চন্দনাইশে গ্রাম-গঞ্চে টুল-পিঁড়িতে বসে চুল-দাড়ি কাটার দৃশ্য বিলুপ্তির পথে
প্রাচীন প্রথাগত ভাবে সারা দেশের মতো চন্দনাইশ উপজেলার গ্রাম-গঞ্জ,পাড়ায় পাড়ায় এবং হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জায়গাতে চোখে পড়তো ভ্রাম্যমাণ নাপিত/নরসুন্দর এবং সেলুন। কখনো দেখা যেত কোনো গাছের নিচে অথবা বাজার এর মোড়ায় বসে,আবার কখনো ব্যাগে একটি আয়না নিয়ে গ্রামে গ্রামে, বাস স্ট্যান্ডে আয়না লাগিয়ে বসে আছেন এসব নাপিত/নরসুন্দর।
গ্রামের পাড়ায় নাপিতদের চুল কাটার পরে মজুরি হিসেবে দেয়া হতো চাল। খরচ কম হওয়ায় চুল-দাড়ি কামাতে সেখানে ভিড় করতেন সাধারণ মানুষ। তবে দিন দিন আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে গেছে শহুরে জীবন, নির্মিত হয়েছে এয়ার কন্ডিশন সমৃদ্ধ সেলুন। এই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে চন্দনাইশেও গ্রামে-গঞ্চে এখন বিলুপ্তির পথে টুল-পিঁড়িতে বসে চুল-দাড়ি কাটার দৃশ্য। অথচ এক সময়ে চন্দনাইশের বিভিন্ন জায়গাতে নাপিতরা চুল কাটার বা ছাঁটার যন্ত্রপাতি নিয়ে বসেন গ্রাম-গঞ্চে ও চরাঞ্চলের হাটবাজার গুলোতে।
বর্তমানে চন্দনাইশ উপজেলার প্রধান প্রধান শহর-বন্দর ও গ্রামের হাটবাজার গুলোতে রয়েছে এসি ও নন-এসি সেলুন। নারীদের মত পুরুষদের জন্য রয়েছে পারলার। সেসব সেলুন ও পারলারে চুল ও দাড়ি কাটার জন্য রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মেশিন। এই আধুনিক যন্ত্রপাতি মেশিনের ছোঁয়ায় কালক্রমে হারিয়ে গেছে সেই ভ্রাম্যমাণ নাপীতের চুল ও দাড়ি কাটার চিত্র। তবে কয়েকটি জায়গাতে যেমন-খাঁনহাট বাজার,দোহাজারী রেল লাইন বাজার,বৈলতলি বাজারে দেখা গেছে ভ্রাম্যমাণ নাপিত/নরসুন্দর। চুল কাটার বা ছাঁটার যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে আছেন চুল কাটার জন্য। প্রতিদিন হাটবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারাই সেই নাপিত/নরসুন্দরদের কাস্টমার হয়।
খাঁনহাট বাজারে এক নাপিত/নরসুন্দরের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে তিনি দাড়ি ও চুল কেটে তার সংসার চালাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাটে বাজার করতে আসা মানুষজন তার কাস্টমার। সে সপ্তাহিক বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে চুল ও দাড়ি কেটে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। প্রতিজনের চুল কাটতে ২০-৩০ টাকা এবং শেভ বা দাড়ি ঠিক করতে ১৫-২০ টাকা নেন।
খাঁনহাট সপ্তাহিক বাজারে, বাজার করতে আসা এক কাস্টমার জানান,ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে হাটে এসে এই ভ্রাম্যমাণ নাপিত/ নরসুন্দরদের কাছে চুল কাটাতাম। এখন আমি আমার বাবার মত আমার সন্তানদের এনে চুল কাটাচ্ছি। তবে সময়ে পরিবর্তনের সাথে সাথে এই নাপিত/ নরসুন্দর বিলুপ্তির পথে।
তিনি আরো বলেন, আমি একজন দিনমজুর মানুষ। দিনে এনে দিনে খাই। এখানে আধুনিক এসি/নন এসি সেলুনে চুল ও দাড়ি কাটাতে গেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাগে। আর এদের কাছে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টাকায় চুল ও দাড়ি কাটানো যায়। আধুনিক সেলুন আর নাপিত/নরসুন্দর এদের কাজের মান প্রায় সমান। যার ফলে এখানে এসে আমি ও আমার সন্তানদের চুল কাটাই।
এক সাক্ষাতে একজন নাপিত/নরসুন্দর বলেন, এ পেশা আমার দাদার ছিল। দাদার মৃত্যুর পরে আমার বাবাও ছিলেন এ পেশায়। বাবার কাছ থেকেই আমার এ পেশার হাতেখড়ি শেখা। বাবার মৃত্যুর পরে আমিই হাল ধরেছি। টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। জানি না কতদিন পারবো। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই নাপিত/নরসুন্দর ভ্রাম্যমাণ পেশা যায় যায় অবস্থা।
তিনি আরো বলেন, এই খাঁনহাট বাজারে সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। প্রতি হাটে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। প্রতিটি হাটে চুল ও দাড়ি কেটে ৭০০-৮০০ টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়েই তার ৫জন সদস্যের সংসার চালাচ্ছে এই নাপিত/নরসুন্দর।
শাফিন / জামান