বরাদ্দের চাল ঠিকমতো পান না মৎস্য শ্রমিকরা

আর্থিক সংকট মোকাবেলায় ৫২.৯ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক উচ্চ সুদে টাকা ঋণ গ্রহন করেন এবং ৩৯.২ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক বিনা সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হন। অর্থাৎ ৯২.১ শতাংশ মৎস্য শ্রমিকই ঋণের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবেলা করতে বাধ্য হয়...
সমুদ্রে মৎস্য আহরণের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার সময়ে মৎস্য শ্রমিকদের জন্য সরকার থেকে বরাদ্দকৃত চালের পুরোটা না পাওয়া, বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকায় তারতম্য ও মৎস্যজীবিদের জেলে কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রেও নানাধরণের অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা গেছে।মাছ ধরার বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার সময় মৎস্য শ্রমিকরা এক দিকে যেমন সরকারের বরাদ্দকৃত চাল সঠিক পরিমানে পান না, তেমনই এই খাদ্য সহায়তা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট না। তিন চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক জানায় যে, তারা বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার সময় আর্থিক সংকটে দিন পার করেছেন। এই সংকট পাথরঘাটার ৬৬ শতাংশ ও কুতুবজোমে ৮১ শতাংশ।
আর্থিক সংকট মোকাবেলায় ৫২.৯ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক উচ্চ সুদে টাকা ঋণ গ্রহন করেন এবং ৩৯.২ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক বিনা সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হন। অর্থাৎ ৯২.১ শতাংশ মৎস্য শ্রমিকই ঋণের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবেলা করতে বাধ্য হয়।সমুদ্র মৎস্যজীবিদের উপর পরিচালিত মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) তার সহযোগী সংগঠন বিল্স ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের ‘মৎস্য শ্রমিকদের জেলে কার্ড প্রাপ্তি’ শীর্ষক একটি যৌথ জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই জরিপটি প্রকাশ করা হয়।
২০১৮ সালের আগষ্ট মাস থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে এই গবেষেণা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। সুইডিশ ইন্টারন্যশনাল ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন এজেন্সী (সিডা) এর আর্থিক সহায়তায়, ড্যানিশ ইন্সটিটিউট ফর হিউম্যান রাইট্স (ডিআইএইচআর) এর তত্বাবধানে এই জরিপটি পরিচালিত হয় দুটি জেলায়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমজেএফের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শেখ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রোগাম ডিরেক্টর বনশ্রী মিত্র নিয়োগী। মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন কক্সবাজার ফিসিং ট্রলার এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান বাহাদুর এবং জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সমাজকল্যাণ সম্পাদক এসএম জাকীর হোসেন।
* উচ্চ সুদে ঋণ নেয় ৫২.৯ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক
* শতকরা ৩২ জন মৎস্য শ্রমিক সহায়তা বঞ্চিত
* ৭৯.৮ শতাংশ পরিবারের উপার্জনকারী একজন
জরিপের তথ্যানুসারে, সরকারী হিসাব অনুযায়ী প্রকল্পভূক্ত বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মৎস্য শ্রমিকের বসবাস। সেই হিসেবে এই জরিপটি পরিচালিতও হয় পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন এবং মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে। উক্ত ইউনিয়নসমূহে মৎস্য শ্রমিক আছে এমন সব পরিবারে একটি কাঠামোগত প্রশ্নমালার সাহায্যে জরিপ পরিচালনা করা হয়।
প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জরিপভূক্ত মৎস্য শ্রমিকদের মধ্যে শতকরা মাত্র ৪০ জন সরকারি বরাদ্দকৃত চাল পেয়েছিল। উভয় এলাকাতেই জেলে কার্ডধারী এক তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ শতকরা ৩২ জন মৎস্য শ্রমিক সহায়তা বঞ্চিত ছিল। অথচ ৯ শতাংশ পরিবার সরকারি সহায়তা লাভ করেছে যাদের কোন জেলে কার্ড নাই।
জরিপভূক্ত মৎস্য শ্রমিকদের মধ্যে ৪২.৬ শতাংশ জেলে কার্ডধারী। এই হারের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে ভিন্নতা দেখা যায়- পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নে ৬৬.৫ শতাংশ এবং কুতুবজোম ইউনিয়নে ৩০.১ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক জেলে কার্ডধারী। তবে, কুতুবজোম ইউনিয়নের কিছু সংখ্যক মৎস্য শ্রমিক জানান যে, তাদের নাম জেলে হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে, কিন্তু তাদেরকে এখনও কোন জেলে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি।
২০২১ সালের মে মাসের ২০ তারিখ থেকে জুলাই মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় জরিপভুক্ত মৎস্য শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র ৪৬ শতাংশ সরকারি বরাদ্দকৃত চাল পেয়েছিল। এসময়ে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের জেলে কার্ডধারী মৎস্য শ্রমিকদের ১৯ শতাংশ কোন চাল বরাদ্দ পায়নি। ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারিভাবে দুই দফায় ৮৬ কেজি (প্রথম দফায় ৫৬ কেজি এবং দ্বিতীয় দফায় ৩০ কেজি) চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে পাওয়ার কথা।
এই দুই নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী-মে মাসে দেশের কিছু কিছু স্থানে জাটকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে। এই সময়ে সেখানে ৭৭ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক সরকারি চাল সহায়তা পাওয়ার কথা বলে। এখানেও ১৯ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক সরকারী বরাদ্দের চাল পায় যাদের কোন জেলে কার্ড নেই।
জরিপে মৎস্য শ্রমিকদের পরিবার প্রধান হিসেবে ৮,৫০৮ জন পুরুষ এবং ১৩৬ জন নারীকে পাওয়া যায়। এসব পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৪২,৮৯৬, পরিবারের সদস্য সংখ্যা গড়ে ৪.৯৬ জন, যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত হাউজহোল্ড ইনকাম এন্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে ২০১৬ মোতাবেক সারা দেশের পরিবারের গড় আকারের (৪.০৬) থেকে বেশি।
পরিবারগুলোর মধ্যে ৭৯.৮ শতাংশ পরিবার একজন মাত্র উপার্জনকারীর আয়ের উপর নির্ভরশীল। মৎস্য শ্রমিক পরিবারগুলোর প্রায় সকলেরই (৯৯.২৭ শতাংশ) প্রধান পেশা মৎস্য আহরণ। সমূদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় একটা বড় অংশের মৎস্য শ্রমিক (৪৫ শতাংশ) দিন মজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করে। তবে ১৫ শতাংশ মৎস্য শ্রমিক জানায় যে, তারা সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় কোন কাজ করে না বা করার মত কোন কাজ পায় না। মৎস্যচাষ বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক উপ-খাতগুলোর একটি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভ্যন্তরীন মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ দেশ। এটা বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং কৃষিখাতের জিডিপিতে প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৫ দশমিক ৭২ শতাংশ) অবদান রাখছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের সামগ্রিক মৎস্য আহরণের ১৬ শতাংশই এসেছে সামুদ্রিক খাত থেকে। বাংলাদেশের ১২ শতাংশের বেশি মানুষ জীবিকার জন্য এই খাতে পূর্ণকালীন ও খন্ডকালীন ভিত্তিতে নিয়োজিত। দেশে আমিষের চাহিদা পূরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্যসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
এমএসএম / এমএসএম

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আইন যেন শুধু খাতা কলমে

প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

গোয়েন্দা প্রধানসহ লুটপাটের অভিযোগে চার কর্মকর্তা ক্লোজড

নির্বাহী প্রকৌশলী জহির রায়হানের বিরুদ্ধে ঠিকাদারদের মানববন্ধনে শাস্তি ও অপসারণ দাবী

সীমাহীন দুর্নীতি,অর্থ আত্মসাত ও সরকারি চাকুরির শৃংখলা ভংগের অভিযোগে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিত দে সাময়িক বরখাস্ত

সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে শ্রমিকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ
