ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত ঝিনাইদহের সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

ঝিনাইদহ জেলা সদরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ঝিনাইদহের সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। সরকারি এই কার্যালয়টি ঘুষ, অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে এমন পরিচিতিই ছড়িয়েছে জেলার সবখানে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকার ডিজিটাল প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু ঝিনাইদহ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতি,সাব-রেজিষ্ট্রার,কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান এর বিপরীতে। ফলে প্রকাশ্যে চলছে লাখ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেন!
দলিল সম্পাদনের নামে দিনের পর দিন অসাধু দলিল লেখকদের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের ঘুষের মাধ্যমে চলছে দলিল রেজিস্ট্রির কাজ। এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করা যায় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এটা এখন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে।
সাব-রেজিস্ট্রারের এজলাসে দেখা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রার আমেনা বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন নকলনবিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাকির হোসেন। তিনিই দলিলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকার নির্ধারিত আয়কর ও ভ্যাটের টাকার ব্যাংক ড্রাফট দেয়ার পরও অতিরিক্ত ঘুষের টাকা দিতে হয়। দলিল লেখকের ফি, স্টাম্প খরচ, এন ফিসের টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকা সিন্ডিকেটের ঘুষ । দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও সেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। ঘুষের এ টাকা ছাড়া জমির দলিল সম্পাদিত হয় না। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জমির বিভিন্ন ত্রুটি দেখিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এ টাকা সিন্ডিকেটের সমন্বয়ে ভাগ-ভাটোয়ারা করা হচ্ছে। এছাড়াও দলিলের নকল তুলতে গেলে সরকারি ফির দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।
ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ঝিনাইদহ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির পেছনে রয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার আমেনা বেগম। তার সঙ্গে রয়েছেন নকলনবিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জাকির হোসেন, স্থানীয় দলিল লেখকদের একটি চক্র, দলিল লেখক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা। তাদের যোগসাজশে প্রতিদিনই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং দলিল লেখক সমিতির দ্বারা পরিচালিত একটি চক্র রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে। অথচ ঝিনাইদহ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতিমুক্ত এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বিভিন্ন দলিল লেখক ও সেবাগ্রহীতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা দলিল লেখক সমিতি এবং সাব-রেজিস্ট্রারের নামে সংগ্রহ করা হয়। সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা না দিলে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। সেবাপ্রার্থীরা সব সময়ই অসহায়। দলিলদাতা ও গ্রহীতাদের হয়রানি এবং অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করে থাকেন। দলিল লেখক সমিতির নামে সিন্ডিকেট গঠন করে এই টাকা আদায় করা হয় জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,সদর সাব-রেজিস্ট্রার আমেনা বেগম, দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক আক্তারুজ্জামান লাইসেন নং ৮২,দলিল লেখক আসাদুল আলম লাইসেন্স নং ১৩২ ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবিশ এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন এর বিরুদ্ধে ঘোষণার দলিলসহ বিভিন্ন প্রকার দলিল রেজিস্ট্রি সম্পাদনের নামে অতিরিক্ত ঘুষ দাবি সংক্রান্ত অভিযোগ দাখিল করেছেনে ১৯ এপ্রিল ২০২২ তারিখে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক বরাবর।হেবা দলিলে মাত্র এক হাজার টাকা খরচ হলেও সমিতি নেয় ১০/১৫ হাজার টাকা। এমনিভাবে প্রতি মাসে কৃষকের রক্ত চুষে লাল হচ্ছে এই সিন্ডিকেট।বাড়ি, গাড়ি ও মাঠে জমি কিনে শহরবাসি এবং গ্রামবাসিকে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছে এই সিন্ডিকেট। শহরের মানুষ তাদের এই আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার রহস্য পায় না।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই জানে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া দলিল রেজিষ্ট্রি হয় না। জেলা আইনশৃঙখলা কমিটির মাসিক সভায় বহুবার সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কমিটির সম্মানিত সদস্যগন বক্তব্য রেখেছেন। তার পরও সবাই সব জেনেও নিরব! সবাই সব জেনেও কী করবে, তারা পারলে এর মধ্যে থেকে অনেকে কমিশন পাচ্ছে! শুধু সাধারণ জনগণের ক্ষতির খাতটা বাড়ছে। এতে তো কারো কোনো মাথা-ব্যথা নেই।ঝিনাইদহ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় দলিল দাতা ও গ্রহীতারা এবং জনসাধারণ উৎকোচ প্রদানে বাধ্য হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম নতুন কোনো ঘটনা নয়। সদর উপজেলার সাধারণ মানুষ বরাবরই দলিল লেখক সমিতি এবং সাব রেজিস্ট্রারের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল। প্রতিটি দলিল সম্পাদনে কাগজপত্র সঠিক হলেও যেমন ঘুষ দিতে হয়, তেমনি কাগজপত্রে কোনো ক্রুটি থাকলেও দিতে হয় ঘুষ। এমন জঘন্য ও বিশ্রী দশার কবলে নিষ্পেষিত হচ্ছে ঝিনাইদহের সাধারণ মানুষ।কৃষকরা জমি কেনা-বেচা করতে এলে তাদের সরকারের ফি আর দলিল লেখকদের পারিশ্রমিক ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। কিন্তু দেখা যায় দলিল প্রতি দলিল লেখক সমিতি জোরপূর্বক পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণ করেন। এটা অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই রক্তচোষা সিন্ডিকেট ভেঙে সাধারণ কৃষকদের মুক্ত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান ঝিনাইদহ বাসির।ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন,পুলিশ বিভাগ,র্যাবসহ সরকারিভাবে এমন অবস্থার প্রশমনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
ঝিনাইদহ সদর সাব-রেজিস্ট্রার আমেনা বেগমকে এ বিষয়ে একধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এমএসএম / জামান

নড়াইলে গণঅধিকার পরিষদ কর্তৃক লায়ন নুর ইসলামকে সংবর্ধনা

চেয়ারম্যান থেকে সাধারণ সম্পাদক জনআস্থার প্রতীক সাইফুল আলম মৃধা

জয়পুরহাটে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে ইউডিআরটি প্রশিক্ষণ এর উদ্বোধন

রাণীশংকৈলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে

নড়াইলে গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে তুলারামপুর ব্রিজের সৌন্দর্যবর্ধন উদ্বোধন

রাণীনগরে রাইডো ব্রেইন ব্যাটল কুইজ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন

অভয়নগরে ৫২তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম, অভিযানে ৭ দালালের কারাদন্ড

শিবচরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

সাতকানিয়া কেরানীহাটের মাছ বাবুল গ্রেফতার

কোটালীপাড়ায় শরীরে আগুন দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা

আশুলিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ইয়াবা ও গাঁজাসহ ৫ জন মাদক ব্যবসায়ী আটক
