ঢাকা শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫

বিশুদ্ধ আকিদা অর্জনের গুরুত্ব


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১০-১১-২০২৫ দুপুর ১০:৫৩

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আকিদা। এটি একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ বিশ্বাস। ইসলামের পরিভাষায় আকিদা বলতে মানুষের অন্তরে লালিত আদর্শ বা বিশ্বাসকে বোঝায়। সেটা সত্য-মিথ্যা যে কোনোটাই হতে পারে। কুরআন-সুন্নাহর মাধ্যমে প্রমাণিত বিশ্বাসকে বিশুদ্ধ আকিদা বলা হয়। 
এর বিপরীত হলে সেটি ভ্রান্ত আকিদা বলে বিবেচিত হয়। সে আকিদা দিয়ে পরকালে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। বিশুদ্ধ আকিদা মানে ‘আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ তথা সাহাবিগণ ও তাদের অনুসারী আলেমদের সম্মিলিতি আকিদা। পরকালে মুক্তি পেতে হলে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক বিশুদ্ধ আকিদা বা মতাদর্শ অন্তরে লালন করতে হবে। 
ইসলামের যে মৌলিক বিশ্বাসগুলো রয়েছে যেমন মহান আল্লাহর প্রতি তাঁর সত্তা ও গুণাবলিসহ দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন, তাঁর ফেরেশতা, প্রেরিত কিতাব, রাসুল, তাকদিরের ভালোমন্দ, পরকাল, হাশর, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়াবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন সব কুরআন-হাদিস মোতাবেক হতে হবে। 
সে বিশ্বাসের মধ্যে কুফর-শিরিক কিংবা নেফাক থাকতে পারবে না। মনগড়া মতবাদ, চিন্তভাবনার দখল থাকতে পারবে না। এমন হলে ব্যক্তির যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। 
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর যারা কুফরি করে তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। পরকালে আল্লাহ তাদের আমল বরবাদ করে দেবেন। তা এ জন্য যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের আমল নিষ্ফল করে দেবেন’ (সুরা মুহাম্মাদ : ৮)। আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করা হয়েছে যদি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো তবে আমল নিষ্ফল হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সুরা জুমার : ৬৫)।  
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তারা যে আমল করেছিল আমি তার কাছে যাব এবং তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (সুরা ফুরকান : ২৩)। অশুদ্ধ আকিদা পোষণকারীদের আমলের দৃষ্টান্ত টেনে বলা হয়েছে, ‘সেসব এমন ছাইয়ের মতো যা ঘূর্ণিঝড়ের দিনে প্রচণ্ড বাতাস বহন করে নিয়ে যায়। সেসব পরকালে কোনো উপকারে আসবে না’ (সুরা ইবরাহিম : ১৮)। আরও বলা হয়েছে, ‘তাদের আমলগুলো মরুভূমির মরীচিকার মতো হবে, পিপাসা কাতর ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে; কিন্তু যখন কাছে যায় তখন দেখে সেসব কিছুই নয়।’ (সুরা নুর : ৩৯)
তবে বিভ্রান্ত ও বিচ্যুত আকিদা-বিশ্বাস পোষণকারীদের মধ্যে যারা পার্থিব জীবনে টুকটাক ভালো কাজ করবে, তার বিনিময়ে তারা পৃথিবীতে আরামের জীবন পাবে। বর্ণিত হয়েছে, ‘অবশ্যই কোনো কাফের ভালো কাজ করলে তাকে দুনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্য দান করা হবে’ (মুসলিম : ২৮০৮)। 
মুনাফিকদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তারা থাকবে জাহান্নামে সর্বনিম্ন ও নিকৃষ্ট স্তরে এবং সেখানে তাদের কোনো সাহায্যকারী থাকবে না’ (সুরা নিসা : ২৫)। বেদাতকারীদের (দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজনকারী) প্রসঙ্গে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যাতে আমার অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে’ (মুসলিম : ১৭১৮)। আরও বলেছেন, ‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা প্রতিটি নতুন বিষয়ই বেদাত। আর প্রতিটি বেদাতই গোমরাহি।’ (আবু দাউদ : ৪৬০৭)
যুগে যুগে বহু ভ্রান্ত আকিদার লোকদের উদ্ভব হয়েছে। এখনও হচ্ছে, ভবিষ্যতে হতেই থাকবে। তাই খুব ভালোভাবে সহিহ আকিদা তথা আহলুল সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা আয়ত্ত করে নিতে হবে। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাত বলতে নবী করিম (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) যে নীতি-আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন তা বোঝানো হয়।
যে ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বনি ইসরাইল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ দলে। সাবধান, জেনে রেখো! এদের মধ্যে একদল ছাড়া সবদলই জাহান্নামে যাবে।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, জান্নাতি দল কোনটি?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবি, তথা আমি ও আমার সাহাবিরা যে নীতি-আদর্শের ওপর রয়েছি’ (তিরমিজি : ২৬৪১)। এখান থেকেই এসেছে ‘আহলুস সুন্নাহ’ তথা সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত দল কথাটি।
আকিদা সঠিক থাকলে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (মুসলিম : ৯৩)। এমনকি ব্যক্তি পাপী হলেও আল্লাহ চাইলে তা মাফ করে সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন। 
যেমন এক ব্যক্তির ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, ‘কেয়ামতের দিন সে শুধু কালেমার বদৌলতে ৯৯টি পাপভর্তি আমলনামা থাকা সত্ত্বেও কোনো রকম শাস্তিভোগ ছাড়া জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে চলে যাবে’ (তিরমিজি : ২৬৩৯)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিশুদ্ধ আকিদা নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার তওফিক দান করুন। 

Aminur / Aminur