ঢাকা সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

কসম করতে সতর্কতা জরুরি


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৩-১১-২০২৫ দুপুর ১১:৯

মানুষ তার কথা বা দাবি দৃঢ় করতে কসম বা শপথের আশ্রয় নেয়। কোনো বিষয়ে কসম করা মানে সে বিষয়ে চূড়ান্ত নিশ্চয়তার ঘোষণা করা। ইসলামেও কসম সম্পর্কে বিধিবিধান রয়েছে। তবে যেকোনো কথায় কসম করা কাম্য নয়। যদিও কসমের ব্যবহার অনেক বেশি বেড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। কথাবার্তার তুচ্ছ জায়গাতেও মানুষ মায়ের কসম, কাবার কসম, সন্তানের মাথার কসম কিংবা জীবনের কসম বলে ফেলে মনে করে- এতে কথার গুরুত্ব বাড়ে বা বক্তব্য সত্য প্রমাণিত হয়। অথচ এই অভ্যাস অনুধাবন ছাড়াই আমাদের ঈমানকে গভীর ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ইসলাম কসমের বিষয়ে সুস্পষ্ট, দৃঢ় এবং সতর্ক নির্দেশনা প্রদান করেছে, যা সঠিকভাবে জানা থাকলে কসম উচ্চারণের আগে মানুষ নিশ্চয়ই বহুবার ভাবত।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন সৃষ্টির কসম করেছেন- সূর্য, চাঁদ, রাত্রি, প্রভাত, সময়, এমনকি কলমেরও। তিনি বলেন, ‘শপথ সূর্যের ও তাঁর আলোর’ (সুরা শামস : ১)। এবং ‘শপথ ভোরের’ (সুরা ফাজর : ১)। স্রষ্টা হিসেবে তাঁর পক্ষে তাঁর সৃষ্টির কসম করা স্বাভাবিক; কিন্তু মানুষ যেহেতু সৃষ্টির অংশ, তাই কোনো সৃষ্টির নামে মানুষের শপথ করা অনুমোদিত নয়। সৃষ্টির নামে কসম করা মূলত স্রষ্টার স্থানকে অবমাননার শামিল, যা একটি গুরুতর ধর্মীয় ভুল।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যে কসম করবে, সে যেন আল্লাহর নামেই করে, অন্য কারও নামে নয়’ (সহিহ বুখারি : ৬৬৪৬)। সমাজে আমরা প্রায়ই শুনি, ‘আমি কাবার কসম করে বলছি’, ‘সন্তানের মাথার কসম’ বা ‘জীবনের কসম’- এগুলো আমাদের কাছে সাধারণ অভ্যাস মনে হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ। বিশেষত কেউ যদি মিথ্যা কসম করে বসে, তা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত। আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের শপথকে প্রতারণার হাতিয়ার বানিও না’ (সুরা নাহল : ৯৪)। আরও তীব্র সতর্কবার্তা এসেছে নবী (সা.)-এর মুখ থেকে, ‘যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম করে, সে শিরক করে।’ (তিরমিজি, হাদিস ১৫৩৫)
কসম কখনোই তুচ্ছ কোনো বিষয় নয়; বরং এটি মুমিনের সত্যবাদিতা ও ঈমানের একটি সূক্ষ্ম পরীক্ষাস্থল। একজন ঈমানদারের উচিত নিজের মুখের অভ্যাসকে সংযত করা, অযথা কসম না করা এবং মিথ্যা কসমের মতো ভয়াবহ গুনাহ থেকে কঠোরভাবে দূরে থাকা। সত্যবাদিতা একজন মুমিনের অলংকার; আর মিথ্যা কসম তার ঈমানকে কলুষিত করে। সমাজে সত্য, সততা ও নৈতিকতার আলো ছড়িয়ে দিতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন আমাদের মুখের ভাষা ও আচরণে সতর্কতা। আজ যদি আমরা সত্যকে আঁকড়ে ধরি, আল্লাহর ভয়কে অন্তরে ধারণ করি এবং কসমের বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা আন্তরিকভাবে মেনে চলি, তবে সমাজে ভণ্ডামি, প্রতারণা ও মিথ্যা ধীরে ধীরে সরে যাবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সত্যের ওপর স্থির রাখুন, নিষিদ্ধ ও মিথ্যা কসম থেকে রক্ষা করুন এবং এমন জীবন দান করুন, যা তাঁর সন্তুষ্টির প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে।

Aminur / Aminur