ঢাকা মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫

একজন সচিব ও এক শহীদ বুদ্ধিজীবী মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্নপূরণের গল্প


জাহিদুল ইসলাম শিশির photo জাহিদুল ইসলাম শিশির
প্রকাশিত: ৫-৬-২০২২ দুপুর ৩:২

মুক্তিযুদ্ধা যাদুঘরে গিয়ে জানা গেল,শহীদ শেখ আব্দুস সালামের একটি স্বপ্নের কথা। সেই সাথে স্বাধীনতার সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে পাক বাহিনীর হাতে ধৃত হয়ে স্ত্রীকে লেখা একটি চিঠির কথা। যে চিঠির সারমর্ম হচ্ছে  আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করছি। আমি জানি বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। স্বাধীন সে মাটিতে আমার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করার দায়িত্বটি রয়ে গেল তোমার উপর। এই যুদ্ধেও তুমি জিতবে। এটাই আমার চাওয়া-আমার সন্তানেরা যেন ভাল থাকে।  

চিঠিটি নড়াইলের কালিয়া অঞ্চলে অতি জনপ্রিয় তৎকালিন থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুস সালাম মাস্টারের। গল্পটি এখন সামনে আসার কারণ হচ্ছে স্বাধীনতার পর শত প্রতিকুলতার মাঝে  এক মা তার সন্তানদের সত্যিকারার্থেই উচ্চশিক্ষিত করেছেন। সেই গর্বিত জয়ীতা মাতা  ও শহীদ  বুদ্ধিজীবি মুক্তিযোদ্ধা পিতার দ্বিতীয় কন্যা ড. শেখ মুসলিমামুনের স্বামী হাসানুজ্জামান কল্লোল সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে পদোন্নতি  পেয়েছেন। আগামী ১৪ জুন তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে। আলাপচারিতায় পদোন্নতি প্রাপ্ত  সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল জানান, শহীদ শেখ আব্দুস সালাম আমরা শ্বশুর, এটা আমার গর্বের একটি জায়গা। তাকে হানাদার পাক সেনারা  নির্মমভাবে হত্যা করে। জানা যায়,  যশোরের ঝুম ঝুম পুর এলাকায়  কমান্ডার হিসেবে তিনি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধের কমান্ডার হিসেবে এক পর্যায়ে  পাক সেনাদের হাতে আটক হন তিনি। তাকে যশোর ক্যান্টমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। 

সেখানে এক বেলুচ অফিসার তাকে দেখে ও তার কথা শুনে বুঝতে পারেন তিনি একজন অত্যন্ত  মেধাবিও উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। শহীদ শেখ আব্দুস সালাম ভাল ইংরেজি এবং উর্দূ বলতে পারতেন। অফিসার তাকে দুটি অপশন দেয়। এক. জয় বাংলার শ্লোগান  দিতে পারবে না , দুই: আওয়ামীলীগ করতে পারবে না। এ দুটিতে রাজি হলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। অথবা তাকে মেরে ফেলা হবে। এ জন্য তাকে একরাত সময় দেয়া হয়। পরদিন অফিসার তাকে ডেকে পাঠান। জানতে চান তিনি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শহীদ শেখ আব্দুস সালাম তখন অফিসারকে জানান  আওয়ামীলীগকে যেহেতু এখনো নিষিদ্ধ করা হয়নি তাই দেশের যে কোন নাগরিক এ দল করার অধিকার রাখে। তিনি সচেতন নাগরিক হিসেবে এ দল ত্যাগ করতে পারবেন  না। আর জয় বাংলা হচ্ছে আমাদের জাতীয় শ্লোগান। এটাও ত্যাগ করা সম্ভব নয়। তাতে যে কোন সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেন। অর্থাৎ তাকে বেচে থাকার অপসন দেয়া হয়েছিল। তিনি বেচে থাকার অপসন গ্রহণ না করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন।  

শহীদ স্বামীর স্মৃতি বুকে নিয়ে সন্তানদের  উচ্চ শিক্ষিত করার সংগ্রাম করেছেন জয়ীতা পুরুষ্কার প্রাপ্ত  আমার শাশুড়ী । আমার স্ত্রী ড. শেখ মুসলিমামুনসহ তাদের সব ভাই বোনকে  তিনি উচ্চ শিক্ষিত করেছেন । আমি সে  পরিবারের মেয়ের জামাই এটা আমার গর্ব । 

জানা যায়, স্বাধীনতার পরবর্তি সময় জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান শেখ আবদুস সালাম মাস্টারের স্মৃতি বিজড়িত কলেজটিকে আব্দুস সালাম কলেজ, ও তার নিজ ইউনিয়ন টিকে সালামাবাদ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জামাই ও মুক্তিযুদ্ধর চেতনাধারি কর্মকর্তা হিসেবে হাসানুজ্জামান কল্লোলকে সচিব করাই তিনি মাননীয় প্রধান মন্ত্রনীর প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। 

এ দিকে নড়াইলের কালিয়ায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় শহীদ শেখ আব্দুস সালামের পরিবার, তাদের পিতার স্বপ্ন পুরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তারা  ভীষণ ভাবে আনন্দিত ও  কৃতজ্ঞ । একই সাথে কালিয়া নড়াইলের প্রবীন মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল জনগণ তাদের জামাতার পদোন্নতিতে আনন্দিত। 

সেই সাথে তার পদোন্নতিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীবর্গ ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি  তিনি কৃতজ্ঞতা জানান। একই সাথে তার উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনে দেশবাসির দোয়া কামনা করেন। 

 

এমএসএম / জামান