সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ
একযুগেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ

এক বছর নয়, দুই বছর নয়, একে একে এক যুগ পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণকাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে বললেও তা মানা হয়নি। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলায়। গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজের এ প্রকল্পটি তিন বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও একযুগেও তা শেষ হয়নি।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মঙ্গলবার শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন’ প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে। তবে, এবার চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে দশ শর্তজুড়ে দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব সূত্রে জানা যায়, সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ করায় ৬বার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি। ফের সপ্তমবারের মতো বাড়ানো হচ্ছে মেয়াদ। সেইসঙ্গে বাড়ছে ব্যয়ও। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৪৬৩ কোটি ৬২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫০৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এরপর ১৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৭০৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়াতে বাড়াতে তিন বছরের প্রকল্পে এখন ১২ বছর।
জানা গেছে, এরই মধ্যে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি মোট ৬৩৩ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের ৮৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রকল্পের কাজের বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৬ শতাংশ।
ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আইএমইডি বলছে, প্রকল্পটি মার্চ ২০১২ হতে জুন ২০২২ মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রকল্পটির আসন্ন কাজ সম্পন্ন করতে এবং দেশে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে গোপালগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর চিকিৎসাসেবা দেওয়া নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে প্রকল্পটির মেয়াদকাল এক বছর বাড়িয়ে মার্চ ২০২২ হতে জুন ২০২৩ নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে, ক্ষেত্রে দশ শর্তজুড়ে দিয়েছে আইএমইডি।
শর্তগুলো হচ্ছে-নার্সিং ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম দাখিল করা কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। অর্ধসম্পন্ন নার্সিং ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম পরে ঠিকাদার মাধ্যমে সম্পন্নকরণে কোনোরূপ সমন্বয়ের ঘাটতি না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। হাসপাতাল ভবন এবং মেডিকেল কলেজে আগত সেবাগ্রহীতা এবং অন্যান্যদের জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে। প্রয়োজনে আন্ডারগ্রাউন্ডে পার্কিংয়ের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যায় কি-না সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।
হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী স্থানগুলোতে রোগীদের সুবিধার্থে ছায়া দেয় এমন বৃক্ষের চারা রোপণ করতে হবে। দাখিল করা কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে হবে। নার্সিং ইনস্টিটিউটের পার্শ্ববর্তী রাস্তা এবং মূল গেটের দুপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। হাসপাতাল ও অন্যান্য ভবন দ্রুত প্রকল্প কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতে হবে। জরুরিভিত্তিতে প্রকল্পের অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ বিভাগকে অবহিত করতে হবে। বর্তমান উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বরাদ্দ দিতে হবে। প্রকল্প সমাপ্তির তিন মাসের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্তি মূল্যায়ন প্রতিবেদন এ বিভাগে দাখিল করতে হবে এবং ওই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত ব্যবস্থা প্রতিবেদন প্রাপ্তির ২০ কর্মদিবসের মধ্যে বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ বিভাগকে জানাতে হবে।
প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের (সদস্য) সচিব মোসামৎ নাসিমা বেগম বলেন, এ প্রকল্পে ১৯টি প্যাকেজের আওতায় যন্ত্রপাতি মালামাল সরবরাহ ও স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণকাজের ৩৮টি প্যাকেজের মধ্যে ৩৭টি প্যাকেজের কাজ এরই মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। একটি প্যাকেজের (নার্সিং কলেজ নির্মাণ) কাজের কার্যাদেশ বাতিল ও নতুন কার্যাদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসময় ব্যয় হয়। সার্বিক বিবেচনায় ওই অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ এক বছর মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। তবে, শর্ত হচ্ছে, বর্ধিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্য সময়াবদ্ধ ও কার্যকরী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। প্রকল্প ব্যয় সর্বশেষ অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে সংশোধিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে হবে এবং এ বিষয়ে আইএমইডির দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় লোকবল এবং দক্ষতার অভাব এমডিজি ও অন্যান্য লক্ষ্যগুলো অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত। দেশের চিকিৎসক-রোগী, চিকিৎসক-নার্স, নার্স-রোগী অনুপাতগুলো এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। একইভাবে ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ জেলা মেডিকেল শিক্ষা, আধুনিক চিকিৎসা এবং কর্মসংস্থান সুযোগসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তুলনামূলক পিছিয়ে। এজন্য স্থানীয় জনসাধারণের প্রত্যাশাপূরণ করে প্রতিবছর ১০০ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগসহ গোপালগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিবছর ১২৫ জন নার্সিং শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগসহ একটি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মূলপ্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সেইসঙ্গে বাস্তবায়নে ব্যয় নির্ধারিত হয় ৪৬৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায়। পরে গণপূর্ত বিভাগের (পিডব্লিউডি) রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে রেট সিডিউল-২০১৪ অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ৫০৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের মার্চ হতে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের প্রথম সংশোধন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়।
সংশোধিত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ মন্ত্রণালয় প্রথমবার এক বছর ৪ মাস বৃদ্ধি করে ২০১২ সালের মার্চ হতে ২০১৭ সালের জুনে নির্ধারণ করা হয়। এরপর সীমানা প্রাচীর নির্মাণে টেন্ডারগত জটিলতা ও ছাত্রী নিবাসের ফিনিশিং কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় অবশিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া বাস্তবায়ন মেয়াদ পরিকল্পনা কমিশন দ্বিতীয়বার ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়।
মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- করোনা মহামারির কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউনের জন্য প্রায় তিন মাস কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে লকডাউন শিথিল হলেও নির্মাণ সামগ্রীর উৎপাদন বন্ধ ও বৈদেশিক আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় পাথর আমদানি সম্ভব না হওয়ায় আরও কিছু সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে।
নার্সিং কলেজ নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ২০২০ সালের ১৩ জুন মারা যাওয়ায় ঠিকাদারের উত্তরাধিকারীদের দ্বন্দ্বের কারণে এ প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে কাজের কার্যাদেশ গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বাতিল করা হয়। পরে সম্পাদিত কাজের পরিমাপ গ্রহণ করে অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়নের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এ অবস্থায় প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মেয়াদ আরও এক বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সাদিক পলাশ / সাদিক পলাশ

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আইন যেন শুধু খাতা কলমে

প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

গোয়েন্দা প্রধানসহ লুটপাটের অভিযোগে চার কর্মকর্তা ক্লোজড

নির্বাহী প্রকৌশলী জহির রায়হানের বিরুদ্ধে ঠিকাদারদের মানববন্ধনে শাস্তি ও অপসারণ দাবী

সীমাহীন দুর্নীতি,অর্থ আত্মসাত ও সরকারি চাকুরির শৃংখলা ভংগের অভিযোগে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিত দে সাময়িক বরখাস্ত

সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে শ্রমিকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ
