সহিংসতায় বাড়ছে শিশুমৃত্যু

* গতবছর নিহত ৫৯৬ জন
* ধর্ষণে নিহত ৭৭৪ জন
* বলাৎকারের শিকার ৭৮ জন
দেশে শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত আট মাসে ৭৭০ জন শিশুর ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া গতবছর শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে ৫৯৬ জন শিশু নিহত হয়েছে। বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৪২৬ জন শিশু। ২০২০ সালে নিহত শিশুর সংখ্যা ছিল ৫৮৯ জন। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশি কেন্দ্র (আসক) এর গবেষণায় এসব তথ্যে উঠে এসেছে।
আইন ও সালিশি কেন্দ্রের তথ্য মতে, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৭৭০ জন শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৩৯২ জন শিশু যৌন হামলার শিকার হয়েছে। একই সময়ে ৩৪৭ জন শিশুকে হত্যা ও ৯৫ জন শিশুকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। ২০২১ সালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পরে হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয় মোট ৫৯৬ শিশু। এছাড়া ২০২১ সালে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ১৪২৬ শিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ৭৭৪ শিশু, ধর্ষণ চেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয় ১৮৫ জন শিশু এবং বলাৎকারের শিকার হয়েছে ৭৮ জন ছেলে শিশু। ২০২০ সালে নিহত শিশুর সংখ্যা ছিল ৫৮৯।
এদিকে, এ বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে অন্তত ৬৪১ জন নারী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। একই সময়ে ধর্ষণের পরে ৭ জনকে খুন করার ঘটনাও ঘটেছে। ২০২১ সালে সারা দেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১ হাজার ৩২১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৯ জন। ২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন মোট ১ হাজার ৬২৭ জন নারী। ২০২১ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্ত করণের শিকার হয়েছেন ১২৮ নারী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন ৭৭ জন পুরুষ। ২০২১ সালে উত্ত্যক্ত করার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী। এছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী ও ৫ পুরুষসহ খুন হয়েছেন মোট ৮ জন। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৪০ জন নারী। এদের মধ্যে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১০ জন। নির্যাতনের কারণে মারা যান ৩৭২ জন এবং আত্মহত্যা করেন ১৪২ জন। ২০২০ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ৫৫৪ জন নারী। ২০২১ সালে সালিশের মাধ্যমে ১২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে সালিশে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ৩ জন এবং নির্যাতন পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা করেন ২ জন। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮ জন। ২০২১ সালে ৪৫ জন নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পরবর্তী সময়ে মৃত্যু হয় তিন জন নারীর। অন্যদিকে অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন ২৩ নারী।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক পরিচালিত ২০১১ সালের জরিপ মতে, শতকরা ৮৭ ভাগ নারী স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হন।জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ বিবাহিত নারীরা জীবনে কোনো না কোনো সময়ে স্বামী কিংবা তার পরিবার বা উভয়ের দ্বারা নির্যাতিত হন। এ ছাড়াও বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০০ জনে ৭ জন নারী কোনো না কোনোভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হন।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ৭ শতাংশ নারী সরাসরি ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। উন্নত-অনুন্নত সব দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র আরও অমানবিক।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে ১১ হাজার ৯৫৯টি কল আসে। এর মধ্যে ধর্ষণের কলের সংখ্যা ৬১৯, ধর্ষণচেষ্টা কলের সংখ্যা ৩১৪, যৌন নির্যাতন কলের সংখ্যা ২৬৮, ধর্ষণের হুমকি কলের সংখ্যা ৩১ এবং উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানির কলের সংখ্যা ১ হাজার ৯টি অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগে ২০২১ সালে ১২ হাজার ১৬৯, ২০২০ সালে ৬ হাজার ৩৩১, ২০১৯ সালে ৩ হাজার ১১৫ এবং ২০১৮ সালে ২ হাজার ২৯২টি কল আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা অনেক বছর ধরেই চলমান রয়েছে। এই অপরাধ কমাতে হলে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি ছেলে-মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। আমরা দেখি অনেক সময় পোশাক নিয়ে, যোগ্যতা নিয়ে এবং একজন নারীর শারীরিক ক্ষমতা নিয়ে অনেক সময় ছোট করে দেখা হয়। এজন্য নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যেটা হয়, ছেলেদের ক্ষেত্রে এক ধরনের খেলনা দেওয়া হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে আরেক ধরনের খেলনা দেওয়া হয়। পরিবারের একটা ভূমিকা আছে, সেটি হচ্ছে তাদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যদি নারী-পুরুষের সমতা নিয়ে প্রচার প্রচারণা করে তাহলে নারী ও শিশুর সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।’
এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান বেগম চেমন আরা তৈয়ব বলেন, ‘কোভিডকালিন সময়ে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বেশি বেড়েছিল। আমাদের মহিলা সংস্থার দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমাদের ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটগুলোতে আমাদের কমিটি রয়েছে। কমিটির মাধ্যমে আমাদের জাতীয় মহিলা সংস্থার কর্মীরা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা-সেমিনার ও প্রচার প্রকাশনার মাধ্যমে সামাজিক জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে চলছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরার নির্দেশনায় আমরা খুব দ্রতই নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনতে সক্ষম হব। বিগত দিনে ঘটে যাওয়া নারীর প্রতি সহিংসতার মূল কারণ আর্থিক অসচ্ছলতা। কোভিডকালিন সময়ে নারীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এতে করে আর্থিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এতে পারিবারিক সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে। দেশের মানুষের শান্তি শৃঙ্খলা যেন ফিরে আসে এবং দেশের প্রতিটি মানুষ যেন তাদের পরিবার নিয়ে নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে সে লক্ষ্যে সরকারি প্রতিটি দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিরা কাজ করে যাচ্ছেন।’
এমএসএম / এমএসএম

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আইন যেন শুধু খাতা কলমে

প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

গোয়েন্দা প্রধানসহ লুটপাটের অভিযোগে চার কর্মকর্তা ক্লোজড

নির্বাহী প্রকৌশলী জহির রায়হানের বিরুদ্ধে ঠিকাদারদের মানববন্ধনে শাস্তি ও অপসারণ দাবী

সীমাহীন দুর্নীতি,অর্থ আত্মসাত ও সরকারি চাকুরির শৃংখলা ভংগের অভিযোগে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিত দে সাময়িক বরখাস্ত

সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে শ্রমিকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ
