ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য
সমাজে ভালো-মন্দ মানুষ মিলেই আমরা বসবাস করি। তবে এর মধ্যে কিছু মানুষ আছে অন্যের ক্ষতিসাধনে ব্যস্ত থাকে সদা সর্বদাই। অন্যের সফলতা দেখে নিজের চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায়। প্রতিবেশীকে কথার দ্বারা আঘাত দিয়ে শান্তি লাভ করতে চায়। আমরা নিশ্চয়ই জানি অন্যের ক্ষতি করলে সেই ক্ষতির মধ্যে নিজেকে পড়তে হয়। সমাজে খারাপ মানুষের কোনো মূল্য নেই। তাই দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে ভালো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা কর্তব্য। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহ্যও করা যাবে না। যে অন্যের ক্ষতি করল আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে তার সঙ্গে শত্রুতা করবে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন।’ (দারাকুতনি : ৩০৭৯)
আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের সব ধরনের ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এর দ্বারা বোঝা যায়, ‘ক্ষতি’ প্রতিহত করা ইসলামের মূলনীতি। সে নিজেকে যেমন ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে, তেমনি অন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে।
হাদিসের ব্যাখ্যাকার মোল্লা আলী কারি (রহ.) বলেন, এই কথা স্পষ্ট যে, শারীরিক, আর্থিক, পার্থিব ও পরকালীন সব ধরনের ক্ষতি এই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত (মিরকাতুল মাফাতিহ : ৮/৩১৫৬)। এই হাদিসকে মূলনীতি ধরে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, ক্ষতিকর ও হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে নিজেকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেওয়া হারাম। অন্যের ক্ষতি করা নিষিদ্ধ। জীবন, সম্পদ, পরিবার, সম্ভ্রমসহ সব ধরনের ক্ষতিকর বিষয় পরিহারযোগ্য।
ইসলামি শরিয়তের সাধারণ বিধান হলো, ক্ষতিকর যেকোনো বিষয় নিষিদ্ধ। ক্ষতি হওয়ার আগে প্রতিহত করা এবং ক্ষতি হয়ে গেলে তা দূর করা কর্তব্য। ইসলাম স্পষ্টভাবে নিজের ও অন্যের ক্ষতি করতে নিষেধ করেছে। যারা অন্যদের ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেয় হাদিসে তাদের অভিশপ্ত বলা হয়েছে। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতিসাধন করে বা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত’ (তিরমিজি : ১৯৪১)। নবীজি আরও বলেন, ‘যে অন্যের ক্ষতি করে আল্লাহ তার ক্ষতি করেন এবং যে অন্যের শত্রুতা করে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেন’ (আবু দাউদ : ৩৬৩৫)। সুতরাং মুমিনের উচিত নিজেকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা এবং অন্যকেও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা।
ক্ষতি করা ইসলামে নিষিদ্ধ হলেও আমাদের সমাজে কিছু মানুষের অন্যায্য ও অনৈতিক ব্যবহারে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে মানুষ। বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। দিন দিন মানুষের মানসিক বিকৃতি বাড়ছে। হতাশা কিংবা অস্থিরতা বিরাজ করছে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজ জীবনে; বেঁচে থাকার প্রতিটি ধাপে। মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে মানুষ পাশবিক হয়ে উঠছে সামান্য স্বার্থের কারণে। অফিসে, পরিবারে, সমাজে, রাজনীতিতে, দলে ও সভা-সমিতিসহ নানা কাজে নিজেকে জাহির করা, নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা, কিছু বাড়তি সুবিধা নেওয়ার জন্য মানুষ মিথ্যাচার, অপবাদ, নিন্দা, ষড়যন্ত্র, চাকরিচ্যুতি থেকে শুরু করে হত্যার মতো জঘন্য কাজ করছে। নিজের জেদ ও আক্রোশের লাগাম টানতে পারছে না মানুষ। একে অন্যের ক্ষতিসাধন করা একেবারে মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অথচ হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যের অনিষ্ট তথা ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকাকে সদকা বা দান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হজরত আবু মুসা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের দান-খয়রাত করা ওয়াজিব। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, সে যদি তা করতে সক্ষম না হয় বা তা করতে না পারে? তখন নবীজি বললেন, তা হলে সে স্বহস্তে কাজ করে নিজেকে লাভবান করবে এবং দান-খয়রাত করবে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, যদি তার সে সামর্থ্য না থাকে বা সে তা না করতে পারে? তিনি বললেন, তা হলে সে দুস্থ-বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে।
সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, সে যদি তাও না করতে পারে? তিনি বললেন, তা হলে সে সৎকাজের আদেশ দেবে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, যদি সে তাও না করতে পারে? তিনি বললেন, তা হলে সে অন্যের ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকবে। এটিই তার জন্য দানস্বরূপ। (বুখারি)
এ প্রসঙ্গে আরও একটি হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে। হজরত আবু জর (রা.) বলেন, নবীজি (সা.)-কে বলা হলো, সর্বোত্তম আমল কী? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তাঁর পথে সংগ্রাম করা। বলা হলো, আজাদ করার জন্য সর্বোত্তম গোলাম কে? তিনি বললেন, যার মূল্য সর্বাধিক এবং যে নিজ মনিব-পরিবারের অধিক প্রিয়। প্রশ্নকারী বললেন, আপনার কী মত, আমি যদি কোনো কাজ করতে সক্ষম না হই? তিনি বললেন, তা হলে কোনো কারিগরের কাজে সাহায্য করো অথবা অনভিজ্ঞ লোকের কাজ করে দাও। তিনি বললেন, আপনি কী বলবেন, যদি তা করতে আমি অপারগ হই? তিনি বললেন, তোমার অনিষ্ট থেকে লোকজনকে নিরাপদ থাকতে দাও। কেননা তাও সদকা যা তোমার নিজের জন্য করতে পারো (আদাবুল মুফরাদ : ২২৫)। তাই আসুন, সমাজে মিলেমিশে থাকি, অন্যের ক্ষতিসাধন না করে, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সুন্দর সমাজ গড়ি।
Aminur / Aminur
মোবাইল দেখে কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে কি না
নফল নামাজ নিষেধ যখন
ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য
বিশুদ্ধ আকিদা অর্জনের গুরুত্ব
জুলুম-অত্যাচারের ভয়াবহ পরিণাম
দিনের শুরুতে রিজিক বণ্টন হয়
দায়িত্বশীল মুমিনের মর্যাদা ও পুরস্কার
বিপদ-মসিবতে ভেঙে পড়বেন না
পুরুষের সতর কতটুকু
জ্ঞানচর্চায় মেলে পুণ্য ও সম্মান
পরামর্শ মাফিক কাজ করা সুন্নত
মানুষের আত্মার প্রকার