তানোরে আল-মদিনা হিমাগারের বিরুদ্ধে পৌর মেয়রের মামলা

 

এতে আসামি করা হয়েছে কোল্ড স্টোরেজের মালিক রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার ঘোড়ামাড়া গ্রামের মোহাম্মদ হাসানকে (৪৫)। এছাড়াও তার দুই ছেলেসহ ম্যানেজার আশরাফুল হককে (৪৫) আসামি করা হয়।। এমন জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই এলাকার সব মহলে আনন্দ বিরাজ করছে। কারণ, অনেকের জমির পুরো টাকা ও কয়েকজন কর্মচারী মারা গেলেও কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। নামমাত্র দায়সারা কিছু দিয়ে এবং মিষ্টি কথা ও মামলার ভয়ভীতি-হুমকি দিয়ে থামিয়ে দেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফলে মদিনা হিমাগারের এমন জালিয়াতির কারণে তাদের জেলহাজতে পাঠানো উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

 

মামলার বিষয়ে মালিক হাসান জানান, মাত্র ১১ হাজার টাকার ট্রেড লাইসেন্স নকল ছিল। এটার জন্য সব দায় ম্যানেজারের। আমি তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছি। আমি সরকারকে কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স দিয়ে থাকি। মাত্র ১১ হাজার টাকার জন্য জালিয়াতি করব এটা কি আপনার বিশ্বাস হয়?

 

তিনি আরো জানান, মামলা হয়েছে, জবাব দেয়া হবে। আদালত যেটা সঠিক মনে করবে, সেটাতেই সন্তোষ প্রকাশ করব।

 

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, গত ৯ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ আল-মদিনা সিডস্ নামের হিমাগারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেন। ওই সময় হিগামারের হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স দেখে সন্দেহ হলে জব্দ করেন। কাগজ-পত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হককে নির্দেশ দেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায়, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল বা চলতি বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স ফাঁকি দিতে ট্রেড লাইসেন্স জালিয়াতি করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সেটাই প্রমাণ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্যানেল মেয়র। এরপরও মেয়র হিমাগারের মালিক হাসান ও ম্যানেজার আশরাফুলকে একাধিকবার ডাকলেও কোনো গুরুত্ব দেননি তারা। এ কারণে তাদের নামে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা করা হয়।

 

অথচ হিমাগার মালিক হাসান মিথ্যাচার করে বলেছিলেন, ট্রেড লাইসেন্স জাল। তাকে পুনরায় হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়ে বলা হলে তিনি জানান, সরকারকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার কর দেই। আর পৌরসভায় কর দেব না? আসলে ম্যানেজারসহ আরেকজন কর্মচারী এসব করেছে। এর জন্য চাকরি থেকে বাদ দিয়েছি। তাদের অপরাধের জন্য বাদ দিলেন, আপনিও তো অপরাধী, তাহলে কি করবেন- জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে জানান, যা হবে আদালতের মাধ্যমেই হোক।

 

প্যানেল মেয়র আরব আলী জানান, আল-মদিনা সিডস্ নামে হিমাগারে হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স মিলে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রতারণা করতেই এমন জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়। তারা এতবড় ব্যবসায়ী হয়েও যদি কর লাইসেন্স জালিয়াতি করতে পারেন, তাহলে আরো কত কী জালিয়াতি করেছে বলা কষ্টকর।

 

ইউএনও পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, তাদের কাগজ-পত্র দেখে সন্দেহ হলে পৌর মেয়রকে যাচাই-বাছাই করে জালিয়াতি প্রমাণ হলে মামলা করতে নির্দেশ দেয়া হয়।

 

পৌর মেয়র ইমরুল হক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাদের কাগজ-পত্র জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় মামলা করা হয়েছে।

 

স্থানীয়রা জানান, হিমাগার চালু হওয়ার পর নানা দুর্ঘটনায় ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা যান। তার মধ্যে পৌর সংরক্ষিত কাউন্সিলর মমেনা আহম্মেদের জামাই সাহাবুল স্টোর কিপারে চাকরি করতেন। কিন্তু হিমাগারের ভেতর থেকে আলুবোঝাই ট্রাকচাপায় মারা যান তিনি।

 

মমেনা আহম্মেদ বলেন, হিমাগারের ভেতরে মারা গেছে। ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা হলে তারা বলেন, মানুষ কি সারাজীবন বেঁচে থাকবে? আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়েছে। এ পর্যন্ত তারা কয়েকবার যৎসামান্য টাকা দিয়ে দিনের পর দিন ঠেলছেন আর মিষ্টি কথা শোনাচ্ছেন। শুধু আমার জামাই য়, মারা গেছেন বেড়লপাড়া গ্রামের রফিকুল, গাগরন্দ গ্রামের আলাউদ্দিন। এদের কিছুই দেয়নি মানুষখেকো হিমাগারের মালিক হাসান। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মেশিন অপারেটর সাপের কামড়ে, একই জেলার ট্রলিচালক ও বডিগার্ডসহ বিভিন্ন এলাকার ৯ জন কর্মচারী  হিমাগারের ভেতরেই মারা যান।

 

হিমাগারের সাথে বেশকিছু ব্যবসা করা ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, আমরা অনেক হিমাগারের সাথে ব্যবসা করেছি। কিন্তু এর মতো চিটার-বাটপার দেখিনি। আমরাও জানি আলুর ব্যবসায় যেমন হয় সিন্ডিকেট, তেমনি চলে চিটারি। তবে আল-মদিনা সিডসে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি চলে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা করা অবস্থায় নয়জন লোক মারা গেল। তাদের পরিবারকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি।

 

স্থানীয়রা জানান, তাদের হিমাগারে অনেক কৃষকের রয়েছে অভিশাপ, যে কারণে এত লোক মারা গেল। কাগজ-পত্র জালিয়াতি, জমি কিনে পুরো টাকা না দেয়া, ওই প্রতিষ্ঠান ভালো থাকতে পারে না। এছাড়াও চলতি মৌসুমে হিগামারে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য হাওয়া না পাওয়ায় শত শত মণ আলু পচে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।