ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

রেলের ২০০ কোচ ক্রয়

চিঠি চালাচালিতেই ১০ বছর!


মোহাম্মদ শাহজাহান সাজু  photo মোহাম্মদ শাহজাহান সাজু
প্রকাশিত: ৮-৬-২০২১ দুপুর ২:৩১

টেন্ডারার্স ফাইন্যান্সিংয়ে ২০০ মিটারগেজ কোচ কেনায় বিশেষ অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ২০১১ সালের ২০ জুলাই এ অনুমোদন দেয়া হলেও প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে এর ছয় বছর পর। আর ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল কোচগুলো কেনায় অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন নেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সে বছর ৪ অক্টোবর প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়।

সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চীনের সিআরআর সিসিফ্যান কোম্পানির প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যদিও এ কোম্পানিকে নামসর্বস্ব উল্লেখ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় ইআরডি। এ অবস্থায়ই কোচগুলো কেনায় অর্থায়নের বিষয়ে অনুমোদন নিতে প্রস্তাবটি পাঠানো হয় ইআরডিতে। তবে অর্থায়নের প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের আগে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন ও ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) অনুমোদন গ্রহণের সুপারিশ করে ইআরডি। এজন্য ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪-১৫ সালে ভারতীয় ঋণচুক্তির (এলওসি) আওতায় ১২০ টি ব্রডগেজ কোচ কেনা হয়। এ ব্যয়ের সঙ্গে ৩ শতাংশ স্ফীতি ধরে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এছাড়া কোচগুলো বাস্তবতার নিরিখে নতুন নতুন ও উন্নত সুবিধাদি সংযোজন করার প্রস্তাব রয়েছে। অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজন অনুযায়ী ২০০টি ক্যারেজের মূল্য ১ হাজার ৬৭৮ কোটি  টাকা, অর্থাৎ প্রতিটি কোচের গড়মূল্য ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। স্পেয়ার পার্টসসহ এর দর ৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং মোট প্রকল্প ব্যয় অনুযায়ী এ দর ৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা অত্যাধিক বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

বাংলাদেশ রেলওয়েতে সাধারণত পূর্ববর্তী অনুমোদিত প্রকল্পে কোচের দরের ওপর ভিত্তি করে নতুন কোচের জন্য দর নির্ধারণ করা হয়। সময়ে সময়ে এগুলোর স্পেসিফিকেশনও পরিবর্তিত হয়। তাই ‘সিঙ্গেল স্টেজ টু ইনভেলাপ’ পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে নতুন কোচ কেনা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশন জানায়, আমাদের দেশে সাধারণত ইন্দোনেশিয়া, ভারত বা চীন থেকে কোচ কেনা হয়। এক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে দর সংগ্রহ করা সম্ভব। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিনিধিও একই মত ব্যক্ত করেন।

এ পর্যায়ে শুধু পূর্বের কেনা দরের ওপর ভিত্তি করে নতুন ক্যারেজের দর নির্ধারণ করা যাবে। বাজারে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ওয়েবসাইট/সরাসরি মাধ্যমে আনুমানিক দর সংগ্রহ করে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি দায়িত্বশীল কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা করে দর নির্ধারণ করতে হবে। দর বিশ্লেষণের ভিত্তি যুক্তিসঙ্গত মর্মে প্রতীয়মান না হলে প্রকল্পটির ওপর পুনরায় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা হবে।

জানা গেছে, সরবরাহকারীর ঋণে (টেন্ডারার্স ফাইন্যান্সিং) ২০০টি মিটারগেজ কোচ কেনায় ২০১১ সালে প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। এজন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে সরবরাহের জন্য নির্বাচিত হয় চীনের সিআরআরসি সিফ্যান কোম্পানি লিমিটেড। যদিও কোম্পানির সক্ষমতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। আর কোচগুলো সরবরাহে কঠিন শর্তে ঋণ দেবে চীনের আরেক কোম্পানি। তবে নানা জটিলতায় ১০ বছর ধরে ঝুলছে কোচগুলো কেনার প্রকল্পটি। অর্থ্যাৎ চিঠি চালাচালিতেই এ প্রকল্পের দশ বছর পার হয়েছে। বদল হয়েছে একাধিক পিডিও। 

এদিকে নামসর্বস্ব এ কোম্পানিটির সক্ষমতা নিয়ে গত বছর প্রশ্ন তোলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটি। এজন্য কোম্পানিটির সক্ষমতা যাচাইয়ের সুপারিশ করেছিল ইআরডি। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও করোনার কারণে তা শুরু করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ঋণ চুক্তিও সই হয়নি। ফলে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর প্রকল্পটি একনেকের (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন নেয়া হয়। আর সে বছর ২১ নভেম্বর ঋণ নেগোসিয়েশন ও ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আবার ইআরডিতে প্রস্তাব পাঠায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। তবে নানা জটিলতা থাকায় ঋণের শর্ত নিয়ে দরকষাকষি ও ঋণচুক্তির বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠায় ইআরডি। এক্ষেত্রে ক্রয় কার্যক্রমটি ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য করে এ প্রক্রিয়াটি শুধু রেলওয়ের আলোচ্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মতামত দেন প্রধানমন্ত্রী।

২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর সিসিজিপি কর্তৃক ক্রয় প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়। আর ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর কোচগুলো কেনার জন্য বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা হয়। এর পর প্রায় আড়াই বছর পেরুলেও এখনও ঋণ চুক্তি সই হয়নি। যদিও ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর সরবরাহকারী কোম্পানির নাম নিয়ে আপত্তি তোলে সিপিটিইউ। পরে ২০১৯ সালের ১৫ মে বিষয়টি সিসিজিপিকে জানায় রেলপথ মন্ত্রণালয়।

তথ্যমতে, ২০০ কোচ কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আর কোচগুলো কেনায় ঋণ দেবে চীনের ক্রেডিট এগ্রিকোল করপোরেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। এক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছে আট কোটি ৪৯ লাখ ৭০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ ইউরো। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

এদিকে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় মাস মেয়াদি ইউরো আন্তঃব্যাংক অফার রেটের সঙ্গে (ইউরিবর) দুই শতাংশ যোগ করে নির্ধারিত হার। পাশাপাশি ২৫ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে পরিমাণ ঋণ প্রতি বছর ছাড় হবে, সেক্ষেত্রে বাকিটার ওপর কমিটমেন্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া ঋণের অ্যারেঞ্জমেন্ট ফি দিতে হবে এক দশমিক তিন শতাংশ। আর ১৫ বছর মেয়াদি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ধরা হয়েছে তিন বছর।

ইআরডির দরকষাকষি শেষে ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই চিঠি দেয়া হয় ঋণদানকারী কোম্পানি ক্রেডিট এগ্রিকোল করপোরেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংককে। আর ২০ সেপ্টেম্বরে প্রস্তাবটি পাঠানো হয় অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে। পরে তা অনুমোদন করে কমিটি। তবে এক্ষেত্রে দুটি শর্ত দেয় অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটি।

প্রথমত, ঋণচুক্তি সইয়ের আগে সরবরাহকারী কোম্পানির মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা যাচাই করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যেসব দেশে তাদের তৈরি যাত্রীবাহী কোচ সরবরাহ করেছে, সেসব দেশে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাতে হবে। তারা কোম্পানিটির সরবরাহকৃত কোচের গুণগত মান ও কর্মদক্ষতা যাচাই করবে। পাশাপাশি কোম্পানিটির সক্ষমতাও যাচাই করবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
যদিও করোনার জন্য চীনে বা সরবরাহকারীর পণ্য আমদানিকারক কোনো দেশে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়নি বলে গত ১১ নভেম্বর জানায় রেলওয়ে। এক্ষেত্রে শর্তটি প্রমার্জনার জন্য ৩০ ডিসেম্বর ইআরডি তথ্য চায়। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।এ-সংক্রান্ত বৈঠকে কয়েকটি সুপারিশও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা এবং দ্রুত ঋণ চুক্তি সইয়ের উদ্যোগ নেয়ার বিষয় উল্লেখযোগ্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২০০ মিটারগেজ কোচ কেনা প্রকল্পটির পরিচালক মৃণাল কান্তি বণিক জানান, অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সুপারিশ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের ভিত্তিতে কোচগুলোর সরবরাহকারী কোম্পানিটির সক্ষমতা যাচাইয়ে প্রতিনিধিদল গঠন করা হচ্ছে। শিগগিরই তারা কাজ শুরু করবেন।

চীনের কোম্পানিটির সক্ষমতার বিষয়ে তিনি বলেন, সক্ষমতার বিষয়টি সন্তুষজনক হলেই ঋণ-চুক্তি হবে। তাছাড়া বিকল্প ক্রেডিট লাইন অনুসরনে সিসিইএ যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহনের অনুমতি প্রদান করে, যা পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ অনুমোদন পায়। সরবরাহ ঋণ/বায়ার্স ক্রেডিট নীতিমালা ও পদ্ধতি ২০০৬ এর সাথে আলোচ্য প্রস্তাবটির কাঠামো সামঞ্জস্য করা এবং আর্থিক করা এবং আর্থিক প্রস্তাব নেগোসিয়েশন ও আর্থিক প্রস্তাব অনুমোদনে কালক্ষেপন হয় বলেও জানান পিডি। এছাড়া কোভিড-১৯ এর কারনে কোম্পানিটির সক্ষমতার শর্ত পরিপালন করা সম্বব হচ্ছে না বলেও তিনি জানান। 

উল্লেখ্য, বর্তমানে রেলওয়ের ৪২৮টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে। এর মধ্যে ১৮৭টির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আগামী ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে রেলওয়ের সব ট্র্যাক ব্রডগেজে রূপান্তর করা হবে। এছাড়া যমুনা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে ও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প সম্পন্ন হলে সারা দেশে ব্রডগেজ ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এজন্য পুরোনো কোচগুলো প্রতিস্থাপনসহ ২-৪ বছরের মধ্যে নতুন ৪০০ কোচ দরকার হবে। তাই নতুন কোচগুলো কেনা জরুরি বলে ডিপিপি উল্লেখ করা হয়েছে।

এমএসএম / জামান

ভুয়া লাইসেন্সে হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন লেলিন মুন্সি

গণপূর্তের ইএম কারখানা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফের দুর্নীতির রাজত্ব

দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীগন

‘এনবিআর’এ স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে থাকা চক্রের চক্রান্ত

প্রাণ ধ্বংসকারী কোম্পানি প্রাণ

বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

কোতোয়ালীতে অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ