদি রাস্তার সমান উঁচু হতো তাহলে এমন ভোগান্তি হতো না।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এক নেতা বলেন ,মনপুরা থেকে যাতায়াতের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এখানে কাদামাটি মাড়িয়ে অননুমোদিত নৌযান দিয়েই উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা।তবে বিআইডব্লিউটিসিএ মনপুরা রুটে চলাচল করা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মনোযোগী নয়। মনপুরা লঞ্চ ঘাট ইজারা দিয়ে প্রতিদিন হাজার টাকার খাজনা আদায় করছে অথচ যাত্রী সেবার বেলায় তেমন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না।
ঢাকাগামী যাত্রী ফাহিম বলেন, চাকরির সুবাদে প্রায় ঢাকা আসা যাওয়া করতে হয়। লঞ্চ ঘাটের রাস্তার দিকে তাকালে আর ঢাকা যেতে মন চায় না। ঢাকা থেকে আবার মনপুরা আসতে মনচয় না । কিন্তু অন্য কোনো উপায় না থাকায় এ পথে আমাদের বাধ্যতামূলক যেতে হয়।
মনপুরায় আগত পর্যটন রকি বলেন, প্রকৃতিতে ভরপুর মনপুরা । এখানে অনেক পর্যটন আসতো । কিন্তু মনপুরার যাতায়েত ব্যবস্থা এত খারাপ না আসলে বুঝতে পাড়তাম না । এখানে ভোর রাতে ঘাটে নামিয়ে দেওয়া হয় । ঘাটে কোন আলো নেই এমনকি ঘাটের রাস্তার যে অবস্থা এখানে মানুষ চলার কোন উপযোগী নেই ।
ভোগান্তির বিষয়টি উল্লেখ করে মনপুরা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মহিব্বুল্যাহ ইলিয়াছ বলেন, অনিরাপদ যাতায়াতের কারণে মনপুরা থেকে বের হওয়ার নাম করলে অনেকে উত্তাল ঢেউয়ের আশঙ্কায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ছোট ট্রলারে যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে ব্যবসায়ীদের মালবাহী ট্রলার ডুবে যাচ্ছে। উপজেলার জরুরি রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক রোগী নৌযানেই মারা যাচ্ছে। নিরাপদ নৌযানের অভাবে উপজেলার দেড় লাখ মানুষ মনপুরায় বন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
এ বিষয় ভোলা বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা মো:শহীদুল ইসলাম জানান, মনমুরা রামনেওয়াজ ঘাটটি বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ঘাট তলিয়ে যায়। আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলেছি দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি জানান,সংস্লিট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে ।মনপুরার যাতায়েত ব্যবস্থা উন্নিত করা হবে ।
এমএসএম / এমএসএম
                আদমদীঘির কাঞ্চনপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
                চট্টগ্রাম ৯ আসনে শামসুল আলমকে বিএনপি’র মনোনয়নের দাবি ১৫ সংগঠনের
                গোপালগঞ্জে গ্রাম আদালত উন্নয়নে ডিএমআইই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
                সিরাজদিখানে প্রবাসীর স্ত্রী শিউলি আক্তারের রহস্যজনক মৃত্যু
                ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময়
                নরসিংদীর চরাঞ্চলে খেয়াঘাটে টাকা আদায় নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০
                ভোলায় ৬৭৮ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ
                মহেশপুরে আলমসাধুর ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক কলেজ ছাত্র নিহত
                ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান
                সংবাদ প্রকাশের পর ডালারপাড়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর অবস্থানে উপজেলা প্রশাসনসহ নৌপুলিশ
                হাতিয়ায় ৬ হাজার ৪০০ কেজি জাটকা জব্দ করেছে কোস্টগার্ড
                আল্লাহ ও রাসূলকে নিয়ে কটুক্তি করায় চাঁদপুরের পুরাণবাজারে বিক্ষোভ মিছিল