ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

বেড়িবাঁধ অরক্ষিত, সর্বস্ব হারাচ্ছে উপকূলের চাষিরা


বাঁশখালী প্রতিনিধি photo বাঁশখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১-১১-২০২২ দুপুর ৩:৩
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকূলে বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকার ফলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলের কৃষি পরিবারের ‘সোনার ফসল’ নিমিষেই জোয়ারের লোনাপানিতে ঝলছে গেছে। এতে কোটি কোটি টাকার লোকসান হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি পরিবারগুলোর। এতে টমেটো চাষ, ধানি জমি, চিংড়ি ঘের, পুকুর ও মৎস্য প্রজেক্ট ধ্বংস হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন তারা।
 
বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের গণ্ডামারা, বড়ঘোনা, সরল, চাম্বল, শীলকূপ, শেখেরখীল, ছনুয়া, পুঁইছড়ি, রত্নপুর, কদমরসুল, কাথরিয়া, বাহারছড়া, খানখানাবাদ, প্রেমাশিয়া, পুকুরিয়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকায় টানা তিন দিন ঘুরে দেখা গেছে, শত শত হেক্টর ধান লোনা পানিতে ঝলছে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও আগাম টমেটোসহ শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ ‘সোনার ফসল’ বেড়িবাঁধের ২৫-৩০টি পয়েন্ট দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক, সংস্থা থেকে ঋণ ও স্থানীয় ধার-দেনায় জর্জরিত অসহায় কৃষি পরিবারগুলো।
 
পরিদর্শনকালে গণ্ডামারা ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের নুরুল কাদের, আজম উদ্দিন, নুর মোহাম্মদ, আব্দুর রহিম, আব্দুল গফুর, রহিম, মোজাম্মেল, জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ হোসেন, সেকান্দর, রশিদ আহমদ প্রঃ রশু, মাওলানা ছিদ্দিক, মো. ইলিয়াস, মুবিন ও ২নং ওয়ার্ডের মো. আলমগীর, মো. সৈয়দ, ১নং ওয়ার্ডের বজল আহমদ, মো. হাসান, আবু তাহের এবং সরল ইউপির ২নং ওয়ার্ডের মো. সেলিম উল্লাহ, জাকারিয়া, নাছির উদ্দিন মানিক, গিয়াস উদ্দিন, নুরুল ইসলাম মিয়া, মো. হোসাইন, আব্দুর রশিদ, ফোরকান, আবুল হাশেম, নুরুল আমিন, মো. হাসান, মোর্শেদ, নুরুচ্ছফা, আলমগীর, নুরুল আবছার, আব্দুর রশিদ, নুরুল ইসলাম, মামুন, মোস্তাকিম, মহিউদ্দিন, নেজাম উদ্দিন, আজগর হোসেন, জাকের, আসহাব মিয়া, নেজাম, মনসুর, আব্দুল কাদের, মো. শরীফ, আখতার হোসেন, আব্দুল হালিম, বেলাল, হাসমত উল্লাহ, নুরুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম, মো. হোসেন, হাসান মুরাদ, আব্দুল হাসান ও মো.ছাবেরসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কান্না থামানো যাচ্ছে না।
 
তারা অধিক লাভের আশায় বিগত কযেক বছর ধরে টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে থাকেন। আর সবজি চাষ উপযোগী জমিগুলো কানি প্রতি বাৎসরিক লাগিয়ত হিসেবে জমি মালিকদের কাছ থেকে নিয়ে  থাকেন কৃষকরা। জমিগুলো কানিপ্রতি বাৎসরিক লাগিয়ত বহন করতে হয় ২০ হাজার টাকা। এছাড়াও ধান চাষের চেয়ে তুলনামূলকভাবে টমেটো চাষে খরচ হয় দ্বিগুণের অধিক। কিন্তু বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকায় প্রতি বছরই ক্ষতির বোঝাটাই জোটে তাদের কপালে।
 
কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি অফিসের কৃষি কার্ডগুলো মুষ্টিমেয় কিছু প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি।কৃষি অফিসের লোকজনও শুধু স্থানীয় স্যার ও কীটনাশক ডিলারদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে বসে থাকে।মাঠ পর্যায়ে কোন মনিটরিং না করে কৃষি উন্নয়নের কথাই বলে যায় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কৃষক কারা তা মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং করে যাচাই করা দরকার।আর সরকারি কৃষি সুবিধাগুলো প্রকৃত কৃষকদের অধিকার।কিন্তু কৃষি অফিসে থাকা লোকজন কৃষক পরিবার গুলোর কোনো খবরা-খবর রাখেনা বলে অভিযোগ কৃষকদের।
 
সরকার দেশের কৃষি খাতকে বাস্তবমূখি ও আধুনিক করতে নানান পদক্ষেপ নিলেও বাঁশখালী উপকূলীয় অঞ্চলের প্রকৃত কৃষি পরিবার গুলোর বেশিরভাগই সরকারি কৃষি সুবিধা থেকর বঞ্চিত।এমন তথ্য উঠে এসেছে উপকূলের কৃষি পরিবার থেকে।বিশেষ করে জলকদর খালের অধিকাংশ বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকায় আমাবস্যা -পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়ত তলিয়ে যায়।এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে লোনাপানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও ক্ষেইত্যাল্যা পরিবার গুলো সহ স্থানীয় জনসাধারণ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়লেও এখনো পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোর কোনো খোঁজ খবর নেননি কেউ।তাছাড়া সরকারি কৃষি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত উপকূলের কৃষি পরিবার গুলো।
 
গণ্ডামারা ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের নুরুল কাদের, রশিদ আহমদ, আব্দুর রহিম বলেন তাঁরা স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ধার ও স্বর্ণের দোকানি থেকে স্বর্ণ বন্ধক হিসেবে টাকা নিয়ে আগাম টমেটো ও শীতকালীন সবজি চাষ করেছি, কিন্তু টমেটো বিক্রির আগেই লোনাপানি ঢুকে সব ক্ষেতখোলা ধ্বংস হয়ে তাদের অন্তত ১৪/১৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
 
একই ভাবে সরলের ২নং ওয়ার্ডের সেলিম উল্লাহ ব্যুরো ব্যাংক থেকে ৩ লাখ টাকা, নুরুচ্ছফা কৃষি ব্যাংক থেকে ১ লাখ ও বুরো বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ সহ তিন লাখ, আসহাব মিয়া কৃষি ব্যাংক থেকে ১ লাখ, আব্দুল কাদের বুরো বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ, আব্দুল হাকিম ব্র্যাক থেকে ১ লাখ, মো. হোসেন বুরো থেকে ১ লাখ, আবুল হাসান ব্যাুরো থেকে ১ লাখ, মো. ছাবের ব্র্যাক থেকে ১লাখ সহ এই ভাবে লাখ লাখ টাকা সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তি হিসেবে ঋণ গ্রহণ করে ধান ও টমেটো সহ আগাম সবজি চাষ করেন কৃষি পরিবার গুলো।উপকূলের বেড়িবাঁধ সিংহভাগ অরক্ষিত থাকার ফলে একদিক দিয়ে কৃষি পরিবারের"সোনার ফসল" সিত্রাং জ্বলোচ্ছাসে লোনাপানিতে নিমিষেই জ্বলছে গেছে আপরদিকে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংক ও এনজিও সংস্থা গুলো ওইসব কিস্তির সাপ্তাহিক ও মাস শেষ না হতেই দরজার কড়া নাড়া দেয় কর্মকর্তারা।এই যেন তাঁদের করুণ অসহায়ত্ব।
 
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলা উপকূলীয় এলাকার পুইঁছড়ি, ছনুয়া, শেখেরখীল, চাম্বল, গণ্ডামারা, শীলকুপ, রত্নপুর, বাহারছড়া, কাথরিয়া, সাধনপুর, খানখানাবাদ ও পুকুরিয়া এলাকায় এ বছর ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ধান ও শীতকালীন সবজি চাষ করেছে কৃষকরা। উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৮’শ হেক্টর প্লাবিত হয়েছে।
 
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু ছালেক জানান, বাঁশখালী উপকূলে ৮'শ হেক্টর ফসলি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়ে গেছে প্রায় ৩'শ হেক্টর।বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে যেহেতু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জোয়ারের পানি ঢুকেছে সেহেতু ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।ক্ষতিগ্রস্তদের সহয়তার জন্য অধিদপ্তর বরাবর রিপোর্ট লেখা হয়েছে।ব্রি থেকে লবন সহিষ্ণু জাতের ধানের বীজ চাওয়া হয়েছে যেন বোরো মৌসুমে আবাদ করতে পারে।তবে মঙ্গলবার ব্রি'র বিজ্ঞানীদের একটা টিম কে ভিজিট করেছি, মাটি ও পানি পরীক্ষা করে তাতে লবণের মাত্রা অনেক বেশি পাওয়া গেছে।ভারী বৃষ্টি কিংবা মিঠা পানির সেচ দিতে না পারলে বোরো আবাদও বিঘ্নিত হতে পারে।আর সেই জন্যে টেকসই বাঁধ নির্মাণের কোন বিকল্প নেই বলে জানান আবু ছালেক।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ডর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন, বাঁশখালীর জলকদর খালের অরক্ষিত বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ প্রক্রিয়াধীন।এ  বিষয়ে আমাদের বড় একটি প্রকল্প নিশ্চিত আছে। অনুমোদন পেলেই জলকদর খালের দুপাড়ে সংস্কারকাজ করা হবে।
 
কবে হতে পারে সে কাজ- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমোদন ছাড়া টেকসইমূলক কাজ করা তো সম্ভব নয়। বড় ধরনের কাজ এই মুহূর্তে করা সম্ভব নয়। বরাদ্দ পেলেই জরুরি কাজগুলো দ্রুত সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।

এমএসএম / জামান

মাতারবাড়িতে নারীদের বিকল্প আয়ের পথ খুলে দিল ইপসা

মানিকগঞ্জে যুব মহিলা লীগ নেত্রী গ্রেফতার

লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এস.এস.সি ২০২৫ জিপিএ-৫ কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

লন্ডনে বৃহত্তর কুমিল্লা জাতীয়তাবাদী পরিবারের মতবিনিময় সভা

তানোরের কৃষ্ণপুর স্কুল শিক্ষা বিস্তারে ভুমিকা রাখছে

শালিখায় পাটের চেয়ে কদর বাড়ছে পাটকাঠির

কোটালীপাড়ায় গরুচোর চক্রের দুই সদস্য গেপ্তার

লোহাগড়া বাজারে সরকারি সড়ক গিলে খাচ্ছে তিনতলা ভবন

জয়ের ঘ্রাণ পাচ্ছেন শেখ সাদী ?

যমুনা ব্যাংকের ঢাকা উত্তর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ম্যানেজারস’ মিটিং অনুষ্ঠিত

মিরসরাইয়ে মহাসড়ক সংলগ্ন অবৈধ বাউন্ডারি ওয়াল গুঁড়িয়ে দিল উপজেলা প্রশাসন

চিলমারীতে যৌথ অভিযানে, অনলাইন জুয়ার সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক

পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত হয়েও ‘জুলাই যোদ্ধা’ গেজেটে নাম পেলেন বাঘার জাহিদ