চট্টগ্রামের ফয়’স লেক ধ্বংসের খেলায় মেতেছে একটি চক্র
চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ ঘিরে সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর তাগিদে কৃত্রিমভাবে গড়ে তোলা ফয়’স লেক ধ্বংসের পায়তারা করছে কনকর্ড ও রেলের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে গঠিত একটি চক্র। সুপেয় পানির পাশাপাশি এটি বর্তমানে একটি বিনোদন স্পটও। অথচ ওই চক্রটি এই লেকে মাচ চাষ করার নামে লেক ও এর আশেপাশের পরিবেশ ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠেছে। এখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হলে পানি দুষিত হয়ে পানের অনুপযোগী হওয়াসহ পরিবেশ দুষণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিন্তু এই হীন কাজটির জন্য রেল মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব মো. সেলিম রেজা তাদের অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায় সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ১৯২৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের তৈরি করা এই লেক থেকে রেলে কর্মরত ও এর আশেপাশের প্রায় ৫০ হাজার লোকের পানির চাহিদা মিটে থাকে। কিন্তু এতগুলো লোকের ব্যবহারের এই জলধারায় পানির মান নষ্ট না করে মাছ চাষের ইচ্ছে পোষণ করে রেল মন্ত্রনালয়ে আবেদন করে কনকর্ড। এর সুত্র ধরে মতামতের জন্য রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলকে চিঠি দেয় মন্ত্রনালয়। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হলে পানি দুষিত হওয়া সহ পরিবেশ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন রেলওয়ের অনেক কর্মকর্তাও। ফলে মাছ চাষের অনুমতি না দেওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছেন রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা।
এব্যপারে রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম বলেন, লেকে মাছ চাষের অনুমতি চেয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় মাছ চাষ করা যায় কিনা যাচাই-বাছাই করতে ইতোমধ্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চিঠিও দিয়েছে। অথচ এই লেক হতে দৈনিক ৩৫ লাখ গ্যালন পানি শোধন করা হয়। এসব পানি ব্যবহার করে রেলওয়ের প্রায় পাঁচ হাজার কর্মচারীর পরিবার ও আশেপাশের অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। এই লেকে মাছচাষ করলে পানির গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী জানান গত ২০০৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের ৩৩৬.৬২ একর জায়গা ৫০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডকে। সেখানে শর্ত ছিল লেকের পানিতে চলাচলরত বোটগুলো ব্যাটারি দিয়ে চালাতে হবে। কিন্তু সেই শর্ত না মেনে কনকর্ড কর্তৃপক্ষ ব্যাটারির পরিবর্তে ডিজেলচালিত ইঞ্জিনবোট ব্যবহার করে যাচ্ছে। এর ফলে বোট থেকে নির্গত তেল ও ধোয়া লেকের পানি ও আশেপাশের পরিবেশ দূষণ করছে। তবে শর্তভঙ্গের কারণে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই রেল সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ৫০ বছরের এই লিজ চুক্তি বাতিল করে। একই বছর ১৫ অক্টোবর চুক্তি বাতিল বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ নেয় কনকর্ড। ওই সময় থেকে আড়াই বছর এভাবে বিনাখরচে রেলের জায়গায় একক আধিপত্য চালায় কনকর্ড। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৯ অক্টোবর আবারও ৬ মাস স্থগিত আদেশ পায় তারা।
হাইকোর্টে মামলা চলা অবস্থায় এবার তারা লেকে মাছচাষ করার আগ্রহ দেখায়। তবে পানি দুষন ঠেকাতে কৃত্রিম খাবার ব্যবহার না করার শর্তে মাছ চাষের অনুমতি চেয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। তিনি বলেন আগে যেহেতু তাদের শর্ত ভঙ্গের রেকর্ড রয়েছে এবং তা না করতে দেওয়ায় আমাদেরকে আদালতে নিয়েছে তাই তাদের কথায় বিশ্বাস করার কোন কারন নেই। তারা এবারও নানা রকম কথা বলে কোন রকমে অনুমতি নিতে পারলে আবারও শর্ত ভঙ্গ করবে আর বাধাঁ দিলেই আমাদেরকে আদালত পর্যন্ত টানবে।
এছাড়া ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আশেপাশের অবৈধ দখলদার ও কনকর্ডের নির্মিত কর্টেজের ব্যবহৃত বর্জ্য ও ময়লা পানি প্রতিনিয়ত সরাসরি লেকে পড়ার কারনে এর পানি মারাত্মকভাবে দুষিত হচ্ছে যা দৃশ্যমান। উক্ত দুষিত পানি পাহাতলী এলাকার বাসাবাড়ি ও অফিস ভবনে ফিল্টারিং করে ব্যবহার করা হচ্ছে যার ফলে অনেকের শরীরে বাসা বাধছে নানা রকম রোগ জীবানু। তৎকালীন সময়ে রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের জিএম ও প্রধান প্রকৌশলী লেকের পানি দুষণ রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তবে তা ওই পর্যন্তই রয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্য ফয়’স লেক:
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে পরিচিত ফয়’স লেকে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা। তারা বলছেন এমনিতেই এই লেকটি বর্তমানে খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। একদিকে হাজার হাজার লোকের সুপেয় পানির চাহিদা মেটায় এই লেকটি অন্যদিকে এটি একটি পর্যটন স্পট। এছাড়া এর আশেপাশে রয়েছে অনেক চিকিৎসা কেন্দ্র তাই পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখতে এটি সংরক্ষণ করা দরকার।
জানা যায় ফয়’স লেক চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম হ্রদ। এটি ১৯২৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে খনন করা হয় এবং সেসময় পাহাড়তলী লেক হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ইংরেজ রেল প্রকৌশলী ফয়-এর নামে ফয়েজ লেক নামকরণ করা হয়।
হ্রদটি তৈরির উদ্দেশ্য ছিল, রেল কলোনিতে বসবাসকারী লোকদের নিকট পানি পৌঁছানো। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাভুক্ত। বেশ বড় মাপের (৩৩৬ একর জমির উপর) এই হ্রদটি পাহাড়ের এক শীর্ষ থেকে আরেক শীর্ষের মধ্যবর্তী একটি সংকীর্ণ উপত্যকায় আড়াআড়ি ভাবে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সৃষ্ট। বাঁধটি চট্টগ্রাম শহরের উত্তর দিকের পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহের দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে এই লেকটিকে সৃষ্টি করেছে। ফয়েজ লেকের পাশেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, পাহাড়তলি চক্ষু হাসপাতাল, সদ্য প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামের সর্বাধুনিক হাসপাতাল ইমপেরিয়াল হাসপাতাল। রয়েছে চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, লায়ন চক্ষু হাসপাতাল ও চিটাগাং ভেটেরিনারী ইউনিভার্সিটি। কিছু দুরে (পাঁচ কিলোমিটার প্রায়) টাইগার পাস এলাকায় রয়েছে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত উম্মুক্ত থিয়েটার সিআরবি ও সাত রাস্তার মোড়, রয়েছে রেলওয়ে হাসপাতাল ও রেলওয়ে চট্টগ্রামের সদর দপ্তর, তার সামান্য উত্তর পাশে রয়েছে এম,এ আজিজ স্টেডিয়াম ও হোটেল রেডিসন ব্লু। রয়েছে চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় বাটালি পাহাড়।
পাহাড়তলী রেলস্টেশনের দক্ষিণ কোল ঘেঁষে আরেকটি কৃত্রিম হ্রদ রয়েছে। ফয়েজ লেক তৈরির পূর্বে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১৯২০ সালে এটি খনন করে। দুটি হ্রদই আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। চট্টগ্রাম শহরের ব্যাপক এলাকায় বিশেষ করে নিকটবর্তী রেলওয়ে কলোনিতে পানি সরবরাহের জন্য এই জলাধার দুটি খনন হয়েছিলো।
হ্রদটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কনকর্ড ফয়েজ লেক কনকর্ড নামে একটি বিনোদন উদ্যান স্থাপন করে, যেখানে দর্শনার্থীদের জন্য হ্রদে নৌকা ভ্রমণ, রেস্তোরাঁ, ট্র্যাকিং এবং কনসার্ট এর আয়োজন করা হয়ে থাকে। ফয়েজ লেকের পাশেই রয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। বর্তমানে এখানে বিরল প্রজাতির বিভিন্ন রকমের পাখি, বানর, হরিণ, বাঘ, ভালুক, অজগর, জেব্রা ও ময়ুর রয়েছে। হরিণ পার্কে হরিণ দেখার ব্যবস্থা আছে। এখানে দর্শনার্থীরা কটেজ ভাড়া করে থাকতে পারেন। ফয়েজ লেকের কোল ঘেঁষেই উত্তর পশ্চিম পাশে রয়েছে সি ওয়ার্লড। আবার ফয়েজ লেকের দক্ষিন পশ্চিম পাশে (তিন কিলোমিটার প্রায়) দুরত্বে রয়েছে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। ফয়েজ হ্রদের আশেপাশের মনোরম পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে প্রতি বছর দেশি বিদেশি বহু পর্যটক এখানে ছুটে আসেন।
এব্যপারে মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এস এম নাজের হোছাইন বলেন ফয়’স লেক চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্য এবং হাজার হাজার পরিবারের সুপেয় পানির জোগান দিয়ে থাকে এটি তাই বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের অনুমতি না দেওয়ার দাবী জানাই।
এমএসএম / এমএসএম
থামছেই না ছড়াও, দখল করে ভবন নির্মাণ কাজ
বাঁশখালীতে রিক্সা চালক শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটির বার্ষিক সাধারণ সভা
নোয়াখালীতে যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ সভা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ -২ এ,ধানের শীষের কান্ডারী ইঞ্জি: মাসুদ'কে চায় সাধারণ মানুষ ও বিএনপি'র নেতাকর্মীরা
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জুয়েলের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ
কাউনিয়ায় মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টায় পিতা পুলিশের হাতে
বাঁশখালীতে জমি বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত, গ্রেপ্তার-৩
নন্দীগ্রামে সিএনজি চালককে অপহরণ ও মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ
সুবর্ণচরে আশার আলো সমাজ কল্যাণ সংগঠনের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি
সহকারী এটর্নি জেনারেল হলেন পেকুয়ার কেএম সাইফুল ইসলাম
৭ই নভেম্বর উদযাপন ও খন্দকার নাসিরের মনোনয়ন এর দাবিতে মধুখালী বিএনপির জরুরী সভা
ভোলা-১ আসনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে বিজেপি, নির্বাচনি প্রচার ও র্যালী অনুষ্ঠিত