জান্নাতে প্রবেশে কিছু বাধা
সবাই চায় জান্নাতের সুখের জীবন। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে জাহান্নামে যেতে চায়। আল্লাহ তায়ালা নিজেও চান না মানুষ জাহান্নামে যাক। তাই যেসব বিষয় জান্নাতের অন্তরায়, সেসব বিষয় তিনি কুরআন-হাদিসে নসিহতের মাধ্যমে মানবজাতিকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ পার্থিব জীবনে শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্ররোচনায়, পরিবেশের তাড়নায়, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, এমন অনেক বড়-বড় গুনাহ করে, যা তার জান্নাতে যাওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। যেসব কাজ মানুষের জান্নাতে যাওয়ার অন্তরায় নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো :
মদপান : কুরআন ও হাদিসে যেসব জিনিসকে কঠোর ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে এবং বেঁচে থাকার জন্য জোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি মাদক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি ও জুয়ার তীর অপবিত্র, শয়তানি কাজ।
সুতরাং এসব পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করো। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজই বপন করতে চায় এবং চায় তোমাদের আল্লাহর জিকির ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে। সুতরাং তোমরা কি ওই সব জিনিস থেকে নিবৃত্ত হবে?’ (সুরা মায়েদা : ৯০-৯১)। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত ওসমান (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা মদপান থেকে বেঁচে থাকো, কারণ মদ সব খারাপতার মূল’ (নাসায়ি : ৫৬৬৭)। আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জেনাকারী যখন জেনা করে তখন সে ঈমানদার থাকে না, চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না, মদ্যপ যখন মদপান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না, ডাকাত যখন ডাকাতি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না।’ (তিরমিজি : ২৬২৫)
সুদ খাওয়া : ইসলামের মধ্যে যেসব বিষয় খুব শক্তভাবে হারাম করা হয়েছে, তার অন্যতম একটি সুদ খাওয়া। সুদের লেনদেনকারী ও সুদের সঙ্গে যেকোনোভাবে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে অত্যন্ত ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আরবি ‘রিবা’ অর্থ সুদ। ‘রিবা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অতিরিক্ত, বর্ধিত। মূলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করাকে সুদ বলে। মোটকথা, বাকিতে কিংবা নগদে সমজাতীয় পণ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে মূল পণ্যের অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয়, তাকে ইসলামি শরিয়তে সুদ বলা হয়। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সুদ খায়, কেয়ামতের দিন তারা সেই ব্যক্তির মতো উঠবে, শয়তান যাকে স্পর্শ দ্বারা পাগল বানিয়ে দিয়েছে। এটা এ জন্য হবে যে, তারা বলেছিল ব্যবসাও তো সুদের মতো। অথচ আল্লাহ বিক্রিকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির কাছে তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে উপদেশ বাণী এসে গেছে, সে যদি সুদি কারবার হতে নিবৃত হয়, অতীতে যা কিছু হয়েছে তা তারই। আর তার অভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহর এখতিয়ারে। আর যে ব্যক্তি পুনরায় সে কাজই করল, তো এরূপ লোক জাহান্নামি হবে। তারা তাতেই সর্বদা থাকবে। আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-সদকাকে বর্ধিত করেন। আর আল্লাহ এমন প্রতিটি লোককে অপছন্দ করেন যে অকৃতজ্ঞ ও পাপিষ্ঠ’ (সুরা বাকারা : ২৭৫-২৭৬)। এ ব্যাপারে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, হজরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক এবং তার ওপর সাক্ষীদ্বয়কে অভিশাপ করেছেন, আর বলেছেন, ওরা সবাই সমান।’ (মুসলিম : ৪১৭৭)
এতিমের মাল ভোগ : ইসলাম দয়ামায়া, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার ধর্ম। তাই তো ইসলামের অনুপম আদর্শ আর শিক্ষা হলো, আল্লাহ প্রদত্ত ধনদৌলত, সহায়-সম্পত্তি নিজের ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজে বসবাসরত অসহায় ও এতিম লোকদের সাহায্য সহযোগিতার ওপর কিংবা তাদের জন্য খরচ করা ও তাদের দায়িত্বভার বহনের ওপর উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের জন্য অভাবনীয় ফজিলতের কথা বলে। আর যারা এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করে তাদের ব্যাপারে কুরআন-হাদিসে কঠোর ধমকি ও শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তারা নিজেদের পেটে কেবল আগুন ভরে। তারা অচিরেই এক জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে’ (সুরা নিসা : ১০)। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাতটি ধ্বংসাত্মক কর্ম হতে দূরে থাকো, সবাই বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) তা কী কী? তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, জাদু করা, ন্যায়সঙ্গত অধিকার ছাড়া আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা করা হারাম করেছেন তা হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের মাল ভক্ষণ করা, যুদ্ধক্ষেত্র হতে যুদ্ধের দিন পলায়ন করা এবং সতী ও মুমিন নারীর চরিত্রে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।’ (বুখারি : ২৭৬৭)
মা-বাবার অবাধ্যতা : পৃথিবীতে মানুষের আগমনের স্বাভাবিক মাধ্যম হচ্ছে মা-বাবা। তাদের মাধ্যমেই প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের নয়নাভিরাম দৃশ্যে ভরা এই অপরূপ সুন্দর পৃথিবীর আলো-বাতাস গ্রহণ করতে পারে। রক্তের সম্পর্কে আত্মীয়স্বজনের মধ্যে মা-বাবার অবস্থান সবার শীর্ষে। কারণ মা-বাবাই হচ্ছে সন্তানের সর্বাধিক নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। মা-বাবা হাজারো ত্যাগ-তিতিক্ষা, আর কুরবানি ও কষ্ট-ক্লেশের মধ্য দিয়ে তিলে তিলে সন্তানকে লালন-পালন করে এবং গঠনে-গড়নে বড় করে তোলে। তাই স্বাভাবিকভাবেই মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ ও উত্তম ব্যবহার করা যুক্তিসংগত ও অপরিহার্য একটি বিষয়। এর বিপরীতে মা-বাবার অবাধ্য হওয়া এবং তাদের নানাভাবে কষ্ট দেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, মা-বাবার অবাধ্যাচরণ করা, অন্যায়ভাবে কোনো প্রাণ হত্যা করা, মিথ্যা কসম খাওয়া’ (বুখারি : ৬৬৭৫)। মানুষের জান্নাতে যাওয়ার পথে যেসব কাজ প্রধান অন্তরায় সেসব কাজের বিবরণ ওপরে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ঈমানদার মুমিন-মুসলমানদের ওই কাজগুলো এড়িয়ে চলার তওফিক দান করুন।
Aminur / Aminur
জান্নাতে প্রবেশে কিছু বাধা
মিজানের পাল্লা ভারী হবে যেভাবে
কসম করতে সতর্কতা জরুরি
চার দোষে ঈমান নষ্ট
রোগী দেখতে যাওয়ার দোয়া
ওমরাহ পালনে অফুরন্ত সওয়াব
ইসলামে ন্যায়বিচারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
হাদিয়া বিনিময়ে ভালোবাসা বাড়ে
মোবাইল দেখে কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে কি না
নফল নামাজ নিষেধ যখন
ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য
বিশুদ্ধ আকিদা অর্জনের গুরুত্ব