টাকা ছাড়া মিলছে না টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড
নিম্নআয়ের মানুষের কাছ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে নিয়ে পত্নীতলা উপজেলা সদর নজিপুর পৌরসভায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্ড করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর শাহানাজ বেগমের বিরুদ্ধে। সোমবার (২৮ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য ফ্যামিলি কার্ড পেতে নওগাঁর পত্নীতলার নজিপুর পৌরসভার ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের সুফলভোগীদের গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা।
জানা গেছে, ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ভর্তুকি দিয়ে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। তাই দেশের নিম্নআয়ের ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে টিসিবি পণ্য বিক্রি করতে সুফলভোগীদের তালিকা প্রণয়ন করার দায়িত্ব পায় নজিপুর পৌরসভা। তালিকা চূড়ান্তের পর সুফলভোগীদের হাতে ফ্যামিলি কার্ড তুলে দেয়া হয়। এ কার্ডধারী ব্যক্তিরা আসন্ন রমজানে দুই কিস্তিতে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের সুযোগ পাবেন। কার্ড ছাড়া কেউ এ সুযোগ পাবেন না। তাই স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা প্রণয়ন করে বিনামূল্যে কার্ড পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
তালিকা চূড়ান্তের পর কার্ডধারীদের ছবিসংবলিত কার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের দায়িত্বও সংশ্লিষ্ট নজিপুর পৌরসভাকে দেয়া হয়। পৌরসভা ১৫০০ পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কার্ড প্রস্তুত হওয়ার পর সুফলভোগীদের হাতে পৌঁছে দিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। এ সুযোগ পেয়ে নজিপুর পৌরসভার ৪, ৫, ৬নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর খরচ বাবদ কার্ডপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
নজিপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কানন সরদার বলেন, মহিলা কাউন্সিলর আমার কাছে ১০০ টাকা চেয়েছিলেন। পরে আমি ৫০ টাকা দিতে চাই। টাকা দিতে পারায় আমার কাছে থেকে জোর করে কার্ড ফেরত নিয়ে যান। টাকা ছাড়া কার্ড কাউকে দেয়া হচ্ছে না।
৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রেহেনার স্বামী তালেব বলেন, আমার কাছ থেকে কার্ড দেয়ার জন্য ৫০ টাকা নিয়ে তারপরে কার্ড দিয়েছেন। শুধু আমি নই, আমাদের এখানে সকলের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে কার্ড দিয়েছেন।
৫নং ওয়ার্ডের আয়েশার বাবা ফারুক জানান, কার্ড দেয়ার আগে ২০ টাকা নিয়েছিল। টিসিবির কার্ড দেয়ার পর আরো ৩০ টাকা দিতে হয়েছে।
এমন অনেক অভিযোগ নজিপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের অনেক সুফলভোগী মানুষের। টাকা ছাড়া মিলছে না টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড। কার্ড নিতে সুফলভোগীদের গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা ।
টাকা নিয়ে টিসিবির কার্ড দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা কাউন্সিলর শাহানাজ বেগম বলেন, আমার পেছনে অনেক মানুষ লেগেছে। আমি কারো কাছে থেকে কোনো টাকা নেইনি।
এ বিষয়ে জানতে নজিপুর পৌরসভার মেয়র রেজাউল কবির বলেন, কোনো মাধ্যমে আমি খবরটা জানতে পেরেছি। সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি ওই মহিলা কাউন্সিলরকে ডেকে আনব। পরবর্তীতে এরকম কর্মকাণ্ড কেউ যেন করতে না পারে এ ব্যাপারে পৌরসভা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এ সময় তিনি এই প্রতিবেদককে সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধও করেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু সোয়াইব খান জানান, টিসিবির কার্ড সরকার ফ্রিতে দিচ্ছে। কার্ডের জন্য কোনো টাকা নেয়ার সুযোগ নেই।
এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চেয়ে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এমএসএম / জামান