পাহাড়খেকোদের পুনর্বাসন নয়, কঠিন শাস্তি দরকার
পাহাড়, টিলা, সমতল, নদী-হ্রদ ও সাগর বেষ্টিত প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে গড়া ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম। শুধু তাই নয় প্রাকৃতি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও রয়েছে এর গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা। কিন্তু কতিপয় অতিলোভী ভূমিদস্যু ও পাহাড় খেকোদের কবলে পড়ে প্রায় বিপন্ন হতে চলেছে এই প্রকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত চট্টগ্রাম। এর ফলে হুমকির মুখে পড়ছে দেশ ও দেশের অর্থনীতি। শুধু তাই নয়, পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে জলবায়ু, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও পাহাড় ধসের ফলে কৃষি ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিও সাধিত হয়েছে। তাই দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থে পাহাড়খেকোদের পুনর্বাসন না করে কঠিন শাস্তি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তবে প্রকৃতপক্ষেই যারা অসহায় তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার।
তারা বলছেন, মানুষ অভাবের তাড়নায় পাহাড় ধ্বংস করছেনা, লোভে পড়ে কতিপয় প্রভাবশালীরা ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য পাহাড় ধ্বংস করে বসতি স্থাপন করে ভাড়ায় লাগিয়েছে। আর যারা এই জঘন্য কাজটি করছে তারা প্রচলিত আইনকে না মেনেই দিনের পর দিন এভাবে চলছে। তাদেরকে পুনর্বাসন করা মানেই হলো পুরস্কৃত করা আর আজকে যদি কোন অপরাধীকে পুনর্বাসনের নামে পুরস্কৃত করা হয় কাল আবার এই পুরস্কারের লোভে আরেক দল গিয়ে পাহাড় কাটা শুরু করবে। তাই দেশের প্রচলিত আইনে এমন শাস্তি প্রদান করা হোক যাতে এই শাস্তি দেখে ভবিষ্যতে আর কেউ পাহাড় ধ্বংস করার কথা কল্পনাও করতে না পারে।
পাহাড় ধ্বংসের খেলায় মেতে লোভী চক্রের সদস্যরা সাময়িক কিছু অর্থ পেলেও দেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা অপুরনীয়। এই ক্ষতিকর কাজের সাথে চট্টগ্রাম ওয়াসা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা ছাড়াও কথিত রাজনীতির ছত্রছায়াও কোনভাবেই দায় এড়াতে পারেনা। এক্ষনি তার লাগাম টেনে না ধরলে আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা অপরাধী হয়ে থাকব।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরে ৫টি মৌজায় মোট খাস জমির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৮শ একর। এর পূর্ব ও উত্তরে রয়েছে চট্টগ্রাম সেনানিবাস ও বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণে চট্টগ্রাম শহর। কিন্তু কতিপয় ভূমি দস্যু নব্বই দশক থেকে এখানে পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপন্ন করে জঙ্গল ছলিমপুরকে অবৈধ বসবাসকারী অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে গড়ে তুলেছে। অবৈধভাবে পাহাড় কেটে তৈরি করা ঝুকিপূর্ণ প্লটগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অপকর্ম করে আসা সন্ত্রাসীদের নিকট শতাংশ প্রতি ২০ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হারে বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাংবাদিকসহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থা যাতে এ এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় প্রবেশের মুখে ব্যারিকেডসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
তাছাড়া রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে গোপন ক্যামেরাসহ সোর্স নিয়োগ করে প্রশাসনের পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে কোন অভিযানের বিষয়ে জঙ্গল ছলিমপুরের প্রবেশমুখে অবস্থানরত সোর্সের মাধ্যমে সন্ত্রসীরা আগে থেকেই জেনে য়ায়, ফলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী উক্ত এলাকায় প্রবেশের সাথে সাথেই সন্ত্রাসীরা উক্ত এলাকা ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে য়ায়। এ কারণে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা যায় না। জঙ্গল ছলিমপুরের খাস পাহাড়গুলো নির্বিচারে কেটে বিক্রি করার ফলে সন্ত্রাসীরা একদিকে কোটি কোটি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। পাহাড় ধ্বসে এখানে অনেক লোকের প্রাণহানিও হয়েছে। এই পর্যন্ত জঙ্গল ছলিমপুরে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হয়েছে প্রায় ৪০০ একর। নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধে বর্তমান জেলা প্রশাসন বদ্ধ পরিকর বলে জানান।
গত রোববার জঙ্গল সলিমপুর কেন্দ্রিক সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করে ভূমি মন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। জঙ্গল সলিমপুরে সকল ছিন্নমূলবাসী যেখানেই আছে সেখানেই থাকবে। যারা পাহাড়ের কিনারায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে তাদের সরিয়ে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। নামে-বেনামে কেউ জায়গা দখল-বিক্রি করতে পারবে না। ভূমিদস্যুদের কবল থেকে ছিন্নমূলদের রক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী বলেন আমাদের এখানের পাহাড় ধ্বংসের আজকের এই চিত্র একদিনে হয়নি। শুধু জঙ্গল সলিমপুরেই নয় চট্টগ্রামে একসময় অনেক পাহাড় ছিল যেখানে বর্তমানে তার চিহ্নও নেই। পাহাড় ধ্বংসের পাশাপাশি বন উজার করা হচ্ছে এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে পড়েছে দেশ কিন্তু এখনো দায়িত্বশীলদের মাঝে দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে এসব কার্যক্রম চলে আসলেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? আর এসব দখলবাজদের পেছনে কারা সহযোগীতা করছে, কেন করছে, কোন রহস্যের কারনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা চিহ্নিত করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মালদ্বীপ, জাপান ও আমেরিকার মতো দেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন সেসব দেশেও মাইলকে মাইল পাহাড় রয়েছে তারাও পাহাড়কে কাজে লাগাচ্ছে চাষাবাদ হচ্ছে পর্যটন হচ্ছে কিন্তু সবই পরিবেশ ঠিক রেখে করা হচ্ছে। তাহলে আমাদের দেশে কেন পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন করতে হবে তা আমার বোধগম্য নয়। তবে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে তিনি বলেন পাহাড় কেটে যারা পরিবেশ ধ্বংস করছে তারা অপরাধী আর অপরাধীকে তার শাস্তি পেতে হবে পুরস্কার নয়। তবে প্রকৃতপক্ষেই যারা অসহায় ভূমিহীন তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার তাদের তালিকা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন যাতে প্রভাবশালী কোন মহল মিডলম্যান হিসেবে কোন সুবিধা ভোগ করতে না পারে।
এ ব্যাপারে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাই প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এস এম নাজের হোছাইন বলেন কতিপয় কথিত প্রভাবশালীর কারনে পাহাড় দখল করে শুধু যে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করছে তাই নয় সেখানে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন নিয়ে ধ্বংস করছে মুল্যবান জাতীয় সম্পদও। এর পেছনে জড়িত সরকারি কর্মকর্তা ও কথিত রাজনীতির বলে হয়ে ওঠা প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দেওয়া না হলে পাহাড় দখল ও কাটা রোধ করা যাবেনা। এমন শাস্তি দিতে হবে ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ পাহাড় দখল বা কাটার দৃষ্টতা না দেখায়। আজকে কেউ বিনা শাস্তিতে পার পেয়ে গেলে কালকে আবার অন্যরা এসব অপরাধে জড়াতে চাইবে এভাবেই একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে পাহাড়।
এমএসএম / জামান
থামছেই না ছড়াও, দখল করে ভবন নির্মাণ কাজ
বাঁশখালীতে রিক্সা চালক শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটির বার্ষিক সাধারণ সভা
নোয়াখালীতে যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ সভা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ -২ এ,ধানের শীষের কান্ডারী ইঞ্জি: মাসুদ'কে চায় সাধারণ মানুষ ও বিএনপি'র নেতাকর্মীরা
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জুয়েলের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ
কাউনিয়ায় মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টায় পিতা পুলিশের হাতে
বাঁশখালীতে জমি বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত, গ্রেপ্তার-৩
নন্দীগ্রামে সিএনজি চালককে অপহরণ ও মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ
সুবর্ণচরে আশার আলো সমাজ কল্যাণ সংগঠনের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি
সহকারী এটর্নি জেনারেল হলেন পেকুয়ার কেএম সাইফুল ইসলাম
৭ই নভেম্বর উদযাপন ও খন্দকার নাসিরের মনোনয়ন এর দাবিতে মধুখালী বিএনপির জরুরী সভা
ভোলা-১ আসনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে বিজেপি, নির্বাচনি প্রচার ও র্যালী অনুষ্ঠিত